স্বামী দ্বিতীয় সন্তান চাননি, তাই সাত দিনের সন্তানকে ৯ তলা থেকে ফেলে হত্যা করেন মা
স্বামী দ্বিতীয় সন্তান চাননি। কিন্তু এরমধ্যেই জন্ম নিয়েছে দ্বিতীয় সন্তান। তাসনিদ এহসান নামের এই নবজাতকের বয়স ছিল মাত্র সাত দিন। জন্মের পরও স্বামীর অপছন্দের কারণে ছোট্ট এই নবজাতক সন্তানকে হত্যা করেছেন গর্ভধারিণী মা তৃষা আক্তার। নিজের নবজাতক সন্তানকে ৯ তলা থেকে ফেলে হত্যা করেছেন তিনি। বাসার পাশেই ঝোপের মধ্যে পড়েছিল শিশুটির নিথর দেহ।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে তৃষা আক্তার জানান, তাদের একটি ছেলে সন্তান থাকতেও স্বামী দ্বিতীয় সন্তান চাইতেন না। সেই কারণেই তিনি দ্বিতীয় সন্তানকে হত্যা করেছেন।
সংশ্লিষ্ট খবর: ঢামেক চিকিৎসকের নবজাতক সন্তানের মরদেহ মিলল ঝোঁপঝাড়ে
তৃষার স্বামী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. উসমান গণি এ ঘটনায় মামলা করেছেন। এরইমধ্যে থানায় নিয়ে প্রাথমিকের জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে পুলিশের কাছে সন্তান হত্যার কথা স্বীকার করেন তৃষা।
লাশ উদ্ধারের জিজ্ঞাবাদের জন্য তৃষা, তৃষার স্বামী ডা.উসমান গণি, তৃষার বান্ধবীসহ দুই গৃহকর্মীকে থানা নিয়েছিল পুলিশ। তৃষার স্বীকারোক্তির পর বাকিদের ছেড়ে দেওয়া হয়। পরে তৃষাকে একক আসামি করে থানায় মামলা করেন ডা. উসমান।
চাঞ্চল্যকর এই ঘটনাটি ঘটেছিল কিশোরগঞ্জের ভৈরবে। মঙ্গলবার সকাল ১০টায় শহরের কমলপুর নিউ টাউন ফুল মিয়া সিটি এলাকায় একটি ৯ তলা বিল্ডিংয়ের নিচ থেকে শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
মঙ্গলবার এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন কিশোরগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ।
নবজাতককে হত্যার ঘটনায় চিকিৎসক ওসমান গণি বাদী হয়ে স্ত্রী তৃষাকে একমাত্র আসামি করে ভৈরব থানায় হত্যা মামলা করেছেন। আসামি তৃষা বাদি চিকিৎসক ওসমান গণির দ্বিতীয় স্ত্রী।
পুলিশ জানায়, শিশুটির বাবা উসমান গণি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। তার বাড়ি ভৈরব পৌর শহরের ভৈরবপুর উত্তরপাড়ায়। তিনি দুই বিয়ে করেছেন। তার প্রথম স্ত্রীও একজন চিকিৎসক, তিনি ঢাকায় থাকেন। সাড়ে তিন বছর আগে উসমান গণি দ্বিতীয় বিয়ে করেন। দ্বিতীয় স্ত্রীর নাম তৃষা আক্তার।
তৃষার বাবার বাড়ি কুলিয়ারচরের ছয়সূতী গ্রামে। সাত দিন আগে তৃষা একটি ছেলেসন্তানের জন্ম দেন। গণি–তৃষা দম্পতির আরও একটি সন্তান রয়েছে। সন্তানদের নিয়ে তৃষা থাকতেন ভৈরব পৌর শহরের নিউটাউন এলাকার একটি ফ্ল্যাটে। তার সঙ্গে সব সময় থাকেন দুজন গৃহকর্মী ও তৃষার এক বান্ধবী। উসমান গণি সপ্তাহে এক দিন শুক্রবার ভৈরবের একটি বেসরকারি হাসপাতালে রোগী দেখেন। সেদিন দ্বিতীয় স্ত্রীকে সময় দেন। তবে এবার তিনি ঈদও করেন দ্বিতীয় স্ত্রীর সঙ্গে। ঘটনার সময় তিনিও বাসায় ছিলেন।
ভৈরবের এক চিকিৎসক জানিয়েছেন, কুলিয়ারচরের নোয়াগাঁও এলাকার এনায়েত উল্লার মেয়ে তৃষা ভৈরবের একটি প্রাইভেট ক্লিনিকের নার্স ছিলেন। তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। তৃষার নামে ভৈরবে সেন্ট্রাল হাসপাতাল নামে একটি প্রাইভেট ক্লিনিক রয়েছে। বিয়ের পরই তৃষা নার্সের চাকরি ছেড়ে দেন।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ বলেন, এই দম্পতি ভৈরবের কমলপুর নিউটাউন এলাকার একটি এপার্টমেন্টের ৯ তলায় থাকেন। তাদের একটি ছেলে সন্তান থাকায় দ্বিতীয় সন্তান নিতে রাজি ছিলেন না চিকিৎসক ওসমান গণি। কিন্তু তৃষা দ্বিতীয় সন্তানের মা জন্ম দেন। এ নিয়ে প্রায়ই দাম্পত্য কলহ হতো বলে জানিয়েছেন তৃষা। সেই কারণেই তিনি আজ মঙ্গলবার ভোর রাতে ৯ তলা থেকে সাত দিনের শিশুটিকে ফেলে হত্যা করেছেন।
রাতে নবজাতক, নবজাতকের মা তৃষা, তৃষার বান্ধবী সুমাইয়া, গৃহকর্মী শিলা ও মিম এক কক্ষে ছিলেন। তৃষার স্বামী ছিলেন অন্য কক্ষে। রাত আনুমানিক ৩টার দিকে ঘুম থেকে উঠে তৃষা সন্তান নেই বলে চিৎকার করতে থাকলে সবাই খোঁজাখুঁজি করতে থাকেন। কোথাও না পেয়ে ভৈরব থানাকে জানানো হয়।
পরে সকালে বাড়ির পাশের একটি ঝোপ থেকে পুলিশ শিশুটির মৃতদেহ উদ্ধার করে।
(ঢাকাটাইমস/১৮জুন/এসআইএস)
মন্তব্য করুন