তিনবার স্থানান্তর করেও ঝুঁকিতে বিদ্যালয়, আতঙ্ক নিয়ে ক্লাস

সায়েম খান, হরিরামপুর (মানিকগঞ্জ)
  প্রকাশিত : ১৪ জুলাই ২০২৪, ১৩:৫৬| আপডেট : ১৪ জুলাই ২০২৪, ১৬:০৪
অ- অ+

ভবনে ফাটল, কখন যে ভবনটি ভেঙে পড়ে, এই বুঝি ছাদ থেকে পলেস্তারা পড়ল, প্রতিনিয়ত এসব চিন্তা মাথায় নিয়েই শতাধিক শিক্ষার্থীর ক্লাস নিচ্ছেন শিক্ষকেরা। শিক্ষার্থীরাও থাকে আতঙ্কে।

এ অবস্থা মানিকগঞ্জের হরিরামপুরের কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের কোটকান্দি এলাকায় ১৭ নম্বর কাঞ্চনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। ব্রিটিশ শাসনামলে কাঞ্চনপুর এলাকার তৎকালীন জমিদার রাধা গোবিন্দ ১৯৪০ সালে কাঞ্চনপুর গ্রামে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। পঞ্চাশের দশক থেকে অনবরত পদ্মার ভাঙনের কবলে পড়ে কাঞ্চনপুর এলাকা সম্পূর্ণভাবে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়।

পরবর্তী সময়ে ইউনিয়নের গৌরবিরদিয়া এলাকায় বিদ্যালয়টি স্থানান্তর করা হয়। একসময় নদীভাঙনের কবলে গৌরবিরদিয়া এলাকাও নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেলে কোটকান্দি গ্রামে আনা হয় স্কুলটি। সে জায়গাও নদীতে বিলীন হলে ১৯৯৬ সালের দিকে একই গ্রামের শেষ মৌজায় ৮ শতাংশ জায়গা কিনে সেখানে টিনের ঘর নির্মাণ করে বিদ্যালয়টি পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করা হয়।

১৯৯৭ সালের দিকে টিনের ঘরের পরিবর্তে চার রুমবিশিষ্ট একতলা একটি ভবন নির্মাণ করে পাঠদান কার্যক্রম শুরু হয়। দিনে দিনে বিদ্যালয়ের ভবনটি সাদা রঙ বিবর্ণ হতে থাকে এবং আস্তে আস্তে খসে পড়তে থাকে দেয়ালের পলেস্তারা। কোথাও কোথাও ভবনের দেয়াল ও ছাদের নিচের অংশসহ অনেক পিলারেরও পলেস্তারা খসে রড বের হয়েও এসেছে। এছাড়া ভবনের বিমেরও কোথাও কোথাও রড বের হয়ে এসেছে। বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ এ ভবনে আতঙ্ক নিয়ে ক্লাস করছে শতাধিক কোমলমতি শিক্ষার্থী।

বিদ্যালয় সূত্রে আরও জানা যায়, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে পিইডিপি-৩ প্রকল্পের আওতায় ভবনটির দোচালা ৫ রুমের একটি ঘর নির্মাণ করা হলেও অত্যধিক গরমের কারণে শিক্ষার্থীরা ক্লাস করতে না পারায় জরাজীর্ণ ভবনেই ক্লাস করতে দেখা যায়। বিদ্যালয়টির জায়গার অভাবে সামনে নেই আঙিনা, নেই কোনো খেলার মাঠ। বিদ্যালয়ের এক কোণে ছোট পরিসরে নির্মাণ করা হয়েছে শহীদ মিনার। আঙিনা না থাকায় বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের অবসর সময় কাটে ক্লাস রুমেই।

পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র স্বাধীন ইসলাম বলে, ‘আমাদের বিদ্যালয়ের দেয়াল ভেঙে পড়ছে। আমরা অনেক ভয়ে ভয়ে ক্লাস করি। আমাদের ক্লাসরুমে ফ্যান নেই। এতে করে গরমে আমরা ক্লাস করতে পারি না। আমাদের এখানে টয়লেটের সমস্যা। আমরা অনেক সমস্যা নিয়ে এখানে পড়াশোনা করছি। আমাদের খেলাধুলার মাঠ নেই। ক্লাস রুমেই বসে থাকতে হয় সারাক্ষণ।

বিদ্যালয়ের মূল জায়গার অভাব বলে জানান সহকারী শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, ‘মাত্র ৮ শতাংশ জায়গার ওপর বিদ্যালয়টি। জায়গার অভাবে আমরা নতুন ভবন পাচ্ছি না। পুরাতন ঝুঁকিপূর্ণ ভবনেই আমাদের ক্লাস করাতে হচ্ছে। একটা টয়লেট নেই। এলাকার দানবীর ব্যক্তিদের কাছে জোর দাবি করব, ঐতিহ্যবাহী এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি টিকিয়ে রাখার জন্য একটু জায়গার প্রয়োজন। সেটি ব্যবস্থা করে দিলে আমরা অন্যান্য বিদ্যালয়ের মতো ভবন পেতে পারি।‘

প্রধান শিক্ষক মো. আলাউদ্দিন জানান, বছর তিনেক আগে একবার মেরামত করা হলেও এখন ভবনের অবস্থা আরও খারাপ। ২০১৮ সালে একটি টিনশেড ঘর তোলা হলেও সেখানে রোদের সময় বাচ্চারা থাকতে পারে না। তাই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায়ও পুরাতন ভবনেই ক্লাস নেয়া হয়। প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘আমাদের মূলত যে জায়গাটুকু দরকার তা এখানে নেই। ফলে ছাত্র- ছাত্রীরা অনেক কিছু থেকেই বঞ্চিত হচ্ছে। খেলার মাঠ নেই, ওদের চলাফেরার জন্য আঙিনা নেই। কোনো অনুষ্ঠান করতে পারি না। সব মিলিয়ে একটা হ-য-র-ল-ব অবস্থায় আছি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ, বিদ্যালয়টির সার্বিক বিষয়ের ওপর নজর দিয়ে সব সমস্যা সমাধানের যেন উদ্যোগ নেওয়া হয়।’

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার কাজী সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমি এখানে নতুন এসেছি। বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে দুই দিন পরেই প্রধান শিক্ষকদের সাথে মাসিক মিটিং আছে। সেখানে আমি তাদের সাথে কথা বলে বিষয়টি জেনে ব্যবস্থা নেয়ার উদ্যোগ নেব।’

(ঢাকাটাইমস/১৪জুলাই/মোআ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
আবদুল হামিদের দেশ ছাড়ার ঘটনায় তিন উপদেষ্টার তদন্ত কমিটি
ডিবি হারুন ধরাছোঁয়ার বাইরেই থাকলো?
মিরপুরে ট্রাফিক সদস্যদের মাঝে স্যালাইন বিতরণ 
আ.লীগ নিষিদ্ধ হয় নাই, করতে হবে: রাশেদ প্রধান
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা