ভৈরবের মেঘনা নদীতে ডাকাত আতঙ্ক, ১৬ দিনে তিন ডাকাতি

কিশোরগঞ্জের ভৈরবে মেঘনা নদীতে নৌ-ডাকাতদের উপদ্রব বাড়ছে। গত ১৬ দিনে তিনটি ডাকাতি সংঘটিত হয়েছে। কয়েকটি ট্রলার ও লঞ্চে হানা দিয়ে কয়েক লাখ টাকা ও মালামাল লুট করেছে ডাকাতরা।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নদীতে নৌ-পুলিশের টহল না থাকায় ডাকাতের উপদ্রবে বেড়েছে বলে অভিযোগ মাঝিদের।
রোববার (১৩ অক্টোবর) দুপুরে একদল ট্রলার মাঝি স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে এসব অভিযোগ তুলে ধরেন।
মাঝিরা বলেন, নদীতে ডাকাতির সময় বাধা দিতে গিয়ে কয়েকজন যাত্রী ও মাঝি ডাকাতদের ছুরিকাঘাতে আহত হন। ভৈরব নৌ-থানার পুলিশকে এ ব্যাপারে একাধিকবার মৌখিক অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না বলে জানান মাঝিরা।
এ ছাড়া মেঘনা নদীতে চলাচলকারী যাত্রীবাহী লঞ্চেও ডাকাতির অভিযোগ পাওয়া গেছে।
অভিযোগে জানা গেছে, শনিবার (১২ অক্টোবর) ভোরে ভৈরব থেকে ছেড়ে যাওয়া অরুয়াইলগামী মহিউদ্দিন মাঝির ট্রলারে ডাকাতরা হানা দিয়ে প্রায় দুই লাখ নগদ টাকাসহ মালামাল লুট করে।
এর আগে গত ২৭ সেপ্টেম্বর ভৈরব-সরাইলগামী নুর ইসলাম মাঝির ট্রলারে ডাকাতি সংঘটিত হয়। ডাকাতরা দেড় লাখ টাকার মালামালসহ নগদ টাকা নিয়ে যায়।
গত ২৬ সেপ্টেম্বর ভৈরব-সাচনাগামী এম এল বৃষ্টি নামের একটি লঞ্চ ভৈরব ঘাট থেকে রাতে ছেড়ে বাজিতপুর এলাকার ঘোড়াউত্রা ও কালনী নদীর সংযোগস্থলের সোনা মিয়ার চর নামক স্থানে পৌঁছলে ডাকাতের কবলে পড়ে। ডাকাতরা একটি ইঞ্জিনচালিত ছোট নৌকা নিয়ে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে লঞ্চে উঠে যাত্রীদের উপর হামলা চালায়। তারা যাত্রীদের অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে মারধর করে একাধিক যাত্রীর কাছ থেকে ৪ লাখ ৯২ হাজার টাকাসহ যাত্রীদের মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করে।
এ ব্যাপারে লঞ্চের সুকানী ধীরেন্দ্র দাস বাদী হয়ে ঘটনার পরদিন বাজিতপুর থানায় একটি মামলা করে।
মেঘনা নদীতে প্রতিদিন এ ধরনের ডাকাতির ঘটনা ঘটলেও নৌ-পুলিশ কোনো প্রতিকার করছে না বলে মাঝিদের অভিযোগ।
ব্রাহ্মণবাড়ীয়ার সরাইল থানার ধোবাজাইল, পানিশ্বর, রাজাপুর, আশুগঞ্জ বিদ্যুত তাপকেন্দ্র সংলগ্ন, ভৈরবের মেন্দিপুর, খলাপাড়া, বাজিতপুরের ঘোড়াউত্রা কালী নদীতে ডাকাতির ঘটনা বেশি ঘটছে। লঞ্চ ও ট্রলার প্রতিদিন ভোরে বা দুপুরে যাওয়া আসার পথে নৌ-ডাকাতরা উপদ্রব করে থাকে।
ডাকাতদল নদীতে কুশা ট্রলার বা ছোট ট্রলারে ডাবল ইঞ্জিন লাগিয়ে চলাচল করে। তারা নদীতে নীরব স্থানে উৎ পেতে থাকে। লঞ্চ-ট্রলার কাছে আসা মাত্র দ্রুতগতিতে কুশা ট্রলার নিয়ে হামলা চালায়। অস্ত্রের মুখে মাঝি ও যাত্রীরা ডাকাতদের প্রতিহত করতে পারে না বলে মাঝিরা জানান।
হাওরে চলাচলকারী ট্রলার সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওবায়েদুল্লাহ অভিযোগ করে জানান, গত দেড় মাস ধরে মেঘনা নদীতে নৌ-ডাকাতদের উপদ্রব বেড়েছে। ভৈরব থেকে সরাইল এলাকায় প্রতিদিন ১৮টি ট্রলার চলাচল করে থাকে। গত ১৫-১৬ দিনে তিনটি ডাকাতি হয়েছে। ডাকাতরা লাখ লাখ টাকা, স্বর্ণ, মোবাইল ফোনসহ মালামাল লুট করে নিয়ে গেছে। ভৈরব নৌ-পুলিশকে অবহিত করলেও কোন প্রতিকার পাচ্ছি না।’
ট্রলার মাঝিরা একই অভিযোগ করে বলেন, ডাকাতদের উপদ্রবে তারা অতিষ্ঠ হয়ে গেছেন। প্রতিকার না পেলে তারা ট্রলার পেশা ছাড়তে বাধ্য হবেন বলে জানান ।
বিআইডব্লিউটিএর ভৈরব লঞ্চঘাটের ইজারাদার মো. খবির উদ্দিন খোকা জানান, মেঘনা নদীতে নৌ-ডাকাতদের উপদ্রব বন্ধ না হলে নদীতে চলাচলকারী অধিকাংশ ট্রলার ব্যবসা বন্ধ করে দেবে। এতে হাওরবাসীর কষ্ট ও দুর্ভোগ বাড়বে।
এ বিষয়ে ভৈরব নৌ-থানার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. ফারুক হোসেন জানান, ‘আমি থানায় নতুন যোগদান করেছি। ডাকাতদের উপদ্রবের বিষয়টি অবগত হলাম। থানায় পুলিশের জনবল কম ও নদীতে পাহারার জন্য কোনো যানবাহন নেই। বিষয়টি নিয়ে আমি ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তার সাথে কথা বলব।’
কিশোরগঞ্জ অঞ্চলের নৌ-পুলিশ সুপার মো. আহাদুজ্জামান মিয়া এই প্রতিনিধিকে জানান, ‘এ ধরনের অভিযোগ আমার জানা ছিল না। ভৈরব নৌ-থানায় পুলিশের সংখ্যা কম ও নদীতে পাহারার জন্য স্পিটবোট ছিল না। শনিবার নতুন একটি স্পিডবোট দেয়া হয়েছে নদীর আইনশৃংখলা রক্ষা করতে।’ নদীতে ডাকাতি প্রতিরোধ করতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
(ঢাকাটাইমস/১৩অক্টোবর/মোআ)

মন্তব্য করুন