মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ভাইভা বোর্ড!

শ্যামল আব্দুল হালিম
 | প্রকাশিত : ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:৫৪

কোন স্কুল, কলেজের ভাইভা বোর্ড না এটি। এ ভাইভা বোর্ড ছিলো ভয়ংকর নির্যাতনের দলিল। যেখানে একবার গেলে বেশীরভাগ মুক্তিযোদ্ধার গন্তব্য হতো শহীদ হয়ে যাওয়া। যারা ফিরে আসতে পেরেছেন তাঁরাই কেবল জানেন এই ভাইভা বোর্ড কতোটা ভয়ংকর এবং পৈশাচিক!

পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও রাজাকারেরা মুক্তিযোদ্ধাদের ধরে এনে ভাইভা বোর্ড নামে এমন অজস্র কুঠুরির মধ্যে তুলে এনে মুক্তিযোদ্ধাদের গোপন তথ্য জানতে জিজ্ঞাসাবাদের নামে চালাতো ভয়ংকর, পৈশাচিক, নির্মম নির্যাতন। প্রতিটি নির্যাতনের কৌশলের জন্য ছিলো ভিন্ন ভিন্ন যন্ত্রপাতির ব্যবহার। টর্চার করার সময় এগুলোর এক একটি নির্যাতনের কৌশল হিসেবে এক এক কাজে লাগতো।

ছবির বড় হাতুড়ি ব্যবহার হতো মুক্তিযোদ্ধাদের হাত পায়ের গিরার হাড় ভাঙ্গার জন্য, চিমটা ব্যবহার হতো নখ টেনে উঠিয়ে নির্যাতনের জন্য, কাটিং প্লাস ব্যবহার হতো আঙ্গুল কাটার জন্য, কাঁচি ব্যবহার হতো মানব দেহের পাতলা চামড়া কাটার জন্য, প্লাস ব্যবহার হতো দাঁত উঠানোর জন্য।

স্ক্রু ড্রাইভার ও বড় আংটা ওয়ালা সূচটি ব্যবহার হতো‌ চোখ উঠানো, নখের ভিতরে দিয়ে নখ ভেঙে ফেলা আর সংবেদনশীল অঙ্গে ফোটানোর জন্য।

পাকিস্তানী সেনাবাহিনী ও রাজাকারদের টর্চার সেল ছিলো এমনই ভয়ংকর। এতো নিষ্ঠুর নির্যাতনের পর ও মুখ খুলতেন না মুক্তিযোদ্ধারা। প্রয়োজনে নিজের উপর দিয়ে হোক শত নির্যাতন, অত্যাচার করতে করতে পিষে ফেলা হোক তবুও মুখ খোলা যাবেনা; প্রকাশ করা যাবেনা মুক্তিযোদ্ধাদের গোপন একটি তথ্যও। মুক্তিযোদ্ধারা অস্বীকার করতে নির্যাতনের সীমা ছাড়াতো কয়েকগুণ।

যারা সেই ভাইভা বোর্ড থেকে ভাগ্যক্রমে ফিরে এসেছেন কেবল তাঁরাই জানেন ভাইভা বোর্ড নামের একটি কক্ষ কতোটা তান্ডবলীলা চালাতে পারে মনুষ্য শরীরের উপর।

উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালে আমার একমাত্র চাচা শহীদ আব্দুল আউয়ালকে নভেম্বর মাসে পাকিস্তানি হানাদারের বিরুদ্ধে এম্বুশ করার সময় অস্ত্র হাতে ধরা হয়। তারপর তাকে নাকি নির্মমভাবে অত্যাচার করে শহীদ করা হয়।

উপরের ছবিটি খুলনার গণহত্যা নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘরে তোলা।

ছবি কৃতজ্ঞতা: সংগ্রামের নোটবুক।

লেখক: অতিরিক্ত ডিআইজি

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফেসবুক কর্নার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :