লোকসানে চা-শিল্প নিয়ে শঙ্কা
বাজারে বেশি দামে বিক্রি, ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে না বাগান মালিকরা!
দেশে চা-শিল্পে প্রতি বছর রেকর্ড উৎপাদন হলেও লোকসানে ঘুরপাক খাচ্ছে বাগানগুলো। দেশীয় ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতামূলক দামে চা কিনতে অনীহার কারণে প্রতিটি নিলামেই অবিক্রীত থাকছে বিপুল পরিমাণ চা। এর পেছনে সিন্ডিকেটের হাত রয়েছে বলে সন্দেহ অনেকের। তারা বাজারে প্যাকেটজাত চা দু-তিন গুণ দামে বেচলেও ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে না বাগান-মালিকরা।
হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার পাঁচটি চা-বাগানের দায়িত্বশীল ব্যক্তি ও শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমনটাই জানা গেছে।
তারা বলছেন, চার বছর ধরে লোকসান টানতে হচ্ছে বাগানগুলোকে। দিনে দিনে লোকসানের পরিমাণ বাড়ছে। শ্রমিকের মজুরি, গ্যাস, বিদ্যুৎ, আবাসন খরচ, ওষুধসহ বিভিন্ন উৎপাদন খরচ কয়েক গুণ বেড়েছে। কিন্তু সে অনুযায়ী চায়ের বাজারদর বাড়েনি। লোকসানের কারণে ব্যাংকে দেনার পরিমাণ বেড়েছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে যেকোনো সময় বাগান বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
মাধবপুরের পাঁচটি চা-বাগানের মধ্যে তেলিয়াপাড়া ও জগদীশপুর চা-বাগান ন্যাশনাল টি কোম্পানির। আর সুরমা, নোয়াপাড়া ও বৈকণ্ঠপুর চা বাগান ব্যক্তিমালিকানাধীন।
বাগান মালিকপক্ষ বলছেন, উৎপাদন খরচের চেয়ে কম দামে চা-পাতা বিক্রি করতে হচ্ছে তাদের। এতে চা খাতে নতুন বিনিয়োগ কমে যাওয়া, বাগান বিক্রি করে দেয়া চা শিল্পে বড় ক্ষত তৈরি করছে।
বিশ্বের চা উৎপাদনে পঞ্চম বাংলাদেশ। কিন্তু রেকর্ড পরিমাণ উৎপাদন বৃদ্ধিই এখন গলার কাঁটা হয়ে উঠেছে এই শিল্পে।
দেশে প্রতি বছর রেকর্ড উৎপাদনের দিকে যাচ্ছে চা শিল্প। কিন্তু উৎপাদন খরচের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ন্যায্যমূল্য নির্ধারণ হচ্ছে না বলে অভিযোগ চা-বাগান কর্তৃপক্ষের। বরং গত এক যুগে মজুরি, জ্বালানি, প্যাকেজিংসহ বিভিন্ন খরচ বাড়লেও চায়ের দাম তুলনামূলক কমেছে। ফলে লোকসানে ঘুরপাক খাচ্ছেন বাগান মালিকরা।
একই সঙ্গে দেশীয় ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতামূলক দামে চা কিনতে অনীহায় প্রতিটি নিলামেই অবিক্রীত থাকছে বিপুল পরিমাণ চা। দেশে চা ক্রেতাদের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে ইস্পাহানি চা কোম্পানি। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে আবুল খায়ের কনজিউমার প্রডাক্টস লিমিটেড। পরের তিনটি হলো যথাক্রমে মেঘনা টি, ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেড এবং ড্যানিশ ফুডস লিমিটেড।
তেলিয়াপাড়া ন্যাশনাল টি কোম্পানি সূত্রে জানা যায় ২০০২২-২৩ অর্থবছরে চায়ের মোট উৎপাদন ছিল ৫ লাখ আট হাজার কেজি। বাজার দর ছিল ১৮০.০৪ টাকা। কিন্তু এক কেজি চা উৎপাদনে খরচ পড়ে ৩২৬.৭২ টাকা।
ন্যাশনাল টি কোম্পানি লিমিটেডের জিএম এমদাদুল হক (মিঠু) বলেন, ‘এক কেজি চা উৎপাদনে যে খরচ হয় তার অর্ধেক দামেও বিক্রি হয়নি। বছরের পর বছর মালিক পক্ষকে লোকসান দিতে হচ্ছে। উৎপাদন বাড়লেও বাগান কর্তৃপক্ষ ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। উৎপাদন খরচের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সরকার মূল্য নির্ধারণ করে দিলে চা শিল্প আলোর মুখ দেখতে পারবে।’ চায়ের দাম অস্বাভাবিক কমে যাওয়ার বিষয়ে তারা খুব শঙ্কিত বলে জানান তিনি।
এমদাদুল হক (মিঠু) আরও বলেন, ‘যারা বাগানের চা কিনে নিয়ে ব্র্যান্ডিং করে তাদের প্যাকেটজাত চায়ের দাম বেড়েছে, খুচরা পর্যায়ে এককাপ চায়ের দামও বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। কিন্তু উৎপাদকরা লোকসান দিয়ে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে অনেক চা বাগান বন্ধ হয়ে যাবে। বেকার হয়ে পড়বে লাখ লাখ চা শ্রমিক।’
এদিকে চা-শ্রমিক নেতারা মনে করেন, সিন্ডিকেটের কারণে লোকসান গুনতে হচ্ছে বাগান-মালিকদের। তারা বলেন, ‘সিন্ডিকেটের লোকজন বাগান থেকে পাতা নিয়ে প্যাকেটজাত করে বাজারে তিন গুণ দামে বিক্রি করছে। সরকার এসব বিষয়ে দৃষ্টি না দিলে চা-শিল্প ধ্বংসের মুখে পড়বে।’
(ঢাকাটাইমস/২০সেপ্টেম্বর/মোআ