বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
অবসর সুবিধা-কল্যাণ ভাতা নিয়ে দুশ্চিন্তা আর কমল না ৬৮ হাজার শিক্ষক-কর্মচারীর
খবরটি মন খারাপ হয়ে যাওয়ার মতো। খবরটি উদ্বেগের এবং দুঃখজনক। দেশের ৬৮ হাজার বেসরকারি শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী বছরের পর বছর তাদের অবসর সুবিধা এবং কল্যাণ তহবিলের ভাতা পাচ্ছেন না।
ঢাকা টাইমস জানতে পেরেছে, এই ভাতা পাওয়ার জন্যে শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বছরের পর বছর দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন কিন্তু তহবিলের অভাবে তাদেরকে খালি হাতেই ফিরতে হয়েছে।
জানা গেছে, ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর থেকে চলতি বছরের ৩১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৩৭ হাজার বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী আবেদন করে অবসর ভাতা পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছেন । এর মধ্যে ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত জমা দেওয়া আবেদনগুলো নিরীক্ষা করে নিষ্পত্তি করা হয়েছে। সর্বশেষ ২০২০ সালের আগস্ট মাস পর্যন্ত জমা হওয়া আবেদনগুলোর বিপরীতে অবসর সুবিধার টাকা দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে কল্যাণ ট্রাস্ট কল্যাণ সুবিধার জন্য ৩১ হাজার আবেদন জমা নিয়েছে কিন্তু সুরহা করতে পারেনি। আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, অবসর ও কল্যাণ সুবিধার টাকার বড় একটি অংশ নেওয়া হয় শিক্ষক-কর্মচারীদের কাছ থেকেই। এ জন্য চাকরিকালীন তাদের মূল বেতনের ৬ শতাংশ প্রতিমাসে কেটে রাখা হয়। কল্যাণ সুবিধার জন্য কাটা হয় মূল বেতনের ৪ শতাংশ। এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রত্যেক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে বছরে ১০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। বাকি টাকা সরকার চাঁদার জমার সুদ থেকে সমন্বয় করে দেওয়া হয়। নিয়মিতভাবে এই তহবিলে কোনো বাজেট সরকার দেয়নি। এটাই হচ্ছে দুঃখের কথা। মাঝে মধ্যে থোক বরাদ্দ হিসেবে সহায়তা দেওয়া হয়। শিক্ষকদের কী মর্যাদা তাহলে? বিগত সরকারের আমলে দেওয়া হয়েছে এই তথ্যই হচ্ছে তার উৎকৃষ্ট প্রমাণ।
অবসর সুবিধা বোর্ড থেকে খোঁজ নিয়ে ঢাকা টাইমস জেনেছে, ৬ শতাংশ হারে টাকা কাটা হচ্ছে এবং এর মাধ্যমে প্রতিবছর ৭০ কোটি টাকা আদায় হয়। এফডিআর লভ্যাংশ হয় প্রতি মাসে তিন কোটি টাকা। প্রতি মাসে গড়ে অবসর সুবিধার জন্য আবেদন জমা পড়ে এক হাজার। যেটি নিষ্পত্তি করতে প্রতি মাসে দরকার ১১৫ কোটি টাকা। এর মানে হচ্ছে প্রতি মাসে ৪২ কোটি টাকার ঘাটতি থাকে বছরে যা ৫০৪ কোটি টাকা। বর্তমানে জমা হওয়া ৩৭ হাজার আবেদন নিষ্পত্তি করতে প্রয়োজন সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা। অবসর সুবিধাবাবদ শিক্ষক-কর্মচারীদের কাছ থেকে যে টাকা কেটে রাখা হয় তা মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের নামে খোলা ব্যাংক হিসাবে জমা হয়। দুঃখজনক হচ্ছে সরকার পরিবর্তনের পর এখনও পর্যন্ত কোনো নিয়মিত মহাপরিচালক নেই। একজন রুটিন দায়িত্ব পালন করছেন। এর ফলে জমা হওয়া সেই টাকা অবসর সুবিধা দেওয়ার কোনো কাজে লাগানো যাচ্ছেনা।
অন্যদিকে শিক্ষকদের কল্যাণ সুবিধার জন্য যত আবেদন জমা আছে তা সমাধানের জন্য প্রয়োজন দুই হাজার ৭০০ কোটি টাকা। সেই তহবিল এখন নেই। এর কি হবে? শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাদের প্রাপ্য টাকা পাবেন না? বা কত বছর পরে পাবেন? কেন তারা চাকরি শেষ হয়ে যাওয়ার সাথে সাথে এটা পাবেন না? শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড এবং শিক্ষকরা হচ্ছে শিক্ষার মেরুদণ্ড। তাহলে সেই শিক্ষকদের এই যে ভোগান্তি, এই ভোগান্তি কি চলতেই থাকবে? এর-কি কোনো সুরহা হবে না?
শিক্ষক নেতা ও বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিম ভুঁইয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল ঢাকা টাইমস। তিনি পরিষ্কার বললেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকার একের পর এক ব্যাংকের তহবিল লোপাট করার মাধ্যমে দেশের অর্থনীতি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাওয়ার কারণেই আজকের এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
তিনি বর্তমান সরকারের কাছে আবেদন জানান, শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিষয়গুলো সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে সমাধানের উদ্যোগ যেন নেওয়া হয়। নিশ্চই বর্তমান সরকার সেটি করবেন। এটি তার বিশ্বাস।
আমাদের বক্তব্য হচ্ছে- শিক্ষক, কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদেরকে রাস্তায় রাস্তায় যেন ঘুরতে না হয়। তারা যেন নিজেদেরকে সমাজের সবচাইতে অবহেলিত শ্রেণি এটা না ভাবেন। গুরুত্বের সঙ্গে তাদের সমস্যাগুলো সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হোক। আশা করি, আমরা এ বিষয়ে ইতিবাচক পদক্ষেপ দেখতে পাব।
(ঢাকাটাইমস/১২অক্টোবর/এআরডি)