রেলে স্বস্তির ঈদযাত্রা, ঘরমুখো মানুষের আনন্দ

তানিয়া আক্তার, ঢাকা টাইমস
| আপডেট : ০৫ এপ্রিল ২০২৪, ২২:১৮ | প্রকাশিত : ০৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৯:১৮

পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপন করতে ট্রেনে করে স্বস্তিতে বাড়ি ফিরছে মানুষ। এবার ঈদুল ফিতরের আট দিন আগে আগাম টিকিটে ঈদযাত্রা শুরু হওয়ায় কোনো ভোগান্তি ছাড়াই গ্রামে ফেরা সম্ভব হচ্ছে।

শুক্রবার দুপুরে ট্রেনে ঈদযাত্রার তৃতীয় দিনে কমলাপুর রেলস্টেশন গিয়ে দেখা গেছে, নাড়ির টানে বাড়ি ফেরার আনন্দময় অপেক্ষা যাত্রীদের চোখেমুখে। স্টেশনের প্রবেশমুখেই বাঁশের মধ্যে রঙ-বেরঙের কাপড় জড়িয়ে নির্মাণ করা হয়েছে অস্থায়ী গেট। পাশেই সাজানো রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বুথ। গেইটে থাকা রেলওয়ের নির্ধারিত কর্মকর্তারা যাত্রীর টিকিট চেক করে ভেতরে দিকে প্রবেশ করাচ্ছেন এবং টিকিট ছাড়া ভেতরে কেউ প্রবেশ না করার জন্য কড়া নজড় রাখছেন।

অন্যান্য বছর ঈদযাত্রায় নানা ভোগান্তির অভিযোগ থাকলেও এবার স্বস্তি ফিরেছে যাত্রীদের। সঠিক সময়ে টিকিট পাওয়ার পাশাপাশি নির্ধারিত সময়ে ট্রেনের দেখা মিলছে। ব্যাগ–ট্রলি নিয়ে অপেক্ষা নির্ধারিত ট্রেনের। কেউ কেউ কুলিও ঠিক করে রেখেছেন। ট্রেন এলেই দ্রুত ট্রেনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন।

মো. সায়েম পরিবারসহ কালনী এক্সপ্রেসে সিলেট যাবেন। বছর বিশেক ধরে যাওয়া আসা করেন। এবার ভালোভাবে যেতে পারছেন। আগাম টিকিট কিনে রেখেছিলেন।

মো. সায়েম ঢাকা টাইমসকে বলেন, 'অনলাইনে আগেই টিকিট কিনে রেখেছিলাম। তাই যেতেও সুবিধা হচ্ছে। '

একসময় ভোরে এসে লাইন ধরে টিকিট কাটার অসুবিধা থেকে মুক্তি পেয়েছেন মো.মিনহাজুর রহমান নামের এক তরুণ। এখন সহজেই অনলাইন থেকে টিকিট কেটে রেখেছিলেন।

উপকূল এক্সপ্রেসে নোয়াখালী যাচ্ছেন মো.মিনহাজুর রহমান। তিনি ঢাকা টাইমসকে বলেন,' ঢাকা থেকে যাওয়া আসা করি আজ ৮ বছর। আগে ভোর রাতে এসে টিকেটের জন্য লাইনে দাঁড়ায়া থাকতে হতো। এখন তো অনলাইনেই টিকিট কাটা শেষ। এখন আর কষ্ট নাই। শুধু ট্রেন এলেই উঠে পড়বো।'

নির্ধারিত সময়ে ট্রেন এলেও দু-একটি ট্রেন মিনিট দশেক বিলম্ব করছে। তবুও হতাশা নেই যাত্রীদের মনে। ফ্যানের পাখার বাতাস ছাড়াও প্রাকৃতিক আবহ বেশ ভালো। এছাড়া এখনও ঈদের যাত্রীদের চাপ শুরু হয়নি। ফলে গরমেও ট্রেনের দেরি ভোগান্তি মনে করছেন না যাত্রীরা।

টাঙ্গাইলে যাচ্ছেন সাদিয়া আফরিন নিঝুম। তিনি ঢাকা টাইমসকে বলেন,' অনলাইনে টিকিট কেটে নিয়েছি। টিকিট কাটতে অসুবিধা হয়নি। তবে ট্রেন ১০ মিনিট লেইট হয়েছে। তবুও অসুবিধা নেই। পরিবেশ ভালো। অপেক্ষা করতেও ভালো লাগছে।'

স্টেশনে কেউ একা অলস সময় পার করছেন, কেউবা মোবাইলে মনোযোগ দিচ্ছেন। বেশিরভাগই পরিবারসহ আসায় নানা গল্পে মেতে ওঠেছেন। শুক্রবার হলেও ভিড় কিছুটা কম থাকায় শিশুরা ছোটাছুটি করার সুযোগ পাচ্ছে। তবে দিন দুয়েকের মধ্যেই এমন দৃশ্য পাল্টে যাবে। ঘরমুখো মানুষের চাপ আরও বাড়বে।

এখানে দায়িত্বরত কনস্টেবল জসিম ঢাকা টাইমসকে বলেন,'সামনে যাত্রীর চাপ বাড়বে। এখনও তেমন ভিড় তৈরি হয়নি। তবে এখন পর্যন্ত সব কিছু ঠিক চলছে।'

তবে অনলাইন টিকিট কাটা নিয়ে কিছুটা অভিযোগ রয়েছে এক তরুণের।

সিল্ক সিটির জন্য অপেক্ষারত মাসুদ মোস্তফা ঢাকা টাইমসকে বলেন, 'অনলাইন টিকিট তো আমাদের মতো তরুণদের সুবিধা। কিন্তু পুরনোদের জন্য অসুবিধা। আমার বাবা কিংবা ভাই যেতে পারছেন না, প্রযুক্তির অসুবিধার জন্য।'

এদিকে ঢাকাবাসী সোহাইলা আফসানা মেট্রোরেলের সুবিধা এখানে কামনা করঢ়েন। তাহলেসব বয়সী জন সাধারণের সুবিধার পাশাপাশি টিকেটের কালোবাজারি থেকে রক্ষা পাওয়া যেতো বলেই মতো দিয়েছেন তিনি।

সিল্ক সিটির জন্য অপেক্ষারত সোহাইলা আফসানা ঢাকা টাইমসকে বলেন, 'মেট্রোরেলে চড়তে অনেক সুবিধা। টিকিট কাটায় কোনো ঝামেলা নাই। সবাই বুঝতে পারছে। কিন্তু এই ট্রেনে রেজিস্ট্রেশন করাসহ নানা ধাপ সবাই বুঝবে না এছাড়া চুরি ঠেকানো যাচ্ছেনা। ভোগান্তি কমছে না। জন সাধারণত অনলাইনে টিকিট কাটা সহজে পারবে বলে মনে হয় না। মেট্রোরেলের মতো সহজ সিস্টেম এখানে নিয়ে আনলে ভালো হয়।'

এ বিষয়ে টিটিই মো. রিয়াদ হেসেন দিপ্ত ঢাকা টাইমসকে বলেন, 'কোনো ধরনের ঝামেলা যাতে না হয় সেজন্য অনলাইন টিকিট করা হয়েছে। তবে পুরনো বা বৃদ্ধ যারা আছেন তাদের পরিবারের সদস্য তো কেউ না কেউ তরুন হবেন। তারা সহযোগিতা করলেই সমাধান হয়ে যাবে।'

এদিকে হামিদুর রহমান বাবু সিল্ক সিটিতে ঈশ্বরদী বাইপাসে নামবেন। অনলাইন আর অফলাইনের আলাদা কোনো সুবিধা নেই তার কাছে।

হামিদুর রহমান বাবু ঢাকা টাইমসকে বলেন, 'আমি বেশ কয়েক বছর ধরেই ঢাকা থেকে ট্রেনে যাওয়া আসা করি। টিকিট কাটার ক্ষেত্রে অফলাইন এবং অনলাইন আমার কাছে দুটোই আরামদায়ক। কারণ ঈদের জার্নিটাই আমার জন্য আনন্দদায়ক।'

ঈদে ভ্রমন আনন্দদায়ক মো.শাকিলের কাছেও। তিনি রাজশাহী যাবেন। সেজন্য সকাল আটটার মধ্যে টিকিট কেটে নিতে হয়েছে তাকে। তবে অনলাইনে টিকিট না পেলে বাসে যাওয়া আসা করেন।

কমলাপুর রেলস্টেশনের ম্যানেজার মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার ঢাকা টাইমসকে বলেন, 'সুশৃঙ্খল পরিবেশ বজায় রাখতে মোবাইল কোর্টে সার্বক্ষণিক মনিটরিং চলছে। এবারের ঈদ যাত্রায় এখন পর্যন্ত কোনো শিডিউল বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটেনি। আজ সকাল থেকে বেলা দুইটা পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন এলাকার উদ্দেশ্যে ২৪টি ট্রেন ছেড়েছে। এখন পর্যন্ত অবস্থা খুবই ভালো।'

নির্বিঘ্নে ঈদযাত্রার জন্য আজ থেকে ৮ জোড়া বিশেষ ট্রেন চলাচল করছে জানিয়ে ম্যানেজার বলেন, ' ঈদের আগে অতিরিক্ত যাত্রীর চাপ সামাল দিতে আজ থেকে চাঁদপুর ঈদ স্পেশাল (১ ও ৩) চট্টগ্রাম-চাঁদপুর; চাঁদপুর ঈদ স্পেশাল (২ ও ৪) চাঁদপুর-চট্টগ্রাম; ময়মনসিংহ ঈদ স্পেশাল (৫ ও ৬) চট্টগ্রাম-ময়মনসিংহ-চট্টগ্রাম; দেওয়ানগঞ্জ ঈদ স্পেশাল (৭ ও ৮) ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জ-ঢাকা রুটে ৫ এপ্রিল থেকে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত এবং ঈদের পরে ৫ দিন চালানো হবে।'

তিনি আরও বলেন, 'এছাড়াও কক্সবাজার ঈদ স্পেশাল (৯ ও ১০) চট্টগ্রাম-কক্সবাজার-চট্টগ্রাম রুটে ঈদের আগে (৮ ও ৯) এপ্রিল ও ঈদের পরের দিন থেকে তিন দিন চলাচল করবে।'

(ঢাকাটাইমস/৫এপ্রিল/টিএ/এআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :