ভিকারুননিসার ১৬৯ শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিল চ্যালেঞ্জ করে আবেদন

রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রথম শ্রেণির ১৬৯ শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিলের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে চেম্বার আদালতে আবেদন করা হয়েছে।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী মাঈনুল হাসান বুধবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ভর্তি বাতিলের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে চেম্বার আদালতের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ আবেদন করা হয়।
গত ৫ মার্চ ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রথম শ্রেণির ১৬৯ ছাত্রীর ভর্তি বাতিল করে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর অভিভাবককে পৃথক পৃথক চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানিয়ে দেন প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ কেকা রায় চৌধুরী। সেই সঙ্গে ভর্তি বাতিলের বিষয়টি চিঠি দিয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদকে অবহিত করা হয়।
এর আগে গত ৬ মার্চ প্রথম শ্রেণির ১৬৯ ছাত্রীর ভর্তি বাতিলের পর এসব শূন্য আসনে অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে শিক্ষার্থী ভর্তি করে তার তালিকা আদালতে দাখিল করতে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। আগামী ১৪ মার্চের মধ্যে এই ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে বলা হয়েছে।
১৬৯ ছাত্রীর ভর্তি বাতিলের প্রতিবেদন অ্যাফিডেভিট আকারে আদালতে দাখিলের পর বিচারপতি জেবিএম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
এদিকে এই রিট মামলায় ভর্তি বাতিল হওয়া ১৬৯ শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের মধ্যে ৩৬ জন পক্ষভুক্তির আবেদন করেছেন। আদালতে স্কুলের পক্ষে আইনজীবী অ্যাডভোকেট রাফিউল ইসলাম ও রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী মাইনুল হাসান উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, শূন্য আসনে অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে শিক্ষার্থী ভর্তি করে তার তালিকা হাইকোর্টে দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
চলতি বছর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রথম শ্রেণিতে বিধি বহির্ভূতভাবে ১৬৯ জন শিক্ষার্থীকে ভর্তি করা হয়েছিল। যাদের জন্মসাল ছিল ২০১৫ ও ২০১৬ সাল। কিন্তু মাউশি প্রজ্ঞাপন দিয়ে বলেছিল ২০১৭ সালে জন্মসনদ রয়েছে এমন শিক্ষার্থীরাই প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির আবেদন করতে পারবে। কিন্তু এই ১৬৯ শিক্ষার্থীর অভিভাবক ২০১৫ ও ২০১৬ সালের জন্মসনদ দিয়ে তাদের সন্তানদের ভর্তির জন্য আবেদন করেন। পরে তদন্তে বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ায় ২০১৫ সালে জন্মগ্রহণকারী ১০ জন এবং ২০১৬ সালে জন্মগ্রহণকারী ১৫৯ জন শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিল করা হলো।
চলতি শিক্ষাবর্ষে ভিকারুননিসা স্কুলে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তিতে অনিয়ম হয়েছে এবং এই অনিয়মের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে মাউশির মহাপরিচালক বরাবর একটি আবেদন দেন পারভীন আক্তার নামে একজন অভিভাবক। কিন্তু আবেদন নিষ্পত্তি না করায় হাইকোর্টে রিট করেন তিনি। হাইকোর্ট পারভীন আক্তারের আবেদনটি নিষ্পত্তি করতে মাউশির মহাপরিচালককে নির্দেশ দেন। উচ্চ আদালতের ওই নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৪ সালে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হওয়া সব শিক্ষার্থীর তথ্য চাওয়া হয়। ওই তথ্য পর্যালোচনা করে মাউশি জানতে পারে যে ভিকারুননিসায় ১৬৯ জন শিক্ষার্থী বিধিবহির্ভূতভাবে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছেন। এরপরই এসব শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিলের জন্য ভিকারুননিসার অধ্যক্ষ কেকা রায় চৌধুরীকে ২২ ফেব্রুয়ারি চিঠি দেন মাউশির মহাপরিচালক।
কোন শাখায় কতজনের ভর্তি বাতিল
ভিকারুননিসা স্কুলের চারটি শাখার মধ্যে নিউ বেইলি রোড প্রধান শাখায় বিধিবহির্ভূত ভর্তি হয়েছে ৭৬ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ২০১৫ সালে জন্ম নেওয়া শিক্ষার্থী ৫ জন। ২০১৬ সালে জন্ম নেওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৭১ জন। এই ৭১ জনের মধ্যে ১৭ জন ইংরেজি ভার্সনের শিক্ষার্থী। আজিমপুর শাখায় ২০১৫ সালে জন্ম নেওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪ জন। ২০১৬ সালে জন্ম নেওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪৩ জন। ধানমন্ডি শাখায় ২০১৫ সালে জন্ম নেওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা একজন। ২০১৬ সালে জন্ম নেওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৮ জন। বসুন্ধরা শাখায় ২০১৬ সালে জন্ম নেওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা রয়েছে ২৭ জন। এদের সকলের ভর্তি বাতিল করেছেন প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ।
(ঢাকাটাইমস/১৩মার্চ/টিআই/ইএস)

মন্তব্য করুন