এবার সুন্দরবনের মধুর জিআই সনদ নিল ভারত, সরকারের উদাসীনতাকে দুষল সিপিডি

টাঙ্গাইল শাড়ির পর এবার সুন্দরবনের মধুর আন্তর্জাতিক ভৌগোলিক নির্দেশক বা জিআই সনদ নিয়ে গেছে ভারত। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডি বলছে, সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের দায়িত্বহীনতা বা উদাসীনতার কারণে ভারত এককভাবে এই সনদ নিয়ে গেছে। অথচ সুন্দরবনের আয়তন ও মধু উৎপাদনের সিংহভাগ বাংলাদেশের।
বুধবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে সিপিডি কার্যালয়ে ‘সুন্দরবনের মধু এখন ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য’ শীর্ষক ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলা হয়।
সিপিডি জানায়, ওয়েস্ট বেঙ্গল ফরেস্ট ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন ২০২১ সালের ১২ জুলাই সুন্দরবনের মধুর জিআই সনদের জন্য আবেদন করেছিল। চলতি বছরের ২ জানুয়ারি জিআই পণ্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে ভারত। অথচ ২০১৭ সালের ৭ আগস্ট বাগেরহাট জেলা প্রশাসন সুন্দরবনের মধুকে জিআই সনদের স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য শিল্প মন্ত্রণালয়ে আবেদন করে। কিন্তু গত সাত বছরেও সেটা দেওয়া হয়নি।
সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে মধুর জিআই সনদ নিয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সংস্থাটির সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, কয়েক মাস আগে টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই সনদ পেতে কী করতে হবে সেই বিষয়ে নানা পরামর্শ দিয়েছে সিপিডি। সেই অনুযায়ী সরকারের সংশ্লিষ্টরা বেশ কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নিয়েছে। এ জন্য সরকারকে ধন্যবাদ দিতে হয়। কিন্তু টাঙ্গাইল শাড়ির বিষয়টির সুরাহার হওয়ার আগে নতুন করে সুন্দরবনের মধু জিআই সনদ নিয়ে গেছে ভারত। এটি আরও উদ্বেগের বিষয়।
গত ১৬ মে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ বন বিভাগের একটি টুইটের মাধ্যমে সুন্দরবনের মধুর জিআই সনদ নেওয়া বিষয়টি প্রকাশ করা হয় জানিয়ে তিনি বলেন, এরপরই বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। তাই ভারতের সঙ্গে যৌথভাবে জিআইর সুরক্ষার জন্য বাংলাদেশের সম্ভাব্য উপায়গুলো খুঁজে বের করতে হবে। এ ইস্যুতে দুই দেশের ভবিষ্যৎ উত্তেজনা এড়াতে আইনি কাঠামো তৈরি করা উচিত।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, সুন্দরবনের বেশিরভাগ ভূখণ্ড বাংলাদেশের মধ্যে রয়েছে। অতএব বাংলাদেশই সুন্দরবনের মধু আহরণকারী দেশ। বছরে প্রায় ২০০ থেকে ৩০০ টন মধু বন থেকে আহরণ করা হয়। কিন্তু সুন্দরবনের মধু ভারতের জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। মূলত সরকারের গুরুত্বহীনতার কারণে এ সনদ বাংলাদেশের হাতছাড়া হয়েছে।
সিপিডির প্রবন্ধে বলা হয়, বাংলাদেশের পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্ক বিভাগ (ডিপিডিটি) এ বছরের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত ৩১টি জিআই পণ্য তালিকাভুক্ত করেছে। এই তালিকায় সুন্দরবনের মধু অন্তর্ভুক্ত নেই। আরও উদ্বেগের বিষয় হলো, ২০১৭ সালের ৭ আগস্ট বাগেরহাট জেলা প্রশাসন সুন্দরবনের মধুকে জিআই সনদের স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য শিল্প মন্ত্রণালয়ে আবেদন করে। কিন্তু গত সাত বছরে এর কোনো উন্নয়ন হয়নি। দেশের প্রশাসনিক অবহেলার কারণে এটি অর্জিত হয়নি যা একটি বিস্ময়কর ঘটনা।
সিপিডি বলছে, জিআই সনদের জন্য পণ্যগুলোর একটি পূর্ণাঙ্গ এবং পর্যাপ্ত একটি তালিকা করা দরকার। এছাড়া একটি আইনি কাঠামো করতে হবে। এর জন্য বাংলাদেশকে ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি করতে হবে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের মেধাস্বত্ত আইনকে পরিপালন করা এবং দেশের পণ্যগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করা ও ২০১৫ সালের জেনেভার লিসবন আইনের সদস্য হতে হবে। বাংলাদেশ-ভারত উভয়ই জেনেভা আইনে পরিপালন করলে সমস্ত আন্তঃসীমান্ত জিআইগুলোর জন্য আইনের অধীনে যৌথ আবেদন জমা দেওয়ার বিষয়টি সহজ হবে।
ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বা সচিব পর্যায়ের বৈঠকে জিআই সনদ নিয়ে আলোচনা তোলার জন্য পরামর্শ দিয়েছে সিপিডি।
অনুষ্ঠানে অধ্যাপক মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, সুন্দরবনের মধু নিয়ে যে সংকট দেখা দিয়েছে তা দ্বিপাক্ষিক চুক্তির মাধ্যমে সমাধান করা উচিত। যাতে উভয় দেশই এর সুফল পেতে পারে।
তিনি বলেন, জিআই সনদ পাওয়ার পর সেই পণ্যের বিপণন সঠিকভাবে না করা হলে তা লাভজনক হবে না।
ফাহমিদা খাতুন বলেন, ঐতিহ্যবাহী পণ্যগুলোর জিআই সনদ না পেলে সেগুলোকে কখনোই নিজেদের পণ্য বলে দাবি করা যাবে না। পণ্যগুলোকে জিআই সনদের তালিকাভুক্ত করা না হলে তা অন্যরা নিয়ে যাবে।
এর আগে চলতি বছরের ১ ফেব্রুয়ারি ভারতের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ঘোষণা করেছে যে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য হ্যান্ডলুম উইভারস কো-অপারেটিভ সোসাইটি ‘বাংলার টাঙ্গাইল শাড়ি’ নামে টাঙ্গাইল শাড়ির জন্য জিআই সনদ পেয়েছে।
(ঢাকাটাইমস/২৬জুন/ইএস)

মন্তব্য করুন