২৪ ঘণ্টায় রাফাহতে ইসরায়েলি হামলায় ৩৫ ফিলিস্তিনি নিহত

গাজা উপত্যকার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফাহতে ইসরায়েলের তীব্র বিমান হামলায় গত ২৪ ঘণ্টায় অন্তত ৩৫ ফিলিস্তিনি নিহত ও ১২৯ জন আহত হয়েছে।
বুধবার একটি মেডিকেল সূত্রের বরাতে এই তথ্য জানিয়েছে তুর্কি বার্তা সংস্থা আনাদোলু।
মেডিকেল সূত্রটি আরও বলেছে, নিহত ফিলিস্তিনিদের মরদেহ ও আহতরা যারা রাফাহ শহরের কুয়েত হাসপাতালে পৌঁছেছে, হতাহতদের মধ্যে শিশু ও নারীও রয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও ফিলিস্তিনি নিরাপত্তা সূত্রসমূহ বলছে, সোমবার থেকে রাফাহ আবাসিক এলাকাসহ শহরজুড়ে তীব্র বিমান হামলা এবং গোলাবর্ষণ করছে ইসরায়েলি বাহিনী। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সোমবার রাত থেকে শহরের অন্তত ৫০ জায়গায় হামলা চালানো হয়েছে।
প্রসঙ্গত, সোমবার রাতে হামাস যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে রাজি হওয়ার পর সেটাকে উপযুক্ত নয় বলে প্রত্যাখ্যান করে নেতানিয়াহু সরকার। একই সঙ্গে ইসরায়েল রাফায় বড় ধরনের স্থল অভিযান চালানোর অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে। এর অংশ হিসেবে মঙ্গলবার মিশরের সঙ্গে রাফাহ ক্রসিং- গাজায় প্রবেশের একমাত্র দখল করে নেয় ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।
এর আগে সোমবার এক বিবৃতিতে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বলেছে, তারা পোস্টার, ক্ষুদে বার্তা, ফোনকলের মাধ্যমে রাফায় অবস্থানরত ফিলিস্তিনিদের নির্দিষ্ট এলাকায় চলাচল না করতে উৎসাহিত করছে। একই সঙ্গে রাফাহর পূর্ব অংশে থাকা ফিলিস্তিনিদের অতি শিগগিরই একটি মানবিক এলাকায় চলে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী, যা একটি স্থল হামলার আগে বেসামরিক নাগরিকদের স্থানান্তরের সূচনা বলে মনে করা হচ্ছে।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর একজন মুখপাত্র আভিচায় আদ্রাই সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘প্রত্যাশিত স্থল অভিযানের আগে রাফাহ পূর্বাঞ্চলীয় এলাকা থেকে প্রায় এক লাখ মানুষকে সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে।’
এছাড়াও রাফাহতে পরিকল্পিত স্থল হামলা ‘আসন্ন’ বলে রবিবার মন্তব্য করেছেন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট।
ইসরায়েলি রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম আর্মি রেডিও বলেছে, ইসরায়েলের সশস্ত্র বাহিনী স্থল অভিযানের আগে রাফাহ থেকে ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু করেছে।
আর্মি রেডিও আরও জানিয়েছে, প্রাথমিকভাবে রাফাহ শহরের পূর্বাঞ্চলীয় কয়েকটি জেলা থেকে ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এই ফিলিস্তিনিদের সেখান থেকে সরিয়ে নিকটবর্তী খান ইউনিস এবং আল মুওয়াসি শহরে পাঠানো হবে।
এদিকে ইসরায়েলের বাহিনী নির্দেশের পরপরই কিছু ফিলিস্তিনি রাফাহ ছাড়তে শুরু করেছেন। প্রচন্ত বৃষ্টির মধ্যেও ফিলিস্তিনিদের গাধার টানা গাড়ি, পিক-আপ, ব্যক্তিগত গাড়িতে এবং পায়ে হেঁটে তাদের বাচ্চা ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে রাফাহ ছাড়তে দেখা গেছে।
আবু রায়েদ নামে একজন শরণার্থী রয়টার্সকে বলেছেন, ‘প্রবল বৃষ্টি হচ্ছে এবং আমরা কোথায় যাব জানি না। আমি চিন্তিত ছিলাম যে এই দিনটি আসতে পারে, আমাকে এখন দেখতে হবে আমি আমার পরিবারকে কোথায় নিয়ে যেতে পারি।’
মূলত ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক বিরোধিতা সত্ত্বেও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ‘হামাসের বাকি ব্যাটালিয়নগুলোকে’ পরাজিত করতে রাফাহ আক্রমণ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
অন্যদিকে ইসরায়েল রাফাহতে সামরিক অভিযান চালানোর পরিকল্পনার ফলে বৈশ্বিক সমালোচনার মুখে পড়েছে। কারণ যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর গাজা উপত্যকার শেষ নিরাপদস্থল হিসেবে সেখানে ১৪ লাখ ফিলিস্তিনি আশ্রয় নিয়েছেন, যা গাজার মোট জনসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশ। কিন্তু তা সত্ত্বেও রাফাহতে স্থল হামলা চালানোর হুমকি দিয়ে আসছেন নেতানিয়াহু।
ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় মিত্র যুক্তরাষ্ট্র রাফাহতে হামলার বিরোধিতা করেছে। তারা বলেছে সেখানে পূর্ণমাত্রার কোনো সামরিক আগ্রাসন চালানো হলে সাধারণ মানুষ ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন এবং ইসরায়েলের নিরাপত্তাও সংকটে পড়বে।
(ঢাকাটাইমস/০৮মে/এমআর)

মন্তব্য করুন