‘সমাজের ধারা পরিবর্তনে প্রয়োজন সিনেমার স্বাধীনতা ও সীমিত সেন্সরশিপ’

চলচ্চিত্রনির্মাতা রায়হান রাফি বলেন, ‘সিনেমার মাধ্যমে সমাজ ব্যবস্থা পরিবর্তন করা সম্ভব। আমাদের সব ধরনের সিনেমা বানানোর স্বাধীনতা এবং সেন্সরশিপ যদি আরো সহজ করা হতো তাহলে সমাজের ধারা অনায়াসেই পরিবর্তন হয়ে যেত।’
শনিবার বেলা ১১টায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ অ্যাকাডেমিক ভবনের ১৫০ নম্বর কক্ষে চলচ্চিত্রবিষয়ক গবেষণা জার্নাল ও সংগঠন 'ম্যাজিক লণ্ঠন' এ অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে তিনি একথা বলেন।
রায়হান রাফি বলেন, ‘সিনেমা একটি শিল্প, এটি শুধু বিনোদনের জন্য নয়। এর মাধ্যমে প্রতিবাদ করা যায়, সমাজের কথা তুলে ধরা যায়। সিনেমার ভিজ্যুয়াল দিয়ে অনেক কিছু সম্ভব যেখানে মানুষের হৃদয় ছুঁয়ে যায়। এটা আমাদের মৌলিক চাহিদা পূরণ করবে। যখন মানুষ সাহসের সাথে সিনেমা বানাতে পারবে তখন সমাজকে অনায়াসেই পরিবর্তন করা সম্ভব হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘চিত্রনাট্যে সবার একটা নিজস্বতা থাকে, সে ক্যারেক্টারের সাথে নিজেকে মেলায়। কিন্তু চলচ্চিত্রে নিজের গল্প তুলে ধরা হয়। আমাদের দেশের অন্যতম একটা সংকট হলো সিনেমার লেখক নেই। আমরা নিজেরাই গল্প লিখতে হয় সাথে সিনেমাটাও নির্মাণ করতে হয়। যার কারণে ধারাবাহিকতা থাকে না।’
প্রশ্নোত্তর পর্বে চলচ্চিত্রনির্মাতা রাফি বলেন, ‘যে দল ক্ষমতায় আসে তারাই চায় বিরোধীদলের বিরুদ্ধে সিনেমা বানাতে। কোনো দলের সমালোচনা করে সিনেমা বানালে যদি কেউ বাঁধা না দেয় তাহলে বুঝবো আমরা স্বাধীন। আমরা আশাবাদী সেন্সরবোর্ডে প্রক্রিয়াগুলো অনেক সহজ করা হবে, আমরা সিনেমার স্বাধীনতা খুঁজে পাবো।’
রায়হান রাফি নারী বিদ্বেষী, সিনেমায় নারীকে অবমাননা করে উপস্থাপন করে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আসলে এখানেই আমাদের মানসিক সমস্যা। এই যুগে এসে এরকম ভাবার সুযোগ নেই। পরান সিনেমা কেন এতো জনপ্রিয় সবাই দেখেছেন আর দামাল ছবি কেন বেশি দর্শক পায়নি সেটা বুঝতে পারলেই এর উত্তর পরিষ্কার হয়ে যাবে।’
অনুষ্ঠানের শুরুতে শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন ম্যাজিক লণ্ঠনের সহকারী সম্পাদক রিতা জান্নাত। অনুষ্ঠানটির উপস্থাপনায় ছিলেন আরশি জান্নাত ও জরিন আল জান্নাত। এতে প্রধান আলোচককে ম্যাজিক লণ্ঠনের সদস্যরা সম্মাননা, ক্রেস্ট ও উপহারসামগ্রী প্রদান করেন।
'ম্যাজিক লণ্ঠন কথামালা' প্রথমবার অনুষ্ঠিত হয় ২০১২ সালে। এর আগে কথামালায় কথা উপস্থাপনা করেন প্রখ্যাত চলচ্চিত্রনির্মাতা নূরুল আলম আতিক, আবু সাইয়ীদ, গোলাম রাব্বানী বিপ্লব, অভিনয়শিল্পী জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় ও চলচ্চিত্র নির্মাতা কাজী হায়াৎ, অভিনয়শিল্পী রোকেয়া প্রাচী, চলচ্চিত্র পরিচালক মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ও নির্মাতা মেজবাউর রহমান সুমন।
প্রসঙ্গত, 'ম্যাজিক লন্ঠন' সংগঠনটির যাত্রা শুরু করে ২০১১ সালে। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই জানুয়ারি ও জুলাই মাসে এ জার্নালটি নিয়মিত প্রকাশ হচ্ছে। এই জার্নালে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের লেখা চলচ্চিত্র, সংবাদপত্র, টেলিভিশন, নিউ মিডিয়া বিষয়ক প্রবন্ধ-নিবন্ধ ও সাক্ষাৎকার প্রকাশ করা হয়ে থাকে। প্রতি রবিবারে চলচ্চিত্রবিষয়ক ও বুধবারে সাধারণ পাঠচক্র করা হয়। এছাড়া ম্যাজিক লণ্ঠন’র প্রযোজনায় সংগঠনটির সদস্যরা নিয়মিত স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রও নির্মাণ করে থাকে।
(ঢাকা টাইমস/২৬অক্টোবর/এসএ)

মন্তব্য করুন