সহকর্মীদের তোপের মুখে শিল্পকলা ছাড়েন পরিচালক জ্যোতি, কাঁদলেন ফেসবুক লাইভে

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
 | প্রকাশিত : ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২২:২০

সহকর্মীদের তোপের মুখে শিল্পকলা একাডেমি থেকে বের হয়ে যান প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক অভিনেত্রী জ্যোতিকা জ্যোতি। মঙ্গলবার দুপুরে শিল্পকলার বর্তমান মহাপরিচালক সৈয়দ জামিল আহমেদের সঙ্গে দেখা করতে গেলে এ ঘটনা ঘটে। অপমানজনক এই ঘটনার পর এই অভিনেত্রী প্রশ্ন তুলেছেন, ‘এই অপমান কি আমার প্রাপ্য ছিল?’

মঙ্গলবার বিকালে ব্যক্তিগত ফেসবুক পেইজের এক লাইভে কাঁদতে কাঁদতে জ্যোতি এমন প্রশ্ন করেন। বলেন, ‘কোনো দলের সমর্থক ছিলাম বলে কি দেশটা আমার নয়? আমি তাহলে কোথায় যাব?’

লাইভের শুরুতেই জ্যোতি বলেন, ‘আমাকে নিয়ে অনেকে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন, আমি ঠিক আছি কি না, তা জানতে চাইছেন। তাদের উদ্দেশ্যে বলছি, আমি ঠিক আছি। তবে মানসিকভাবে আমি একদমই ঠিক নেই। জানি না কতদিন লাগবে এসব কাটিয়ে উঠতে।’

এরপর শিল্পকলা একাডেমিতে যাওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করেন জ্যোতিকা জ্যোতি। তিনি বলেন, ‘দুই বছরের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের মাধ্যমে শিল্পকলা একাডেমিতে পরিচালক হিসেবে কাজ করছিলাম। এখনো আমার মেয়াদ শেষ হয়নি এবং নিয়োগ বাতিলেরও কোনো প্রক্রিয়া এখনো হয়নি। সুতরাং আমার চাকরিটা আছে। গত দুই মাস ধরে দেশে যা চলছে, তারপর থেকে শিল্পকলা একাডেমির অফিসের কাজ মোটামুটি বন্ধই বলা যায়। সপ্তাহখানেক হয়েছে নতুন ডিজি এসেছেন, তাই আমার মনে হয়েছে আমার অফিসে যাওয়া উচিত। যদিও সচিব স্যারের, পরামর্শ ছিল- আমি যাতে এখন শিল্পকলায় না যাই। কিন্তু আমার চাকরি এখনো আছে। আমারও ভালো লাগছিল না, তাই গিয়েছিলাম।’

শিল্পকলা একাডেমিতে অবস্থানকালে সাংবাদিকদের অনেক ফোন কল পেয়েছেন। তা স্মরণ করে জ্যোতি বলেন, ‘শিল্পকলায় যাওয়ার আধা ঘণ্টার মধ্যে অনেক সাংবাদিক ফোন করে জানতে চাচ্ছিলেন, আমার অবস্থা সম্পর্কে। কারণ তারা জানতে পেরেছেন, আমাকে নাকি অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। কিন্তু আমি তখনো বিষয়টি জানি না। আমার আরেক সহকর্মী ছিলেন। তিনি আমাকে বললেন, চলো বেরিয়ে যাই। আমি তাকে বলি, আমার চাকরি তো শেষ হয় নাই, তাহলে আমি কেন যাব? প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে নিয়োগ বাতিল হলে অবশ্যই আমি আর আসব না।’

শিল্পকলা একাডেমির ডিজির সঙ্গে সাক্ষাতের কথা জানিয়ে জ্যোতিকা জ্যোতি বলেন, ‘আমি যখন শিল্পকলায় যাই তখন ডিজি স্যার একটা মিটিংয়ে ছিলেন। এরপর উনি যখন বের হন, তখন আমি ওনার সঙ্গে দেখা করার জন্য বের হই। বেরিয়ে দেখি শিল্পকলায় অনেক লোকজন। অনেকে চেচামেচি করছে। আমি ডিজি স্যারের সঙ্গে দেখা করলাম। স্যার বললেন, দেখেন এই অবস্থা। এর মধ্যে অফিসে কেন এসেছেন? আপনারা বরং চলে যান, পরিস্থিতি সামলাতে দেন। পরে এ বিষয়ে যে সিদ্ধান্ত হয় সে মোতাবেক কাজ করবেন।’

সহকর্মীদের আচরণে বিস্মিত জ্যোতিকা জ্যোতি। তা জানিয়ে এ অভিনেত্রী বলেন, ‘ডিজি স্যারের সঙ্গে কথা বলে লবিতে ফিরে উপস্থিত অন্যদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করলাম। কিন্তু উনারা কোনো কথা বলবেন না। শুনতে পেলাম, আরও লোকজন খবর দেওয়া হয়েছে। আমাদের আটকে রাখবে বা কিছু করবে। আমার খুব অবিশ্বাস্য লাগছিল, সবার মুখ অপরিচিত লাগছিল। কারণ এরাই আমার সহকর্মী ছিলেন!’

অফিসে জ্যোতিকা জ্যোতির ব্যক্তিগত জিনিসপত্র ছিল। চলে আসার সময়ে সেসব জিনিস নিয়ে আসেন। কিন্তু উপস্থিত সহকর্মীদের সেসব জিনিসপত্র দেখিয়ে তারপর শিল্পকলা একাডেমি থেকে বের হ পারেন জ্যোতি।

এ বিষয়ে জ্যোতিকা জ্যোতি বলেন, ‘লবি থেকে আমি আবার আমার অফিস রুমে ফিরে যাই। আমার জিনিসপত্র (মায়ের ছবি, কসমেটিকস) গোছাই। ওই সময়ে আমার জেদ হয়, আমার চাকরি থাকার পরও আমি কেন অফিস ছাড়ব! এরই মধ্যে অনেকে আমার দরজার সামনে জড়ো হয়। তখন আমার সঙ্গে সচিব স্যার ছিলেন। এরপর বের হওয়ার সময়ে আমার জিনিসপত্র দেখিয়ে আমি বের হয়ে আসি।’

এমন সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন এই অভিনেত্রী। প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ‘এতবছর ধরে আমি অভিনয় করছি। কখনো দেশ ছেড়ে বাহিরে চলে যাওয়ার কথাও চিন্তা করিনি। তবুও এই অপমান কি আমার প্রাপ্য ছিল? কোনো দলের সমর্থক ছিলাম বলে কি দেশটা আমার নয়? আমি তাহলে কোথায় যাব? এই প্রশ্ন আপনাদের কাছে রেখে গেলাম।’

এদিকে জ্যোতিকা জ্যোতির ঘটনায় শিল্পকলা একাডেমির সিনিয়র ইনস্ট্রাক্টর আইরিন পারভীন বলেন, ‘তিনি (জ্যোতিকা জ্যোতি) অফিসে আসায় আমরা হতবাক হয়েছি। তিনি কীভাবে অফিসে আসেন, যিনি স্বৈরাচার সরকারের হয়ে কথা বলেছেন। যারা সরাসরি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করতে উৎসাহিত করেছেন, যারা রক্ত ঝরার জন্য দায়ী, তাদের আমরা সহকর্মী হিসেবে চাই না।’

(ঢাকাটাইমস/১৭সেপ্টেম্বর/এলএম/এসআইএস)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিনোদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :