অবশেষে অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু বগুড়া-সিরাজগঞ্জ রেল প্রকল্পে

বগুড়া প্রতিনিধি, ঢাকা টাইমস
 | প্রকাশিত : ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৪:০৮

অবশেষে বগুড়া-সিরাজগঞ্জ রেলপথ নির্মাণের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। চলতি মাসের ১১ তারিখে ভূমি মালিকদের চার ধারায় নোটিশ দেওয়ার মাধ্যমে বগুড়া জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। পর্যায়ক্রমে কয়েকটি ধারায় নোটিশের পর কোনো সমস্যা না থাকলে অধিগ্রহণ শুরু করা হবে। পাশাপাশি সিরাজগঞ্জেও জমির মালিকদের নামে নোটিশ প্রস্তুতের কাজ চলছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী বছর মূল নির্মাণ কাজ শুরুর কথা জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।

এর আগে ২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর পাঁচ হাজার ৫৭৯ কোটি ৭০ লাখ টাকা সম্ভাব্য ব্যয়ে একনেকে এই প্রকল্পটি অনুমোদন পায়। বাংলাদেশ সরকার ও ভারতীয় ঋণের অর্থে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর মধ্যে তিন হাজার ১৪৬ কোটি ৫৯ লাখ ১০ হাজার টাকা ঋণ দেওয়ার কথা ভারতের। শুরুতে প্রকল্পটি ২০২৩ সালের ৩০ জুনের মধ্যে শেষ করার কথা ছিল।

কিন্তু পরামর্শক নিয়োগ এবং নকশা চূড়ান্ত করা নিয়ে বিলম্বের কারণে তা সম্ভব হয়নি। পরে ২০২১ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর ভারতীয় কর্তৃপক্ষ পরামর্শক নিয়োগ দেওয়ার পর ২০২৩ সালের ৩০ জুন চূড়ান্ত নকশা প্রণয়ন করা হয়।

এদিকে, প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর হলেও ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার খবরটি বগুড়াসহ উত্তরাঞ্চলের মানুষদের জন্য স্বস্তির নিশ্বাস ফেলার মতো সংবাদ। কারণ, বগুড়া-সিরাজগঞ্জ দুই জেলার মধ্যে দূরত্ব মাত্র ৭২ কিলোমিটার হলেও সরাসরি রেলপথ নেই। ফলে এ অঞ্চলের ট্রেনগুলোকে সান্তাহার, নাটোর ও পাবনার ঈশ্বরদী হয়ে ঢাকায় যেতে হয়। এই পথের দূরত্ব ১৯২ কিলোমিটার। বাড়তি পথ ঘোড়ার কারণে ট্রেনে ঢাকায় যেতে সময় লাগছে ৯-১০ ঘণ্টা। বগুড়া থেকে সরাসরি সিরাজগঞ্জ রেলপথ হলে ঢাকার সঙ্গে বগুড়ার অন্তত ১২০ কিলোমিটার পথের দূরত্ব কমবে। নতুন রেলপথ চালু হলে বগুড়া থেকে সিরাজগঞ্জ হয়ে পাঁচ ঘণ্টায় ঢাকায় পৌঁছানো সম্ভব। ফলে সড়ক পথের পাশাপাশি বগুড়ায় উৎপাদিত অনেক পণ্য ঢাকায় আনা নেওয়ায় সুবিধা। পাশাপাশি রংপুর, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট ও গাইবান্ধা মানুষ ট্রেনযোগে ঢাকায় চলাচল করেন। এই পথে ট্রেন চালু হলে তারাও উপকৃত হবেন।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বগুড়া থেকে সিরাজগঞ্জ পর্যন্ত ৮৫ কিলোমিটার ডুয়েল গেজ (ব্রড গেজ ও মিটার গেজ) নতুন রেলপথ নির্মাণে ৯৬০ একর জমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন হবে। এর মধ্যে বগুড়ার সীমানা পর্যন্ত অধিগ্রহণ করা হবে ৪৭৯.১৫ একর। বাকি ৪২০.৬৮ একর জায়গা অধিগ্রহণ করা হবে সিরাজগঞ্জ জেলায়। ভূমি অধিগ্রহণের জন্য ১,৯২১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

