পলাতক আ.লীগের রাজনীতির কেন্দ্র নিউ টাউন, ক্ষমতা পুনরুদ্ধারের ছক কষছেন নেতারা

বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ২১ আগস্ট ২০২৫, ১৯:১৭| আপডেট : ২১ আগস্ট ২০২৫, ১৯:২২
অ- অ+

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতা। ব্যস্ত এই মহানগরীর বুকে গড়ে উঠেছে আরেক শহর, নিউ টাউন। চওড়া রাস্তা, উঁচু উঁচু ভবন, আর ঝাঁ-চকচকে শপিং মল। এই আধুনিকতার আড়ালে নিউ টাউন এখন হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল।

সেখানে কেমন আছেন তারা? কীভাবে দিন কাটান তারা? এ নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে ভারতের সংবাদমাধ্যম দ্য প্রিন্ট।

৫ আগস্ট, ২০২৪। বাংলাদেশে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা প্রবল আন্দোলনের মুখে পতন ঘটে শেখ হাসিনা সরকারের। এরপরই দেশ ছাড়তে শুরু করেন মন্ত্রী, সাংসদ এবং আওয়ামী লীগের শীর্ষ থেকে মাঝারি সারির বহু নেতা। তাদের বেশির ভাগেরই গন্তব্য হয়ে ওঠে সীমান্তপারের এই শহর, কলকাতা। বিশেষ করে নিউ টাউন এলাকা।

দ্য প্রিন্ট-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ এবং ছাত্রলীগের প্রায় দুই হাজার নেতা-কর্মী ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। হাজারো জায়গা থাকতে তারা কলকাতার নিউ টাউনকে বেছে নিলেন কেন?

এর কয়েকটি কারণ রয়েছে। প্রথমত, সাশ্রয়ী ভাড়ায় আধুনিক অ্যাপার্টমেন্ট এবং উন্নত মানের শপিং মলের উপস্থিতি এটিকে একটি আদর্শ আবাসন কেন্দ্রে পরিণত করেছে। দ্বিতীয়ত, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছাকাছি হওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই সুবিধাজনক। এবং তৃতীয় ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ, ভাষা ও সংস্কৃতির মিল, যা তাদের অনেকটাই বাংলাদেশের মতো পরিবেশ দেয়।

এই নেতারা কি সেখানে নিছক ছুটির মেজাজে আছেন? দ্য প্রিন্ট-এর প্রতিবেদন বলছে, ঘটনা ঠিক তেমন নয়। যদিও তাদের দৈনন্দিন জীবনে জিম, শপিং, এমনকি হেয়ার ট্রান্সপ্লান্টের মতো বিষয়গুলোও জায়গা করে নিয়েছে, তবে এর আড়ালে চলছে নিবিড় রাজনৈতিক কার্যকলাপ।

সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এই নিউ টাউন এলাকায় একটি বড় অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া নিয়েছেন। এই অ্যাপার্টমেন্টে তিনি নিয়মিত দলীয় সহকর্মীদের সাথে বৈঠক করেন। শুধু তাই নয়, তাকে প্রায়ই দিল্লি যেতে হয়, যা ভারতের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগের ইঙ্গিত দেয়।

একইভাবে, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক এমপি আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম-সহ আরও অনেক প্রভাবশালী নেতা নিউ টাউনের বিভিন্ন অভিজাত আবাসনে বিলাসবহুল জীবনযাপন করছেন। তাদের নিরাপত্তা, ফ্ল্যাট ভাড়া থেকে শুরু করে যাবতীয় খরচ বহন করার জন্য রয়েছে দলীয় সমর্থকরা।

ভারতে আওয়ামী লীগের একটি গোপন পার্টি অফিসও আছে। কলকাতার উপকণ্ঠে একটি বাণিজ্যিক কমপ্লেক্সের অষ্টম তলায় অবস্থিত এই অফিসে কোনো দলের নাম বা প্রতীক নেই। এই অফিসটিই হয়ে উঠেছে নির্বাসিত নেতাদের বৈঠকের মূল কেন্দ্র। এখানে বসেই তারা বাংলাদেশে মোহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারকে অবৈধ আখ্যা দিয়ে শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তনের পরিকল্পনা করছেন।

প্রাক্তন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাতের মতো নেতারা দিনরাত এক করে দলীয় কাজে ব্যস্ত আছেন। তাদের মূল লক্ষ্য একটাই, দেশে ফিরে ক্ষমতা পুনরুদ্ধার করা। তারা মনে করছেন, দেশে বর্তমান সরকারকে বেকায়দায় ফেলে পরিস্থিতি নিজেদের অনুকূলে আনা সম্ভব। এসব কার্যকলাপ ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর নজরদারিতেই চলছে বলে বিভিন্ন রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।

তবে কলকাতায় আওয়ামী লীগ নেতাদের এই উপস্থিতি একেবারে নিষ্কণ্টক নয়। তাদের এই বিলাসবহুল জীবনযাপন এবং রাজনৈতিক তৎপরতা নিয়ে ভারতের মধ্যেও নানা প্রশ্ন উঠছে। এর মধ্যেই অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশের অভিযোগে কয়েকজন নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত বছরের ডিসেম্বরে সিলেটের চারজন আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ নেতাকে নিউ টাউন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে মেঘালয় পুলিশ । তাদের বিরুদ্ধে মেঘালয়ে হামলা এবং বেআইনি প্রবেশের অভিযোগ ছিল।

দ্য প্রিন্ট-এর রিপোর্ট একটি বিষয় স্পষ্ট করে দিচ্ছে, কলকাতার নিউ টাউন শুধু কিছু মানুষের আশ্রয়স্থল নয়। এটি বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতির এক গুরুত্বপূর্ণ দাবা খেলার বোর্ডে পরিণত হয়েছে। এখানে বসে আওয়ামী লীগের নির্বাসিত নেতারা একদিকে যেমন নিজেদের পুনর্গঠিত করার চেষ্টা করছেন, তেমনই দেশের ক্ষমতা পুনরুদ্ধারের জন্য কৌশল তৈরি করছেন।

তাদের এই চেষ্টা কতটা সফল হবে, ভারত সরকার এই বিষয়ে ভবিষ্যতে কেমন পদক্ষেপ নেবে, এবং বাংলাদেশের রাজনীতিতে এর প্রভাব কতটা সুদূরপ্রসারী হবে, তা সময়ই বলবে।

তবে আওয়ামী লীগ যে কলকাতায় দপ্তর তৈরি করে কার্যকলাপ চালাচ্ছে, সে কথা জানিয়ে গতকাল বুধবার (২০ আগস্ট) ভারতকে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। এর বিরুদ্ধে ভারত ব্যবস্থা না নিলে দুই দেশের সম্পর্কের অবনতি হতে পারে বলে চিঠিতে বলা হয়।

জবাবে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সরকারি ওয়েবসাইটে বিবৃতি দিয়ে জানান, ভারতীয় আইন ভেঙে আওয়ামী লীগের কোনো সদস্য বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে, এমন তথ্য তাদের কাছে নেই।

ভারত সরকার যা-ই বলুক, এটা নিশ্চিত, কলকাতার এই শান্ত, আধুনিক উপশহর নিউ টাউন আপাতত আওয়ামী লীগের রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে।

(ঢাকাটাইমস/২১আগস্ট/মোআ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
পি আর পদ্ধতিতেই আগামী নির্বাচন হতে হবে: শায়খে চরমোনাই
তারেক রহমান শিগগিরই দেশে এসে রাজনীতির হাল ধরবেন: আলাল
রিয়েল সার্ভিস ও চাকরির প্রলোভনে অর্থ আত্মসাৎ চক্রের ৭ সদস্য গ্রেপ্তার
ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে, পরবর্তী সরকারের কোনো পদে আমি থাকব না
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা