পাবনা-৫: জামায়াতকে ছেড়ে দেওয়া আসন পুনরুদ্ধারে শিমুল বিশ্বাসেই ভরসা বিএনপির!

আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে সারা দেশের মতোই আলোচনায় সরগরম হয়ে উঠছে পাবনার রাজনৈতিক অঙ্গন। বিশেষ করে পাবনা-৫ বা পাবনা সদর আসনকে ঘিরে জল্পনা-কল্পনা ও ভোটের জটিল সমীকরণটা বেশি। একসময়ের জোটের মিত্র জামায়াতে ইসলামী এবার বিএনপি মুখোমুখি, যা এই আসনের নির্বাচনী লড়াইকে এক নতুন মাত্রা দিয়েছে।
এই সমীকরণের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার বিশেষ সহকারী, পাবনার মাটিতে বেড়ে ওঠা রাজনীতিবিদ, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস। অন্যদিকে, নিজেদের পুরোনো দুর্গ ফিরে পেতে মরিয়া জামায়াতে ইসলামী।
কেমন হবে এই লড়াই? কে এগিয়ে? কে পিছিয়ে? পাবনা-৫ আসনের আগামী দিনের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ কোন দিকে যাবে?
পাবনা-৫ আসনে বিএনপি থেকে শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসের মনোনয়ন যে প্রায় নিশ্চিত, তা নিয়ে কোনো সংশয় নেই। কিন্তু কেন তাকে ঘিরে এত আলোচনা? কেন তাকে বলা হচ্ছে এবারের নির্বাচনের ‘হেভিওয়েট’ প্রার্থী?
প্রথম এবং প্রধান কারণ হলো, তিনি বিএনপির কেন্দ্রীয় রাজনীতির অন্যতম এক নিয়ন্ত্রক। বিএনপির চেয়ারপার্সনের বিশেষ সহকারী হিসেবে তিনি সারা দেশের রাজনীতিতেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। ফলে, বিএনপি যদি নির্বাচনে জিতে ক্ষমতাসীন হয়, পাবনায় নির্বাচনী এলাকার উন্নয়নের জন্য জাতীয় পর্যায়ে দর কষাকষির ক্ষেত্রে তার অবস্থান থাকবে অত্যন্ত শক্তিশালী। পাবনার মানুষ এমন একজন নেতাকেই সংসদে দেখতে চায়, যার কণ্ঠস্বর ঢাকার ক্ষমতার কেন্দ্রে প্রভাব ফেলবে।
দ্বিতীয়ত, শিমুল বিশ্বাসের ব্যক্তিগত ইমেজ ও জনপ্রিয়তা। তিনি পাবনার সন্তান। এলাকার মানুষের সাথে তার নাড়ির সম্পর্ক। রাজনৈতিক পরিচয় ছাপিয়েও একজন সজ্জন ও কর্মীবান্ধব নেতা হিসেবে তার পরিচিতি রয়েছে। তৃণমূলের নেতাকর্মীদের কাছে তিনি কেবল একজন নেতা নন, বরং একজন অভিভাবক। সম্প্রতি পাবনা জেলা বিএনপির রাজনৈতিক কার্যক্রম সমন্বয়ের দায়িত্ব পাওয়ার পর তিনি সংগঠনকে আরও শক্তিশালী ও ঐক্যবদ্ধ করেছেন।
এদিকে জামায়াতে ইসলামীর একটি ঐতিহাসিক ভিত্তি রয়েছে পাবনা-৫ আসনে। ১৯৯১ সালে এককভাবে এবং ২০০১ সালের জোটগত নির্বাচনে এই আসনে জয়ী হন জামায়াতের মাওলানা আবদুস সুবহান। ২০০৮ সালেও বিএনপি-জামায়াত জোটের প্রার্থী ছিলেন তিনি। এ কারণেই জামায়াত এই আসনটিকে নিজেদের দুর্গ মনে করে।
তবে এখানে জামায়াতের নেতিবাচক হলো একাত্তরে তাদের ভূমিকা। একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেয়া দণ্ড মাথায় নিয়ে ২০২০ সালে কারাগারে মারা গেছেন মাওলানা আব্দুস সুবহান।
এ ছাড়া সময় বদলেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ১৯৯১ বা ২০০১ সালে বিএনপির ভোটের ওপর নির্ভর করেই জয় পেয়েছিল জামায়াতে ইসলামী। তখন দলটির প্রার্থীও ছিলেন শক্তিশালী কেন্দ্রীয় নেতা নেতা মাওলানা আবদুস সুবহান। এখানে দলের পাশাপাশি তার ব্যক্তিগত ভোটব্যাংকও ছিল।
এবার জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী মাওলানা ইকবাল হোসাইন। তিনি মাওলানা আব্দুস সুবহানের মতো শক্তিশালী প্রার্থী নন। তার প্রার্থিতা নিয়ে দলের ভেতরেও অসন্তোষ আছে। এই আসনে জামায়াতের নিজস্ব ভোটব্যাংক থাকলেও তা জয়ের জন্য পর্যাপ্ত কি না, এ নিয়ে সন্দেহ আছে।
তাহলে ভোটের চূড়ান্ত সমীকরণে কে এগিয়ে থাকবে? বিএনপি না জামায়াত? বিশ্লেষকরা বলছেন, এই লড়াইয়ে ব্যক্তিগত যোগ্যতায় শিমুল বিশ্বাস পরিষ্কার ব্যবধানে এগিয়ে। তার জাতীয় পরিচিতি, রাজনৈতিক প্রজ্ঞা এবং এলাকার মানুষের সাথে তার গভীর সংযোগ তাকে জামায়াতের প্রার্থীর চেয়ে অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য করে তুলেছে।
পাবনার সাধারণ ভোটাররা এমন একজনকেই বেছে নিতে চাইবেন, যিনি নির্বাচিত হলে এলাকার জন্য দৃশ্যমান কাজ করতে পারবেন। এছাড়া এবার ভোটের মাঠে আরেক বড় দল আওয়ামী লীগ নেই। আওয়ামী লীগ সমর্থকদের অর্ধেকও যদি ভোটকেন্দ্রে যায়, তাহলে তাদের ভোটও যেতে পারে বিএনপির প্রার্থীর ঘরে। কারণ এই দলের সমর্থকরা কখনো জামায়াতের প্রার্থীকে ভোট দেবে না বলে মিথ আছে রাজনৈতিক অঙ্গনে।
সব মিলিয়ে, পাবনা-৫ আসনের আগামী নির্বাচনী লড়াই হতে যাচ্ছে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। তবে ওপরের সমীকরণ বিবেচনায় পাল্লা ঝুঁকে রয়েছে বিএনপির দিকেই। শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসের ব্যক্তিগত ক্যারিশমা, তার রাজনৈতিক দূরদর্শিতা এবং দলের শক্তিশালী সাংগঠনিক ভিত্তিই তাকে এই লড়াইয়ে চালকের আসনে বসিয়েছে।
১৯৯৬ সালের ১২ জুনের নির্বাচনে এই আসনে জয়ী হয়েছিল বিএনপি। তিরিশ বছর পর সেই আসন পুনরুদ্ধারে তাই শিমুল বিশ্বাসেই ভরসা রাখছে দেশের অন্যতম বৃহৎ দলটি।
(ঢাকাটাইমস/২২আগস্ট/মোআ)

মন্তব্য করুন