চেন্নাই টেস্ট: বাংলাদেশকে ফলো-অন না করিয়ে ব্যাটিংয়ে নামলো ভারত
চেন্নাই টেস্টে ভারতের বিপক্ষে দুর্দান্ত বোলিং করলেও ব্যাটিংয়ে নেমেই খেই হারিয়ে ফেলেছে বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসে ভারতকে ৩৭৬ রানে অলআউট করে ব্যাটিংয়ে নামে নাজমুল শান্তর দল। তবে ব্যাটিংয়ে নেমে ভারতীয় বোলারদের তোপে তাসের ঘরের মতো ভেঙে গেছে টাইগারদের ব্যাটিং লাইন-আপ। এমনকি ফলো-অন এড়ানোর জন্য নূন্যতম যে রান দরকার ছিল সেটাও করতে পারেনি বাংলাদেশ। ব্যাটিং ব্যর্থতায় বাংলাদেশ থেমেছে ১৪৯ রানে। ফলে ফলে স্বাগতিকদের চেয়ে ২২৭ রানে পিছিয়ে ফলো-অনে পড়ে তারা। তবে বাংলাদেশকে ফলো-অন না করিয়ে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমেছে ভারত।
প্রথম ইনিংসে ভারত করেছিল ৩৭৬ রান। টেস্ট ক্রিকেটের নয়ম অনুযায়ী—প্রথম ইনিংসে ২০০ রান বা তার চেয়ে বেশি রানের লিড পেলে প্রতিপক্ষকে ফলো-অন করানো যায়। ভারত প্রথম ইনিংসে লিড পেয়েছে ২২৭ রানের। তাই ইচ্ছা করলেই বাংলাদেশকে ফলো-অন করাতে পারতেন ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মা। তবে সেটি না করে নিজেরাই নেমেছে ব্যাটিংয়ে।
আজ শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) দ্বিতীয় দিনে ভারতকে ৩৭৬ রানে অলআউট করে ব্যাটিংয়ে নামে বাংলাদেশ।ভারতের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের হয়ে ওপেনিংয়ে নামেন সাদমান ইসলাম ও জাকির হাসান। তবে ইনিংসের প্রথম ওভারেই ভেঙে যায় এই জুটি। জাসপ্রিত বুমরাহর বলে বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফিরে যান সাদমান ইসলাম। তার বিদায়ে দুই রানেই প্রথম উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
সাদমানের বিদায়ের পর ক্রিজে আসেন টাইগার অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। জাকির ও শান্ত মিলে দেখেশুনেই খেলতে থাকেন। তবে তারাও ব্যর্থ হন নিজেদের জুটিকে বেশিদূর নিয়ে যেতে। দলীয় ২২ রানে আকাশ দীপের বলে বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফিরে যান জাকির হাসান। তার বিদায়ে ভাঙে ২০ রানের জুটি।
জাকির হাসানের বিদায়ের পর একই ওভারে সাজঘরে ফিরে যান শূন্য রান করা মুমিনুল ইসলাম। তার বিদায়ে ২৩ রানেই তিন উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে বাংলাদেশ।
২৩ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর জুটি গড়েন মুশফিক ও শান্ত। এই জুটি ৩ রান যোগ করে লাঞ্চ বিরতিতে যায় বাংলাদেশ।
লাঞ্চ বিরতি থেকে ফিরে শুরুতেই সাজঘরে ফিরে যান শান্ত। ৩০ বলে ২০ রান করে মোহাম্মদ সিরাজের বলে সেকেন্ড স্লিপে বিরাট কোহলির হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরে যান শান্ত। তার বিদায়ে ৩৬ রানেই ৪ উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
শান্তর বিদায়ের পর বেশি সময় ক্রিজে থাকতে পারেননি আরেক ব্যাটার মুশফিকুর রহিমও। জাসপ্রিত বুমরাহর বলে লোকেশ রাহুলের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরে যান মুশফিক। তার বিদায়ে ৪০ রানেই ৫ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে বাংলাদেশ।
