মিয়ানমার থেকে মর্টারশেল এসে পড়ল তুমব্রু সীমান্তে, পরিদর্শনে ডিসি-এসপি

মিয়ানমারের অভ্যন্তরে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি ও সেনাবাহিনীর মধ্যে সপ্তাহ ধরে চলছে দফায় দফায় সংঘর্ষ। সীমান্তের ওপারের বিস্ফোরণের শব্দে প্রকম্পিত হচ্ছে এপারের অনেক গ্রাম। এরই মধ্যে আজ বুধবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে একটি মর্টারশেল ও রাতে বেশ কিছু গুলি বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম কুলাল পাড়া এলাকায় এসে পড়েছে। কোনো হতাহতের খবর পাওয়া না গেলেও রোহিঙ্গাসহ সীমান্তের বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সীমান্তের চলমান অস্থিরতা নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ায় বুধবার তুমব্রু, কোনারপাড়া, ক্যাম্পপাড়া, তুমব্রুবাজারসহ কয়েকটি পাড়া পরিদর্শন করেছেন বান্দরবানের জেলা প্রশাসক (ডিসি) শাহ মোজাহিদ উদ্দিন ও পুলিশ সুপার (এসপি) সৈকত শাহীন।
তাদের সঙ্গে ছিলেন সহকারী পুলিশ সুপার মো. আমজাদ হোসেন, সহকারী ম্যাজিস্ট্রেট রাজিব কুমার বিশ্বাস, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাকারিয়া, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ত্রিরতন চাকমা, ঘুমধুম তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ পরিদর্শক মাহাফুজুর রহমান প্রমুখ। বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত মিয়ানমার সীমান্তবর্তী এলাকাগুলো পরিদর্শন করেন তারা।
জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন বলেন, সীমান্তের ওপারে গতকাল ১৮টি মর্টারশেল বিস্ফোরণের আওয়াজ শুনেছেন স্থানীয়রা। এ কারণে অনেকে আতঙ্কে আছেন। তবে ভয়ের কোনো কারণ নেই। সীমান্তে ৩৪ বিজিবির সদস্যরা সর্বোচ্চ সতর্ক রয়েছেন। এ ছাড়া পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসন সার্বক্ষণিক খবর রাখছে।
ঘুমধুম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, আমরা আতঙ্কে আছি, কখন কী হয় জানি না। বিনা প্রয়োজনে স্থানীয়দের ঘরের বাইরে না যাওয়ার জন্য সতর্ক করা হচ্ছে।
বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ মুজাহিদ উদ্দিন বলেন, মিয়ানমারের ভেতরে কী হচ্ছে, তা আমরা বলতে পারছি না। তবে দেশের নিরাপত্তাসহ যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় সচেষ্ট রয়েছে প্রশাসন। সীমান্তে বিজিবির টহলও জোরদার করা হয়েছে। তাই আতংকিত না হওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি।
স্থানীয়দের দেওয়া তথ্য মতে, আরকান রাজ্যের দখল নিয়ে মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি ও জান্তা সরকারের সেনাবাহিনীর মধ্যে গোলাগুলি চলছে। ইতোমধ্যে আরকান রাজ্যের অনেকাংশ দখল করে নেওয়ার দাবি করেছে আরকান আর্মি। সীমান্তের ওপারে চলা গোলাগুলি ও মর্টারশেলের বিস্ফোরণের শব্দ ভেসে আসছে বাংলাদেশে। আরকান আর্মি ও সেনাবাহিনীর মধ্যে সারাদিন সংঘর্ষ চললেও এপারে গোলাগুলির শব্দ বেশি আসছে রাতের বেলা। বিশেষ করে আরকান রাজ্যের পশ্চিম, পূর্ব এলাকায় এ সংঘর্ষ চলছে। স্থানীয়রা বলছেন, মিয়ানমারে গোলাগুলির ঘটনা নতুন কিছু নয়। তবে সম্প্রতি সংঘাতের ঘটনায় মিয়ানমারের ছোঁড়া গুলি ও মর্টার শেল দেশের ভেতরে এসে পড়ায় তারা আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন। বুধবার ভোরে বেশ কিছু গুলি ও মর্টার শেল এসে পড়েছে ঘুমধুমের তুমব্রু সীমান্তে।
তুমব্রু সীমান্তের স্থায়ী বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, মিয়ানমারে প্রতিনিয়ত গোলাগুলির শব্দ শুনতে পাই আমরা। এটি নতুন কিছুই নয়। তবে ইউনিয়নের ২নম্বর ওয়ার্ডের কুলালপাড়া এলাকায় গুলি ও মর্টার শেল এসে পড়ায় লোকজন আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ছে।
এদিকে টেকনাফের উলুবনিয়ায় গুলি ও মর্টার শেল এসে পড়ার পর থেকে ভয়ে দিন কাটাচ্ছেন স্থানীয়রা। নাফ নদীতে মাছ ধরা বা চিংড়ি ঘেরে মাছের পরিচর্যা করতে ভয় পাচ্ছেন তারা। পাশাপাশি জানিয়েছেন নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কার কথা। আজও মিয়ানমারের পশ্চিমাংশের কোয়াংচিবং এলাকা, নাইচদং, লারগাপাড়া, মেদিপাড়া, জুম্মাকাটা, জুট্টখালী, গোদলাবাজার, কুমিরখালী, ঘুমরিপাড়া এলাকা থেকে গোলাগুলির শব্দ ভেসে আসছে।
টেকনাফ হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের ১নম্বর ওয়ার্ড ইউপি সদস্য জালাল আহম্মদ বলেন, ২৫-২৭ জানুয়ারি পর্যন্ত পরিস্থিতি খুবই উদ্বেগজনক ছিল। উলুবনিয়া এলাকায় এক ব্যক্তির বাড়িতে গুলি এসে পড়ার পর থেকে আতংকিত ছড়িয়ে পড়ে স্থানীয়দের মাঝে। ইতিমধ্যে অনেক বাসিন্দা বিশেষ করে শিশু, বৃদ্ধ ও নারীরা এলাকা ছেড়েছে। এখন এলাকার বাসিন্দারা অনেকটা নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন। বিনা প্রয়োজনে ঘরের বাইরেও যাচ্ছেন না। চিংড়ি চাষীরা ভয়ে ঘেরে যেতে পারছেন না।
পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন বলেন, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে অস্থিরতা তৈরি হলে সেখানকার বাসিন্দারা আবারও বাংলাদেশের দিকে চলে আসতে পারে। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে হবে।
(ঢাকাটাইমস/৩১জানুয়ারি/এআর)

মন্তব্য করুন