প্রকল্প-সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, প্রকল্পের আওতায় ডুয়েল গেজের দুটি রেলপথ নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এর মধ্যে একটি হলো- বগুড়ার ছোট বেলাইল এলাকা থেকে সিরাজগঞ্জের এম মনসুর আলী স্টেশন পর্যন্ত ৭৩ কিলোমিটার এবং অপরটি বগুড়ার কাহালু স্টেশন থেকে রাণীরহাট পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার। মূলত সান্তাহারের দিক থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী এবং ঢাকা থেকে ছেড়ে সান্তাহার হয়ে দিনাজপুরের পার্বতীপুরগামী ট্রেনগুলো যাতে বগুড়া স্টেশনকে এড়িয়ে সরাসরি চলাচল করতে পারে, সেজন্য কাহালু-রাণীরহাট রেলপথটি নির্মাণ করা হচ্ছে। দুটি রেলপথ মিলিত হওয়ার কারণে বগুড়া শহর থেকে আট কিলোমিটার দূরে রাণীরহাটে একটি জংশনও নির্মাণ করা হবে। আরেকটি জংশন হবে সিরাজগঞ্জে। এছাড়া নতুন রেলপথের জন্য দুই জেলা সীমানায় আরও ছয়টি স্টেশন করা হবে। সেগুলো হলো–শেরপুর, আড়িয়া বাজার, ছোনকা, চান্দাইকোনা, রায়গঞ্জ ও কৃষ্ণদিয়া।

বগুড়া জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম বলেন, আমরা ভূমি মালিকদের ৪ ধারা নোটিশ দিয়েছি ভূমি অধিগ্রহণের জন্য। কারো যদি কোন আপত্তি থাকে তাহলে আমরা আপত্তি শুনবো। এরপর ৫ ধারা নোটিশ দেবো। এরপর ৬ ধারায় পর্যায়ক্রমে অধিগ্রহণ সম্পন্ন করবো। অধিগ্রহণের টাকা আমরা এখনও পাইনি। এই অর্থ বছরে যদি তারা আমাদেরকে অধিকাংশ টাকা অধিগ্রহণে দিয়ে ফেলে তাহলে যত দ্রুত সম্ভব অধিগ্রহণের কার্যক্রম শেষ করে ফেলবো। এরপর আমরা জায়গা বুঝিয়ে দিলে তারা কাজ শুরু করতে পারবে।

এদিকে সিরাজগঞ্জের সিনিয়র সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুইচিং মং মারমা জানিয়েছেন, সিরাজগঞ্জের জমির মালিকদের নামে ৪ ধারায় নোটিশ দেওয়ার প্রস্তুতি চলমান রয়েছে।

বগুড়া-সিরাজগঞ্জ রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক মো. মনিরুল ইসলাম ফিরোজী জানান, অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ার পাশাপাশি রেলপথ নির্মাণকাজের জন্য টেন্ডার আহ্বানের প্রস্তুতি চলছে। এজন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ভারতীয় এক্সিম ব্যাংকে পাঠানো হয়েছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী বছরের শুরুতে মূল নির্মাণকাজ শুরু হবে।

বগুড়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাসুদুর রহমান মিলন বলেন, উত্তরাঞ্চলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি শিল্পকারখানা, পর্যটন খাত, আবাসন ব্যবসা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে বগুড়ায়। এসব কারণে এই জেলার অনেক গুরুত্ব রয়েছে জাতীয় অর্থনীতিতেও। বগুড়া থেকে সিরাজগঞ্জ পর্যন্ত সরাসরি রেলপথ নির্মিত হলে রংপুর অঞ্চলের অন্তত আট জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হবে। রাজশাহী বিভাগের জয়পুরহাট এবং নওগাঁরও ব্যবসা-বাণিজ্যের ব্যাপক উন্নতি হবে। বগুড়া-সিরাজগঞ্জ রেলপথ প্রকল্প এ অঞ্চলের চেহারাই বদলে দেবে। মানুষের জীবনযাত্রায় গতি আনবে।

(ঢাকা টাইমস/২৬ফেব্রুয়ারি/প্রতিনিধি/এসএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :