উপজেলা নির্বাচন নিয়ে কৌশলী বিএনপি

জাহিদ বিপ্লব, ঢাকা টাইমস
| আপডেট : ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৮:৪৩ | প্রকাশিত : ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৮:৩২

জাতীয় সংসদ নির্বাচন বয়কট করলেও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার বিষয়ে বিএনপির অবস্থান এখনও পুরোপুরি পরিষ্কার নয়। তবে, উপজেলা নির্বাচন বয়কট করলেও কিছুটা কৌশলী হবে দলটি। সেক্ষেত্রে দল নির্বাচন বয়কট করলেও নেতাকর্মী নির্বাচনে অংশ নিলে এর দায় নেবে না বিএনপি। আর নির্বাচনে অংশ নেওয়া নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে পূর্বের ন্যায় সাংগঠনিক কোনো ব্যবস্থা নেবে না দলটি। এমনটিই জানিয়েছেন বিএনপির একাধিক সিনিয়র নেতা।

ইতোমধ্যে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনসহ স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার নির্বাচনগুলো আর দলীয়ভাবে হবে না বলে সরকার থেকে জানানো হয়েছে। যে কোনো প্রার্থীর পক্ষে দলের নেতারা ভোট করতে পারবেন।

২০১৪ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে দলীয় প্রতীকে স্থানীয় নির্বাচন শুরু হয়। দলটি ২০২১ সালের মার্চের পর থেকে সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেনি। বরং দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় তৃণমূলের অনেক নেতাকে দল থেকে বহিষ্কার করে বিএনপি।

এর আগেও সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন বা ২০১৯ সালের উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বর্জন করার ঘোষণা দিয়েছিল বিএনপি। তা সত্ত্বেও দলটির তৃণমূলের অনেক নেতা সেসব নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন, তাদের মধ্যে দেড় শতাধিক প্রার্থী বিজয়ীও হয়েছেন।

এদিকে, দলীয় প্রতীক না থাকায় নির্বাচনে যাওয়ার পক্ষে আগ্রহী তৃণমূলের অনেক নেতা। তাই দলের কেউ প্রার্থী হলে তাকে নিরুৎসাহ করা হবে না। দলটির স্থায়ী কমিটির একাধিক নেতা জানিয়েছেন, উপজেলা নির্বাচন নিয়ে দলীয় ফোরামে এখনো আলোচনা হয়নি।

বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নিতে পথ খুঁজছে বিএনপি। এই নির্বাচনে অংশ নেওয়া বা না নেওয়ার প্রশ্নে রাজনৈতিক সাংগঠনিক লাভ-ক্ষতি হিসাব কষছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতারা।

কর্মীদের হতাশা দূর করার জন্য এবং দলকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করতে উপজেলা নির্বাচনে যাওয়ার পক্ষে কেউ কেউ অবস্থান নিয়েছেন। আর সেক্ষেত্রে উপজেলা নির্বাচন প্রশ্নে নমনীয়তা দেখাতে পারে বিএনপি। অর্থাৎ দলীয়ভাবে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না দিলেও নেতাকর্মীরা নির্বাচনে অংশ নিলে কারও বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না।

বিএনপির তৃণমূলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এই নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে। তাদের কেউ কেউ যেমন সংসদ নির্বাচনের মতো এই নির্বাচনও বর্জন করার পক্ষে, আবার অনেকে মনে করেন, স্থানীয় নির্বাচনে অংশ নিয়ে তাদের জনপ্রিয়তা তুলে ধরার সুযোগ রয়েছে। তারা বলছেন, জাতীয় নির্বাচন আর স্থানীয় নির্বাচনের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। তৃণমূলের অনেক নেতার এলাকায় ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তা রয়েছে। ছাড়া আওয়ামী লীগের একাধিক স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকবে। এতে বিএনপির অনেক নেতার বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

অন্যদিকে, জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জনের পরপরই উপজেলা পরিষদের নির্বাচন বিএনপিকে অনেকটা বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলেছে। ঘোষণা দিয়ে উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিলে বিরোধীদের কাছ থেকে সরকারেরবৈধতাপাওয়ার বিষয়টি সামনে আসবে। মনে হতে পারে, বিএনপি সরকারকে মেনে নিয়েছে। এর সুযোগ নেবে সরকার। আর নির্বাচনে অংশ না নিলে মাঠপর্যায়ে জনপ্রতিনিধিত্বশীল নেতাদের ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে।

মাঠ পর্যায়ে বিএনপি নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের অনেকে এই নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহী। তবে দলের অবস্থান পরিষ্কার হওয়ার আগে তারা প্রকাশ্যে এখনই বক্তব্য দিতে চান না। তাদের অনেকেই বলছেন, নির্বাচনে যেতে আমরা ইচ্ছুক। তবে, দল যদি অফিসিয়ালি নির্বাচন করার ঘোষণা দেয়, আর সেক্ষেত্রে যদি নিজ নিজ অবস্থান থেকে নির্বাচনে অংশ নিতে বাধা না দেয়, তাহলে আশাবাদী বিপুলসংখ্যক স্থানে আমরা জয়ী হবো। স্থানীয় নির্বাচনে স্থানীয় প্রভাবই বেশি কাজ করে। সেক্ষেত্রে বিএনপির অনেক স্থানীয় নেতা স্থানীয়ভাবে শক্তিশালী।

মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপির এক নেতা ঢাকা টাইমসকে বলেন, নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ইচ্ছা তো আছে। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আমিই বিজয়ী হবো ইনশাআল্লাহ। কিন্তু দল কী সিদ্ধান্ত নেয়, আগে সেটা দেখার জন্য অপেক্ষা করছি।

ফরিদপুর নগরকান্দা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সৈয়দ শাহিনুজ্জামান ঢাকা টাইমসকে বলেন, নির্বাচনে যাওয়ার ইচ্ছে আছে। তবে, তা দলের ওপর নির্ভর করছে। দল যদি নির্বাচনে অংশ নিলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা না নেয় তাহলে নির্বাচন করবো এবং ইনশাআল্লাহ জয়লাভ করবো।

বন্দর থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি আতাউর রহমান মুকুল ঢাকা টাইমসকে বলেন, উপজেলা নির্বাচন করবো ইনশাআল্লাহ। বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীরা আমার সঙ্গে রয়েছে। আশা করি সুষ্ঠু ভোট হলে বিপুল ভোটে পাস করবো। স্থানীয় সরকারের সব নির্বাচনে বিএনপির অংশ নেওয়া উচিত মন্তব্য করে তিনি আরও বলেন, স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে না গেলে তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক থাকে না। এছাড়া সংগঠনগুলোকেও শক্তিশালী করা যায় না। তাই স্থানীয় নির্বাচনে অংশ নিলে কর্মীরা উজ্জীবিত হয়। আমি মনে করি, উপজেলা, পৌরসভা, মেয়র, ইউপি সব স্থানীয় নির্বাচনেই বিএনপির অংশ নেওয়া উচিত।

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলা বিএনপির সভাপতি কামরুল হুদা ঢাকা টাইমসকে বলেন, এটি কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের বিষয়। আমরা তৃণমূলের নেতাকর্মীরা সাংগঠনিকভাবে প্রস্তুত আছি। কেন্দ্র থেকে যদি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার স্বাধীনতা দেয় তাহলে দলীয় ফোরামে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব।

নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার দুইবারের সাবেক চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা দেলোয়ার হোসেন ভূইয়া দুলাল ঢাকা টাইমসকে বলেন, তৃণমূলের অনেক নেতাই নির্বাচন করার জন্য আগ্রহী। আমার প্রস্তুতি রয়েছে। এখন কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি। দল যদি নির্বাচনের যাওয়ার অনুমতি দেয় তাহলে অবশ্যই নির্বাচন করবো। তিনি আরও বলেন, সদ্য কারামুক্ত মহাসচিবের সঙ্গে সাক্ষাতের চেষ্টা করছি। উনার সঙ্গে আলোচনা করার পর সিদ্ধান্ত নেব।

বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ঢাকা টাইমসকে বলেন, উপজেলা নির্বাচন নিয়ে দলীয় ফোরামে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। কাউকে বাধা না দেওয়া কিংবা নিরুৎসাহিত না করা কোনো আলোচনায়ই হয়নি। বিএনপির নীতি-নির্ধারণী ফোরামের এই সদস্য আরও বলেন, এই সরকারের আমলে স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচনও নিরাপদ নয়। তাদের ভোটের চরিত্র এক। তাই স্থানীয় কিংবা জাতীয় নির্বাচন নিয়ে সাধারণ মানুষের কোনো আগ্রহ নেই।

(ঢাকাটাইমস/১৯ফেব্রুয়ারি/এআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজনীতি এর সর্বশেষ

নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালে দল বিবেচনা করবে: রিজভী

হাসপাতালে বিএনপি নেতা সাবুকে দেখতে গেলেন মির্জা ফখরুল

ওবায়দুল কাদের ঘুমের মধ্যেও তারেক-বিএনপি জপতে থাকেন: সালাম

উন্নয়নের ভেলকিবাজিতে বাংলাদেশ এখন ‘ডেথ ভ্যালি’: রিজভী

স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্র গেলেন আমীর খসরু

ক্ষমতায় যেতে বিদেশি প্রভুদের দাসত্ব করে বিএনপি: ওবায়দুল কাদের

বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহযোগী আব্দুস সামাদের সমাধিতে আ.লীগের  শ্রদ্ধা

অসুস্থ নেতাকর্মীদের দেখতে হাসপাতালে যুবদল নেতা মুন্না

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের আইন উপসম্পাদক হলেন জার্জিস বিন এরতেজা

রাজধানীর ৩৫টি স্পটে যুবলীগের সুপেয় পানি, স্যালাইন ও ছাতা বিতরণ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :