শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি, অথচ অভিজ্ঞ ডাক্তার হিসেবে দেখছেন রোগী
মাত্র এসএসসি পাস করেই বনে গেছেন অভিজ্ঞ ডাক্তার। রীতিমতো চেম্বার খুলে রোগীদের দিচ্ছেন চিকিৎসা। প্রেসক্রিপশন প্যাডে ডি.এম.এফ (ঢাকা) উল্লেখ থাকলেও সেখানে মেডিসিন, শিশু এবং অর্থো সার্জারি রোগে অভিজ্ঞ কথাটি লেখা রয়েছে। করেন কাটা ছেড়ার চিকিৎসাও। সেলাই প্রয়োজন হলে তা করেন নিজ চেম্বারেই।
এমনই একজন ডাক্তারের খোঁজ পাওয়া গেছে মাদারীপুরের ডাসারে। উপজেলার কমলাপুর গ্রামের নতুন বাজারে চেম্বার খুলে তিনি নিয়মিত রোগী দেখছেন।
তবে উপজেলার কমলাপুর নতুন বাজারের আশেপাশে কোনো ডাক্তার না থাকায় স্থানীয়দের একমাত্র ভরসা হয়ে উঠেছেন তিনি।
এখানে বেশিরভাগ মানুষ কৃষিকাজ করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে। আশেপাশে কোনো ভাল চিকিৎসা কেন্দ্র নেই। ওই এলাকারই বাসিন্দা সোহাগ তালুকদার। এসএসসি পাশ করে ঢাকার একটি প্রতিষ্ঠান থেকে ডি.এম.এফ কোর্স করেন। এরপর মাদারীপুর সদর হাসপাতালে ইন্টার্নি শেষ করে নিজ গ্রামের কমলাপুর নতুন বাজারে চেম্বার খুলে রোগী দেখা শুরু করেন। নিজেকে ডাক্তার হিসেবেই পরিচয় দেন তিনি। তার সাইনবোর্ড ও প্রেসক্রিপশনে মেডিসিন, শিশু এবং অর্থো সার্জারি রোগে অভিজ্ঞ লিখে রেখেছেন। গ্রামের সহজ সরল মানুষ তাকে একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার মনে করে আসেন চিকিৎসা নিতে। সোহাগ ডাক্তার নিজ চেম্বারে বসেই বিভিন্ন রোগের চিকিৎসাসহ কাঁটা-ছেড়া রোগীর চিকিৎসা করেন। তাই স্থানীয় সাধারণ মানুষের একমাত্র ভরসাস্থল হয়ে উঠেছে সোহাগ ডাক্তার।
স্থানীয়রা জানান, এই এলাকার মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রথমেই নিয়ে আসে সোহাগ ডাক্তারের কাছে। সোহাগ ডাক্তারই আমাদের চিকিৎসা করান। বড় ধরনের রোগ হলেই আমরা মাদারীপুর, বরিশাল, ফরিদপুর বা ঢাকায় যাই। কোনো দুর্ঘটনায় কেটে গেলে সোহাগ ডাক্তার সেলাই করে দেয়।
স্থানীয় একজন বলেন, তার এক বছরের বাচ্চার দুটি কিডনি নষ্ট হয়ে গেছে। ২ বছর আগে ঢাকায় চিকিৎসা করিয়েছি। কোনো কাজ হয়নি। এমনকি ঢাকার ডাক্তাররা আমার বাচ্চাকে ফেরত দিয়েছে। বলেছে আর কোনো চিকিৎসা নেই। ঢাকা থেকে এনে সোহাগ ডাক্তারকে দেখাই। সে বলেছে ঢাকায় আমার ছেলেকে ভুল চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। সেই থেকে সোহাগ ডাক্তার আমার ছেলের চিকিৎসা করছে। পুরোপুরি সুস্থ না হলেও আমার ছেলে এখনও বেঁচে আছে।
সোহাগ তালুকদার ওরফে সোহাগ ডাক্তার বলেন, আমার মেডিসন, শিশু এবং অর্থো সার্জারি রোগ বিষয়ে অভিজ্ঞতা আছে বলেই সাইনবোর্ড ও প্রেসক্রিপশন প্যাডে এ সকল রোগে অভিজ্ঞ কথাটি লিখেছি। অনেক ডাক্তারইতো বিভিন্ন রোগের না উল্লেখ করে বিশেষজ্ঞ কথাটি লেখে তাই আমিও লিখেছি। এটা লেখা যদি অন্যায় হয় তাহলে আমি আর লিখব না।
তবে মিথ্যা তথ্য দিয়ে প্রতারণা করে অবৈধভাবে চিকিৎসা সেবা দিলেও কথিত ডাক্তার সোহাগের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়ে উদাসীন রয়েছে জেলা সিভিল সার্জন অফিস।
সিভিল সার্জন ডা. মুনীর আহমদ খান বলেন, ডিএমএফ ডিপ্লোমাকারীদের ডাক্তার লিখতে নিষেধ করা হয়েছে। যেহেতু এ বিষয়ে আদালতে একটি রিট চলছে তাই বলেছি রিটের রায় না হাওয়ার আগ পর্যন্ত তারা যেন তাদের নামের আগে ডাক্তার শব্দটি ব্যবহার না করে। যেহেতু তার ডাক্তার লেখার রাইট নাই তাহলে বিশেষজ্ঞ লেখার প্রশ্নই আসে না।
তবে তাদেরকে কিছু ওষুধ লেখার অনুমতি ও ছোটখাট কিছু সার্জারি করার অনুমতি দেওয়া আছে।
সোহাগ ডাক্তারের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাদের অনুমোদিত কাজের বাহিরে যদি কোনো কাজ করে তাহলে আমরা বিএমডিসিকে অবহিত করব। তবে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের বিষয়টি তিনি এড়িয়ে গেছেন।
ঢাকাটাইমস/৩১জুলাই/পিএস
মন্তব্য করুন