কোটি টাকার সেতু আছে, রাস্তাও আছে, নেই শুধু চলাচলের উপায়

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ২৩ মে ২০২৪, ১৭:৫৪| আপডেট : ২৩ মে ২০২৪, ১৮:১০
অ- অ+
এভাই বাঁশের মই বেয়ে সেতুতে উঠতে হয়

চার কোটি টাকা ব্যয়ে নদীর ওপর নির্মাণ করা হয় সেতু। দুই রাস্তাও আছে। কিন্তু নেই কোনো সংযোগ। ফলে বাঁশের মই বেয়ে উঠতে হয় কোটি টাকার এই সেতুতে। মানুষ চলাচলের অনুপযোগী এই সেতুতে চলে গোবর শুকানোর কাজ। দু-চারজন সেতু পারাপার হতে চাইলেও ঝুঁকি নিয়েই চলতে হয়।

অদ্ভুত এই সেতুটি টাঙ্গাইল শহরের কচুয়াডাঙ্গা চরপাতুলী এলাকায় লৌহজং নদীর ওপর তিন বছর আগে নির্মিত হয়। টাঙ্গাইল পৌরসভার অর্থায়নে সেতুটি নির্মাণ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সনি এন্টারপ্রাইজ।

সেতু নির্মাণ হলেও দুই পাশের সংযোগস্থলে মাটি না থাকায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে হাজার হাজার মানুষকে। অথচ দুই পাশেই চলাচলের উপযোগী রাস্তা রয়েছে।

রাস্তার সঙ্গে সেতুর সংযোগ না থাকায় কোনো ধরনের যানবাহন সেতুতে উঠতে পারে না। ফলে পণ্য পরিবহন করা যাচ্ছে না। সেতুতে স্থানীয়দের কেউ কেউ গোবর শুকাচ্ছেন।

সেতুর দুই পাশে রাস্তার সঙ্গে সংযোগ নেই

সরেজমিনে দেখা যায়, দুই পাশে সড়ক থাকলেও অকেজো অবস্থায় পরে রয়েছে সেতুটি। স্থানীয় ও পথচারীরা ঝুঁকি নিয়েই পার হচ্ছেন। সেতুর দুই পাশে ময়লা-আবর্জনা ফেলা হয়েছে। এতে করে দুর্গন্ধে স্থানীয় বসবাসকারীদের থাকতে সমস্যা হচ্ছে।

সেতুতে যানবাহন উঠতে না পারায় স্থানীয়দের অধিকাংশকেই দীর্ঘ পথ ঘুরে বিকল্প রাস্তায় চলাচল করতে হয়। দুর্ভোগ লাঘবে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

স্থানীয় ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, স্বাধীনতার পর থেকে দীর্ঘদিন ধরে ওই নদী পারাপারে বাঁশের সাঁকো ছিল ভরসা। জনগণের দুর্ভোগ লাগবে প্রায় ৩ বছর আগে সেতু নির্মিত হলেও এর সংযোগস্থলে মাটি ভরাট করা হয়নি। ফলে মই দিয়ে সেতুর ওপরে উঠতে হচ্ছে স্থানীয় লোকজন ও পথচারীদের।

স্থানীয়দের মতে, সেতুটি নির্মাণ করতে প্রায় ৪ কোটি টাকার উপরে খরচ হয়েছে। কিন্তু এ ব্যাপারে টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র তথ্য দিতে অনীহা প্রকাশ করছেন। ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই সেতু এলাকাবাসীর কোনো কাজেই আসছে না। কোনো ধরনের যানবাহন সেতুতে উঠতে না পারায় পণ্য পরিবহনেও নানা প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হচ্ছে। এতে সাধারণ মানুষ ছাড়াও বিপাকে পড়েছে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরাও। এছাড়াও সেতুতে উঠতে বাঁশ ও কাঠের মই ব্যবহার করায় মাঝে মধ্যেই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা।

স্থানীয়রা বলেন, সেতু চালু না হওয়ার কারণে আমাদের চলাচলে অনেক কষ্ট হচ্ছে। বিশেষ করে রোগী আনা-নেওয়ায় অনেক সমস্যা হচ্ছে। মরদেহ আনা-নেওয়ায়ও সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। সন্ধ্যা হলেই মই দিয়ে সেতুতে উঠতে অনেক সময় দুর্ঘটনা ঘটছে। মাঝেমধ্যে বাঁশ ভেঙে গেলে যাতায়াত পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।

আবির সরকার নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, সেতুর ওপরে মই দিয়ে উঠতে আমাদের অনেক সমস্যা হচ্ছে। অনেক বয়স্ক মানুষে যাতায়াত করতে বেশি দুর্ভোগে পড়ছেন।

স্থানীয় স্কুলের এক সহকারী শিক্ষক বলেন, সেতু নির্মাণ হলেও দু’পাশে মাটি ভরাট করেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। মই দিয়ে সেতুতে উঠতে অনেকের পায়ে লোহার পেরেক ঢুকে আহত হচ্ছেন। পৌরসভার কাছে আবেদন করেও কোনো কাজ হয়নি। রাতের বেলায় চলাচল করতে অনেক সমস্যা হচ্ছে।

স্থানীয় বাসিন্দা লুৎফর রহমান বলেন, সেতুটি দীর্ঘদিন ধরে অকেজো অবস্থায় রয়েছে। এতে করে রোগী আনা-নেওয়ার ক্ষেত্রেও অনেক সমস্যা হচ্ছে। কেউ মারা গেলে লাশ নেওয়ার সময়ও সমস্যায় পড়তে হয়। কী কারণে সেতুটি এভাবে ফেলে রাখা হয়েছে তা আমরা জানি না।

টাঙ্গাইল পৌরসভার ১১নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মেহেদী হাসান আলীম বলেন, ‘মানুষের দাবির প্রেক্ষিতে সেতুটি নির্মিত হয়েছিল। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নির্মাণ কাজ শেষ করলেও সেতুর দুই পাশের অ্যাপ্রোচের মাটি ভরাট করেনি। ঠিকাদার কাজটি ফেলে রেখে চলে গেছে। ঠিকাদারের সঙ্গে একাধিকবার বসার চেষ্টা করলেও কোনো কাজ হয়নি।’

তবে পৌরসভার নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগের বিপরীতে টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র এসএম সিরাজুল হক আলমগীর বলছেন ভিন্ন কথা। তিনি বলেন, ‘ঠিকাদারের জামানত বাজেয়াপ্ত করার জন্য ঢাকায় চিঠি পাঠানো হয়েছে। সেটি হলে আবার টেন্ডার করে সংযোগ সড়ক করে দেওয়া হবে।’

(ঢাকাটাইমস/২৩মে/এসআইএস)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
'সীমান্ত গৌরবে' বিজিবি মহাপরিচালকের শ্রদ্ধা
ডিসেম্বরে নির্বাচন হবে, এমনই বিশ্বাস রাখতে চাই: মির্জা আব্বাস 
স্বাধীনতা দিবসে ঘরে বসেই দেখুন মুক্তিযুদ্ধের সাড়া জাগানো এই সিনেমাগুলো
পুলিশ স্মৃতিসৌধে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী, আইজিপির শ্রদ্ধা
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা