‘ঝুলন্ত সিদ্ধান্ত নয়’, কোটা বাতিল না হওয়া পর্যন্ত রাজপথে থাকবেন শিক্ষার্থীরা

সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা বাতিলে সন্তোষজনক নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবেন শিক্ষার্থীরা, যদিও হাইকোর্টের রায়ের ওপর স্থিতাবস্থা দিয়ে আন্দোলনকারীদের ক্লাসে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। শিক্ষার্থীদের অনড় ভাষ্য, ‘ঝুলন্ত সিদ্ধান্ত’ নয়, কোটা বাতিল করতে হবে।
বুধবার সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি পালন করছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। দেশের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও রেলপথ এ কর্মসূচির আওতাভুক্ত থাকবে বলে আগের দিনই জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
এদিন সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন গুরত্বপূর্ণ সড়ক অবরোধ করে রেখেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। এরই মধ্যে বুধবার ধার্য দিনে কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের ওপর শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শিক্ষার্থীরা আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত অর্থাৎ কোটা বাতিলের রায় আসতে হবে। কিন্তু আপিল বিভাগ হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের ওপর স্থিতাবস্থা জারি করেন। চার সপ্তাহ পর আপিল আবেদনের ওপর শুনানি হবে।
আপিল বিভাগের আদেশের পর এ বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন গণমাধ্যমকে বলেন, “এ আদেশের ফলে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করে ২০১৮ সালে সরকারের জারি করা পরিপত্র বহাল থাকছে।”
তিনি বলেন, “আন্দোলন করে কখনো রায় পরিবর্তন করা যায় না। আদালত বলেছেন, প্রতিবাদকারীরা চাইলে আদালতে তাদের বক্তব্য উপস্থাপন করতে পারবেন।”
আপিল বিভাগের আদেশ প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। কোটা নিয়ে ‘কোনো ঝুলন্ত সিদ্ধান্ত’ তারা মানবেন না বলে জানান। তাদের এক দাবি, সব ধরনের বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করতে হবে।
বুধবার এক বিবৃতিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসউদ বলেন, “আমরা কোনো ঝুলন্ত সিদ্ধান্ত মানছি না। আমাদের এক দফা দাবি, ‘সংসদে আইন পাস করে সরকারি চাকরির সব গ্রেডে শুধুমাত্র পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য ন্যূনতম (সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ) কোটা রেখে সব ধরনের বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করতে হবে।”
এ দাবি নির্বাহী বিভাগ থেকে পূরণ না করা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা রাজপথে থাকবেন বলে ঘোষণা দেন তিনি।
অপরদিকে বুধবার দুপুরে সাইন্সল্যাব মোড় অবরোধ করা শিক্ষার্থীদের পক্ষে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঢাকা কলেজ শাখার সমন্বয়ক নাজমুল হাসান বলেন, “আমরা যখন সাইন্সল্যাবের রাস্তায় গরমে ঘাম ঝরাচ্ছি, তখন কোটার যে রায় ছিল আপিল বিভাগ থেকে সেটা বহাল রেখেছে। আমরা ছাত্র সমাজ আপিল বিভাগ থেকে যে রায় দিয়েছে সেই রায়কে প্রত্যাখ্যান করছি। আমরা বলতে চাই, ছাত্র সমাজের প্রাণের এক দফা দাবি হচ্ছে সরকারি চাকরির সব গ্রেডে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ সবকটি জায়গায় অযৌক্তিক কোটা বাতিল করতে হবে। সংবিধানের প্রতি আমরা সম্মান রেখে বলছি, সংবিধানে উল্লেখিত অনগ্রসর গোষ্ঠীর কথা বিবেচনা করে যৌক্তিকভাবে কোটা রেখে সংসদে আইন পাস করতে হবে। যতদিন পর্যন্ত ছাত্র সমাজের এক দফা দাবি আদায় না হবে, আমরা রাজপথ থেকে ফিরে যাব না।”
তিনি অনতিবিলম্বে ছাত্র সমাজের এক দফা দাবি মেনে নিতে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানান। তা না হলে হরতালের মতো কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দেন এই শিক্ষার্থী।
সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে সকাল-সন্ধ্যা ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে বুধবার সকাল থেকে রাজধানীসহ সারা দেশের বিভিন্ন জায়গায় রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন শিক্ষার্থীসহ চাকরিপ্রার্থীরা।
ইতোমধ্যে রাজধানীর শাহবাগ, বাংলামোটর, কারওয়ান বাজার, সাইন্সল্যাব মোড় অবরোধ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সাত কলেজের শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীরা। এতে প্রধান সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।
(ঢাকাটাইমস/১০জুলাই/এমআই/এফএ)

মন্তব্য করুন