‘অভিনেত্রী আবশ্যক’ বিজ্ঞাপন দেখে ফাঁদে পড়েছিল কিশোরী, বাঁচল যেভাবে
অভিনয় কিংবা মডেলিংয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখতেন কিশোরী নাঈমা (ছদ্মনাম)। একসময় সামাজিক মাধ্যমে চোখে পড়ে `অভিনেত্রী আবশ্যক’ বিজ্ঞাপন। যোগাযোগ করেন বিজ্ঞাপনদাতা রায়হান আহমেদ ওরফে রায়হান হাসিফ নামে এক যুবকের সঙ্গে। অভিনয় শেখার জন্য কিছু টাকা আর বিভিন্ন ধরনের ছবি পাঠালে কিশোরী মেয়েটির অভিনেত্রী হওয়া সময়ের ব্যাপার! রায়হানের এমন মনভোলানো কথায় গলে যায় মেয়েটি। রায়হানকে পাঠিয়ে দেয় টাকা, ব্যক্তিগত ছবি। তবে বিপত্তি বাধে যখন রায়হান তার কাছে ন্যুড ছবি চায়। মেয়েটির খটকা লাগে। একপর্যায়ে বুঝতে পারে সে প্রতারকের খপ্পরে পড়েছে।
নাঈমার মতো অভিনয় বা মডেলিংয়ের স্বপ্নে বিভোর থাকা কিশোরী-তরুণীদের ঘিরে প্রতারক চক্ররা সক্রিয়। তারা ফাঁদে ফেলে এক দিকে আদায় করছে অর্থ, আবার ব্যক্তিগত ছবি নিয়ে তা দিয়ে পরে করছে ব্ল্যাকমেইল। এসব প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়ে সর্বস্ব হারাচ্ছে অনেক অভিনয় জগতে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার স্বপ্নে বিভোর অনেক তরুণী। অনেক সময় সামাজিকভাবে হেয় হওয়া থেকে শুরু করে গোটা জীবনই হুমকির মুখে পড়ে তাদের। কেউ কেউ প্রতারিত হয়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় পরিবার থেকেও।
তবে নিজের বুদ্ধিমত্তায় প্রতারকের খপ্পর থেকে বেঁচে গেছেন নাঈমা। তার বাড়ি ফরিদপুর। মা-বাবার সঙ্গে সেখানেই থাকেন। নাঈমা ফেসবুকে যার বিজ্ঞাপন দেখে যোগাযোগ করেন তার নাম রায়হান। তিনি নিজেকে ঢাকার আশুলিয়ার বাসিন্দা বলে পরিচয় দেন। দাবি করেছিলেন সেখানে নতুনদের অভিনয় শেখানোর জন্য তার অফিসও আছে।
নাঈমার অভিযোগের সূত্রে প্রতিবেদক রায়হানের চারটি ফেসবুক আইডি ঘুরে দেখেছেন। দেখা যায়, ‘অভিনেত্রী আবশ্যক’ ফেসবুকে এমন বিজ্ঞাপন দিয়ে উঠতি বয়সী তরুণীদের টার্গেট করে প্রতারক রায়হান। তার পোস্টে অভিনেত্রী হতে আগ্রহী তরুণীদের কমেন্ট পেলে তিনি ইনবক্সে যোগাযোগ করেন। এরপরই তার প্রতারণার নানা কায়দা শুরু হয়।
রায়হান হাসিফ নামে একটি আইডি থেকে দেওয়া পোস্টে কমেন্ট করেছিলেন নাঈমাও। এরপর ১০ সেপ্টেম্বর রায়হান আহমেদ নামে আরেকটি আইডি থেকে ইনবক্সে তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন রায়হান।
নাঈমার কাছে আগে অভিনয়ের অভিজ্ঞতা আছে কি নাসহ বিভিন্ন বিষয় জানতে চায় রায়হান। এরপর নাঈমার হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর নেন তিনি। অভিনয় সম্পর্কিত নানা বিষয়ে মেসেঞ্জারের পাশাপাশি হোয়াটসঅ্যাপেও কথা বলেন রায়হান। নাঈমার সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিয়ে তাকে অভিনয়ে আরও আগ্রহী করে তুলতে নানা প্রলোভন দেখাতে শুরু করে রায়হান। নাঈমাকে দেওয়া হয় স্বপ্ন পূরণের বার্তা।
এক পর্যায়ে রায়হান নাঈমাকে বলে, একটি সামাজিক নাটকে তাকে প্রধান অভিনেত্রীর সুযোগ দেওয়া হবে। ২০ সেপ্টেম্বর থেকে দশ দিনের শুটিং শুরু হবে। আর সেই জন্য নাঈমাকে ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকার সাভারের আশুলিয়ার জিরাবো পুকুরপাড় এলাকায় তাদের অফিসে আসতে হবে। অভিনয়ের জন্য নাঈমাকে ভালো পারিশ্রমিকও দেওয়া হবে। রায়হানের এসব কথা নাঈমা অনায়াসেই বিশ্বাস করেন এবং রাজি হয়ে যান।
তবে নাঈমাকে কিছু টাকা পাঠাতে হবে। সেই টাকা পরিচালককে চা-পানি খাওয়ানোর জন্য। রায়হানের কথায় কিছু না ভেবে টাকা পাঠিয়ে দেন নাঈমা। এরপর নাঈমাকে পরিচিত এক অভিনেতার নাম বলে তার বিপরীতে ওয়েব সিরিজে কাজ করানো হবে বলেও স্বপ্ন দেখান রায়হান। এবার সেই পরিচালককেও খুশি করতে আরও কিছু টাকা চান তিনি। এবারও তাকে বিকাশে দেওয়া হয় টাকা। এ রকম কয়েক দফায় নাঈমার কাছ থেকে বিকাশে টাকা হাতিয়ে নেন রায়হান।
এই পর্যন্ত খটকা লাগেনি নাঈমার। তবে এরপর কস্টিউমের কথা বলে নাঈমার শরীরের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলা শুরু করেন রায়হান। অভিনেত্রী হতে হলে নাঈমার ন্যুড ছবি লাগবে বলেও জানান। নয়তো সে অভিনেত্রী হতে পারবে না। এবার নাঈমার বুঝতে বাকি থাকে না সে প্রতারকের খপ্পরে পড়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে রায়হানের কাছে পাঠানো টাকা ফেরত চান নাঈমা। টাকা ফেরতের কথা বলে বিকাশ নম্বরও নেন রায়হান। তবে টাকা ফেরত তো দূরের কথা ফেসবুক আইডি আর হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর ডিলিট করে দেন এই যুবক।
অবস্থাসম্পন্ন পরিবারের মেয়ে নাঈমা ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘সামাজিক সম্মানহানির ভয়ে আইনের আশ্রয় নিতে পারছি না। তবে এই প্রতারকদের খপ্পরে পড়ে কারো সুন্দর ভবিষ্যৎ যেন নষ্ট না নয় সে জন্য সচেতন হওয়া জরুরি।’
নাঈমার অভিযোগের বিষয়ে জানতে প্রতিবেদক যোগাযোগ করে রায়হানের সঙ্গে। অভিযোগ শুনে বলেন, ‘এসব আমি ভয় পাই না। আপনারা অভিযোগ পেয়েছেন, এখন যা করার করেন। আমার কিছু যায় আসে না। ওই মেয়েকে বলেন আমার নামে মামলা করতে।’
(ঢাকাটাইমস/২৬সেপ্টেম্বর/এমআই/ডিএম)