৪০ রানে ৫ উইকেট হারানোর পর জুটি গড়েন সাকিব আল হাসান ও লিটন দাস। এই দুই ব্যাটারই দেখেশুনে খেলতে থাকেন। তবে দলীয় ৯১ রানে লিটন ফিরে গেলে ৫১ রানে ভাঙে এই জুটি। ৪২ বলে ২২ রান করা লিটন জাদেজার শিকার হয়ে ফিরে যান সাজঘরে। তার বিদায়ে ৯১ রানেই ৬ উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
লিটনের পর সাজঘরে ফিরে যান সাকিব আল হাসানও। তাকেও ফেরান জাদেজা। ৬৪ বলে ৩২ রান করে জাদেজার বলে ঋষভ পান্তের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফিরে যান সাকিব। তার বিদায়ে ৯২ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে ফলো-অনের শঙ্কায় পড়েছ বাংলাদেশ।
এই দুই ব্যাটারের বিদায়ের পর পেসার হাসান মাহমুদকে নিয়ে জুটি গড়েন মেহেদী হাসান মিরাজ। তবে তারাও ব্যর্থ হন নিজেদের জুটিকে বেশিদূর নিয়ে যেতে। চা বিরতির আগে শেষ বলে সেকেন্ড স্লিপে বিরাটের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে সাজঘরে ফিরে যান হাসান মাহমুদ। তার বিদায়ে ৮ উইকেটে ১১২ রান করে চা বিরতিতে যায় বাংলাদেশ।
বিরতি থেকে ফিরে তাসকিনকে নিয়ে লড়াই চালিয়ে যেতে থাকেন মিরাজ। তবে দলীয় ১৩০ রানে তাসকিন ফিরে গেলে ১৮ রানে ভেঙে যায় এই জুটি।
তাসকিনের বিদায়ের পর দশম উইকেটে নাহিদ রানাকে নিয়ে জুটি গড়েন মিরাজ। তবে তাদের ১৯ রানের জুটি শুধু রানের ব্যবধানই কমিয়েছে। দলীয় ১৪৯ রানে নাহিদ রানার বিদায়ে থামে বাংলাদেশের ইনিংস। ফলে ফলে স্বাগতিকদের চেয়ে ২২৭ রানে পিছিয়ে ফলো-অনে পড়ে তারা। তবে বাংলাদেশকে ফলো-অন না করিয়ে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমেছে ভারত।
এর আগে আজ শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) দ্বিতীয় দিনে ব্যাটিংয়ে নামে ভারত। দ্বিতীয় দিনে আজ ব্যাটিংয়ে নামেন আগের দিনের দুই অপরাজিত ব্যাটার রবীন্দ্র জাদেজা ও রবিচন্দ্রন অশ্বিন। তবে দ্বিতীয় দিনে এই জুটিকে বেশিদূর এগোতে দেননি পেসার তাসকিন আহমেদ। তাসকিনের বলে লিটন দাসের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে সাজঘরে ফিরে যান রবীন্দ্র জাদেজা। প্রথম দিন ৮৬ রান করলেও দ্বিতীয় দিনে কোনো রান করার আগেই ফিরে গেলেন প্যাভিলিয়নে। তার বিদায়ে ভাঙে ১৯৯ রানের জুটি।
জাদেজার বিদায়ের পর আকাশ দীপের সঙ্গে জুটি গড়েন রবিচন্দ্রন অশ্বিন। আর তখনই আবারও ভারত শিবিরে আঘাত হানেন তাসকিন। তাসকিনকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে মিড অফে নাজমুল হোসেন শান্তর হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে সাজঘরে ফিরে যান আকাশ দীপ। তার বিদায়ে ৩৬৭ রানে ৮ উইকেট হারায় ভারত।
জাদেজা ও আকাশ দীপকে ফেরানোর পর সেঞ্চুরি তুলে নেওয়া রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে ফেরান তাসকিন। তাসকিনের বলে ডিপ মিড উইকেটে শান্তর হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে সাজঘরে ফিরে যান অশ্বিন। অশ্বিনের বিদায়ে ৩৭৪ রানেই ৯ উইকেট হারায় ভারত।
তাসকিনের পর ভারত শিবিরে আঘাত হানেন আগের দিন চার উইকেট তুলে নেওয়া হাসান মাহমুদ। হাসানের বলে জাকির হাসানের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে সাজঘরে ফিরে যান জাসপ্রিত বুমরাহ। বুমরাহকে ফিরিয়ে ফাইফার পূর্ণ করেন হাসান। ভারতের মাটিতে বাংলাদেশের প্রথম পেসার হিসেবে ৫ উইকেট পেলেন হাসান।
(ঢাকাটাইমস/২০ সেপ্টেম্বর/এনবিডব্লিউ)