‘গুলিবিদ্ধ হয়ে ১০ মিনিট পড়ে ছিল সাংবাদিক হাসান মেহেদীর দেহ’

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ২৪ জুলাই ২০২৪, ০৮:৪৯| আপডেট : ২৪ জুলাই ২০২৪, ১৬:০০
অ- অ+

কোটা সংস্কার আন্দোলনের সংবাদ সংগ্রহের সময় রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে গুলিবিদ্ধ হয়ে ঢাকা টাইমসের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক হাসান মেহেদী (৩১) প্রাণ হারিয়েছেন।

গত বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) বিকাল সাড়ে পাঁচটার দিকে যাত্রাবাড়ীর কাজলায় মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারে টোল প্লাজার ওপরের অংশে গুলিবিদ্ধ হন তিনি।

আরও পড়ুন>> সাংবাদিক হাসান মেহেদী হত্যার বিচার দাবি সাংবাদিক নেতৃবৃন্দের

প্রায় ১০ মিনিট পড়ে থাকার পর তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে আনা হলে তার মৃত্যু নিশ্চিত করেন দায়িত্বরত চিকিৎসক।

প্রত্যক্ষদর্শী বাংলাদেশের আলোর স্টাফ রিপোর্টার ইমাম হোসেন ইমন জানান, সারাদিন অন্যান্য সাংবাদিকদের সঙ্গে থেকে পুলিশের পাশে দাঁড়িয়েই সংবাদ সংগ্রহ করেন হাসান মেহেদী। বিকালে পুলিশের একটি এপিসি থেকে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে টিয়ারশেল ও গুলি ছোড়া হচ্ছিল। এসময় হাসান মেহেদী গুলিবিদ্ধ হন। প্রায় ১০ মিনিট তাকে উদ্ধার করে আনা যায়নি। পরে তাকে ঢাকা মেডিকেলে নেওয়া হয়। তার মুখ, গলা ও বুকে শরীরে অসংখ্য ছররা গুলির চিহ্ন দেখা যায়।

ওইদিন সন্ধ্যায় ঢাকা মেডিকেল থেকে ঢাকা টাইমসের সাংবাদিক কাজী মুস্তাফিজ তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন। হাসান মেহেদীর বুকে অসংখ্য গুলির চিহ্ন রয়েছে বলেও জানান তিনি।

গত শুক্রবার সকালে সুরতহাল শেষে হাসান মেহেদীর মরদেহ আনা হয় ঢাকা টাইমস অফিস প্রাঙ্গণে। এসময় সহকর্মীরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। বাদ জুমা রাজধানীর রমনার ইস্কাটন গার্ডেনের ঢাকা টাইমস কার্যালয় চত্বরে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

এতে অংশ নেন ঢাকা টাইমস সম্পাদক আরিফুর রহমান দোলন, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) মহাসচিব দীপ আজাদ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সভাপতি সোহেল হায়দার চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক আকতার হোসেন। জানাজায় ইমামতি করেন হাসান মেহেদীর সহকর্মী ঢাকা টাইমসের সহ-সম্পাদক শাহনূর শাহীন। জানাজা শেষে তার মরদেহে শ্রদ্ধাঞ্জলি দেওয়া হয়।

হত্যাকারীদের বিচার দাবি সাংবাদিক নেতাদের

সাংবাদিক নেতারা গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসান মেহেদীর মৃত্যুর ঘটনার নিন্দা জানান। হত্যাকারীদের বিচার দাবি করেন। তারা বলেন, সাংবাদিক হাসান মেহেদী পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নির্মমভাবে হত্যার শিকার হয়েছেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা অনুযায়ী এটা সুস্পষ্ট হত্যাকাণ্ড। সাংবাদিক নেতারা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে তদন্তপূর্বক দোষীদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনার আহ্বান জানান।

সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে এভাবে একজন সংবাদকর্মীর মৃত্যু কোনোভাবেই মেনে নেওয়ার মতো নয়। এই নির্মমতার প্রতিবাদ জানানোর ভাষা আমাদের জানা নেই। একজন সাংবাদিক ক্ষতিগ্রস্ত হলে সমাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সমাজ ক্ষতিগ্রস্ত হলে গোটা রাষ্ট্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়। রাষ্ট্রের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।

বক্তারা বলেন, সাংবাদিক হলেন সমাজ ও রাষ্ট্রের আয়না। সংবাদকর্মীরা যদি দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় পড়েন, প্রাণ বিসর্জন দিতে হয়, তাহলে রাষ্ট্রের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়। আমরা অবিলম্বে তার হত্যার বিচার দাবি করছি।

ঢাকা টাইমসের সিনিয়র রিপোর্টার হাসান মেহেদী দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বিটে কর্মরত ছিলেন। ঢাকায় তিনি কেরাণীগঞ্জ এলাকায় পরিবারসহ থাকতেন। তার সাত মাস ও চার বছর বয়সী দুই কন্যা শিশু রয়েছে।

হাসান মেহেদীর গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালী জেলার বাউফল উপজেলার হোসনাবাদ গ্রামে। গত শনিবার দুপুরে সেখানে দ্বিতীয় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

হাসান মেহেদীর নিহত হওয়ার ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন ঢাকা টাইমস সম্পাদক আরিফুর রহমান দোলন। তিনি এক শোকবার্তায় বলেন, ‘পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে যাত্রাবাড়ীতে নিহত হলেন ঢাকা টাইমসের সিনিয়র রিপোর্টার সময়ের সাহসী সাংবাদিক প্রিয় সহকর্মী হাসান মেহেদী। কী সান্ত্বনা দেব হাসান মেহেদীর স্ত্রী-সন্তানকে। কী সান্ত্বনা দেবো তার বাবা-মাকে। শোকাহত ঢাকা টাইমস পরিবার। হত্যাকারীর বিচার চাই।’

(ঢাকাটাইমস/২৪জুলাই/ইএস)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
বিশ্ব জাকের মঞ্জিলের বার্ষিক ওরস শুরু শনিবার
আমিরাত সফর শেষে দেশের পথে প্রধান উপদেষ্টা 
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির প্রাইজমানি ঘোষণা, কত পাবে চ্যাম্পিয়ন দল
সিরাজদিখান থানায় হামলা: ৬০ জনকে আসামি করে মামলা, গ্রেফতার ২ 
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা