পরিবেশ, সেতু, বসতবাড়ি ও স্থাপনা রক্ষায় যাদুকাটার ইজারা বন্ধের আবেদন

যাদুকাটা নদীর দু-পাড়ের ভাঙনে হুমকির মুখে পড়েছে শত কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সেতু, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বসতবাড়িসহ বিভিন্ন স্থাপনা। এসব রক্ষায় মানবিক কারণে সুনামগঞ্জের অন্যতম বৃহৎ মহাল যাদুকাটা -১ ও যাদুকাটা-২ বালুমহাল ইজারা প্রদান বন্ধ করার আবেদন করেছেন বালুমহাল পাড়ের দুজন বাসিন্দা।
বৃহস্পতিবার তারা দুজন পৃথকভাবে জেলা প্রশাসক বরাবর এই আবেদন করেন।
তারা হলেন, সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার নোয়াপাড়া (ঘাগটিয়া) গ্রামের মো. মাসাদুজ্জামান ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার সত্রিশ গ্রামের মো. খোরশেদ আলম।
আবেদনে উল্লেখ করা হয়, যাদুকাটা-১ বালুমহাল ইজারা দেওয়ার কারণে নদীর পাড় কেটে অসংখ্য ড্রেজার মেশিন ও বোমা মেশিন দিয়ে বালু পাথর উত্তোলন করায় তার বাড়িসহ এশিয়ার বৃহত্তম পর্যটন স্পট শিমুল বাগান ও বারেক টিলা, শাহ্ আরেফিন শাহ সেতু, বিজিবি ক্যাম্প, অদৈত্য আখড়া, লাউড়েরগর বাজার, বিন্নাকুলী বাজার, ঘাগটিয়া, গড়কাটি, মোদেরগাঁও, পাঠানপাড়া, কুনাটছড়া, সোহালা, মিয়ারচর ও সত্রিশ গ্রামের অসংখ্য পরিবারের ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ঘরবাড়ি হারা মানুষ কয়েকবার বাড়িঘর সরিয়েও রেহাই পাচ্ছেন না।
এ বছরও যদি যাদুকাটা-১ ও যাদুকাটা-২ বালুমহাল ইজারা প্রদান করা হয় এই সকল স্থাপনা ও গ্রামগুলো বিলিন হয়ে যাবে। এ ব্যাপারে নদীর পাড়ের মানুষ কয়েক বার মানববন্ধন ও সাংবাদিক সম্মেলন করে দাবি জানানো হয়। এছাড়াও দেশের অংসখ্য স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকাসহ টিভি চ্যানেলে সরজমিন রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। তারপরও ইজারা প্রদান ও বালু উত্তোলনের নামে ধ্বংস লীলা বন্ধ হয় নাই। এতে পরিবেশের ভয়াবহ ক্ষতি হচ্ছে বলে দাবি করা হয়।
আবেদনে উল্লেখ করা হয়,তিন বছর পূর্বে বালুমহালগুলো সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে সৃজন করা হয়েছে বলে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে অভিযোগও ওঠে।
এমন অবস্থায় ঐতিহ্যবাহী পর্যটন স্পট শিমুল বাগান ও বারেকটিলা, শাহ্ আরেফিন ও অদৈত মহা প্রভু সেতু, একাধিক বাজারসহ অসংখ্য গ্রামের ঘরবাড়ি হারা মানুষের কথা বিবেচনা করে ১৪৩১ বাংলা সনের জন্য প্রকাশিত ইজারা বিজ্ঞপ্তির যাদুকাটা ১ বালুমহালটির ইজারা কার্যক্রম জরুরি ভিত্তিতে বন্ধ করা আবশ্যক।
এই ব্যাপারে তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান করুণা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল ২০১৯ সালের ১৭ জুলাই যাদুকাটা ১ ও যাদুকাটা ২ বালুমহাল সৃজন করা যাবে না মর্মে জেলা প্রশাসক বরাবর পত্র দেন। সেই পত্রে বালুমহাল সৃজন হলে দেশ ও জনগণের কী কী ক্ষতি হতে পারে বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছিল।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) মহামান্য হাইকোর্টে দায়েরকৃত রিট পিটিশন নং ৪৭৯৫/২০০৯ মোকদ্দমায় মহামান্য হাইকোর্ট ২০১০ সালের ৩ জুন রায়ে উল্লেখ করেছেন, পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট ও সাধারণ জনগণের ক্ষতি হলে বালু উত্তোলন করা যাবে না।
আবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, যাদুকাটা-১ বালুমহাল ও যাদুকাটা-২ বালুমহাল ১৪৩০ বাংলা সনের জন্য ইজারা বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করলে সমাজ সেবক ও স্থানীয় বাসিন্দা ফেরদৌস আলম ২০২৩ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি ইজারা বিজ্ঞপ্তির বিরুদ্ধে মহামান্য হাইকোর্টে রিট পিটিশন নং ২১৭০/২০২৩ দায়ের করার পর মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগ যে রুল নিশি জারি করেন তা এখনও কার্যকর অবস্থায় রয়েছে।
স্থানীয় এলাকাবাসী জানান, নদীর তলদেশে সাধারণ বালু না থাকায় ড্রেজার মেশিন ও বোমা মেশিন দিয়ে নদীর পাড় কেটে বালু উত্তোলন করায় যাদুকাটা নদীর উপর ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ১টি সেতু ও ৪৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত আরেকটি সেতু হুমকির মুখে রয়েছে। এ ছাড়াও নদীর তীরবর্তী গ্রামের ছাত্রছাত্রীরা ড্রেজার ও বোমা মেশিনের বিকট শব্দে লেখাপড়ায় বিঘ্নসহ মারাত্মক শব্দ দূষণের শিকার হচ্ছেন।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) সিলেট বিভাগের সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট শাহ সাহেদা বলেন, যাদুকাটা এলাকার পরিবেশ—প্রতিবেশের বিপন্নতায় আমরা উদ্বিগ্ন। ওখানকার মানুষ ও পরিবেশের স্বার্থে আমরা জেলা প্রশাসককে গেল ৩১ জানুয়ারি পত্র দিয়ে আইননানুগভাবে যাদুকাটার ইজারা কার্যক্রম বন্ধের অনুরোধ জানিয়েছি। এই চিঠির প্রেক্ষিতে তিনি কী ব্যবস্থা নিলেন বার বার ফোন দিয়ে জানার জন্য চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। একারণে এই বিষয়ে ফলো আপ জানা যায়নি।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী জানান, যাদুকাটা নদীর ইজারা স্থগিত রাখার বিষয়ে কী আবেদন করা হয়েছে তা আমার দেখার সুযোগ হয়নি। তবে আবেদন যাই আসুক, আইনানুগভাবেই বিষয়টির নিষ্পত্তি করা হবে।
(ঢাকাটাইমস/২৩ফেব্রুয়ারি/এআর)

মন্তব্য করুন