আর্থিক আধিপত্যের বাহন হিসেবে ব্যাংকগুলোকে ব্যবহার করা হচ্ছে: সিপিডি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ২৩ মে ২০২৪, ১৫:৫৭
অ- অ+

অভিজাত ব্যক্তিরা দেশে ক্রোনি ক্যাপিটালিজমের (স্বজনতোষী পুঁজিবাদ) মাধ্যমে তাদের লক্ষ্য পূরণে ব্যাংকগুলোকে বাহন হিসেবে ব্যবহার করছে। এছাড়াও ব্যাংকিং খাতে ব্যাপক অনিয়মের কারণে মানুষ এখন ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিচ্ছে বলেও মন্তব্য করেছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর লেকশোর হোটেলের লা ভিটা হলে সিপিডি আয়োজিত ‘বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের জন্য সামনে কী অপেক্ষা করছে?’ শীর্ষক সংলাপে তিনি এ মন্তব্য করেন। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনও করেন তিনি।

ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘২০১১-১২ অর্থবছরের চতুর্থ প্রান্তিকে ৪২ হাজার ৭২৫ কোটি টাকা থেকে গত ১০ বছরে খেলাপি ঋণের পরিমাণ তিনগুণেরও বেশি বেড়ে চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে এক লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।’ উল্লেখিত হিসাব অনুযায়ী আদালতের নিষেধাজ্ঞাসহ ঋণ ও পুনঃতফসিলকৃত ঋণ ধরা হলে খেলাপির প্রকৃত পরিমাণ আরও বেশি হবে বলেও জানান তিনি।

তিনি বলেন, সুশাসনের অভাব, জবাবদিহিতার অনুপস্থিতি ও স্বচ্ছতা না থাকার কারণে মন্দঋণ বেড়েছে। আর মন্দঋণ পুরো অর্থনীতিতে ঝুঁকি তৈরি করেছে। বাংলাদেশের ব্যাংক ঋণের বড় অংশ এখন ইচ্ছাকৃত খেলাপি। তারা ব্যাংক থেকে ঋণ নেয় কিন্তু ফেরত দিতে হবে তেমন কোনো দায়বদ্ধতা তাদের ভেতরে কাজ করে না। অন্যদিকে কিছু ভাল গ্রাহক ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে প্রতিনিয়ত ঋণ পরিশোধ করছে। এ অবস্থা আর্থিক ঝুঁকি তৈরি করেছে।’ এ অবস্থা থেকে উত্তরণ ব্যাংকিং কমিশন তৈরি করে ব্যাংকিং খাতে ‘দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন’ উদ্যোগের পরামর্শ দেন এই গবেষক।

ব্যাংকিং খাতে ব্যাপক অনিয়মের কারণে মানুষ এখন ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ব্যাংকে আমানত রেখে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে মানুষ। গত দুই বছরে দেশে মূল্যস্ফীতির হার যেভাবে বেড়েছে, সেই তুলনায় ব্যাংক আমানতের সুদহার বাড়েনি। পরিণামে ব্যাংকে টাকা রেখে মানুষ মুনাফা তো পাচ্ছেই না, উল্টো ক্ষতি হচ্ছে তাদের।’

সিপিডি অনুষ্ঠানে ব্যাংক আমানতের সুদহারের সঙ্গে মূল্যস্ফীতির হার সমন্বয় করে দেখিয়েছে যে গত ২০২০ সালের মার্চ মাসের পর থেকে অর্থাৎ প্রায় চার বছরে ধরে ব্যাংকে আমানত রেখে মানুষ ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। ব্যাংকে আমানত রেখে সর্বশেষ মুনাফা পাওয়া গেছে সে বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে। পরের মাস মার্চে আমানতের প্রকৃত সুদহার ছিল শূন্য।

সিপিডির হিসাবে দেখা যাচ্ছে, ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ব্যাংক আমানতের প্রকৃত সুদহার ছিল শূন্য দশমিক ১ শতাংশ। মার্চে তা শূন্যের কোঠায় নামার পর ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত প্রকৃত সুদহার ঋণাত্মক। ২০২২ সালের আগস্ট ও ২০২৩ সালের মে মাসে তা সর্বোচ্চ মাইনাস ৫ দশমিক ৫ শতাংশ পর্যন্ত নেমেছিল। এরপর মূল্যস্ফীতির হারের সঙ্গে তা সব সময় ওঠানামা করেছে। সর্বশেষ ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তা ছিল মাইনাস ৪ দশমিক ৭ শতাংশ।

অনুষ্ঠানটি সিপিডির বিশেষ ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমানের সঞ্চালনায় আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, সংসদে বিরোধী দলীয় উপনেতা ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, সাবেক পরিকল্পনা মন্ত্রী এমএ মান্নান, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ, সিনিয়র সাংবাদিক ইসতিয়াক আহমেদ।

(ঢাকাটাইমস/২৩মে/টিএ/এমআর)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
গোপালগঞ্জ ইস্যুতে গুজবে বিভ্রান্ত না হয়ে সহযোগিতার আহ্বান সেনাবাহিনীর
যাত্রাবাড়ীতে ৪৮ কেজি গাঁজাসহ তিন মাদক কারবারি গ্রেপ্তার, পিকআপ জব্দ
নির্বাচনকে ব্যাহত করতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি পরিকল্পিত: বিএনপি
কক্সবাজারের যৌথ অভিযানে আগ্নেয়াস্ত্রসহ ১ জন আটক
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা