ওজন কমায় সয়া দুধ! ক্যানসার আর ডায়াবেটিসেরও যম
দুধ বলতে আমরা সাধারণত গরু, মহিষ বা ছাগলের দুধের কথাই বুঝি। কারণ যুগের পর যুগ ধরে এসব গ্রহপালিত প্রাণীর দুধ খেয়েই বড় হয়েছেন আমাদের পূর্বপুরুষেরা। আমরাও তাই খাচ্ছি। ফলে এসব দুধের পুষ্টিগুণ নিয়ে প্রশ্ন তোলা হবে বড়সড় বোকামির সমান।
তবে মুশকিল হলো, গরু, মহিষ বা ছাগলের দুধে রয়েছে ল্যাকটোজ নামক একটি উপাদান। এই উপাদান কিন্তু সবার সহ্য হয় না। তাই তারা এসব দুধের গ্লাসে চুমুক দেওয়ার পরই গ্যাস, অ্যাসিডিটি, বমি, পায়খানার মতো সমস্যার ফাঁদে পড়েন।
এবার প্রশ্ন হলো, ল্যাকটোজ ইনটলারেন্সে ভুক্তভোগী এই মানুষগুলো কি কোনো দুধই খেতে পারবেন না? উত্তর হলো, এই সমস্যায় ভুক্তভোগীরা অনায়াসে সয়াদুধ খেতে পারেন। কারণ এই পানীয়তে ল্যাকটোজ অনুপস্থিত থাকে।
শুধু তাই নয়, এতে মজুত রয়েছে প্রোটিন, ক্যালশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, পটাশিয়াম, ফসফরাসসহ একাধিক জরুরি উপাদানের ভাণ্ডার, যা দেহের হাল-হকিকত বদলে দিতে পারে।
এখন অনেকের মনে প্রশ্ন উঠতে পারে, সয়াদুধ আবার কী? এটি একটি উদ্ভিদ জাত পানীয় যা সয়াবিন ভিজিয়ে এবং পিষে, মিশ্রণটি সিদ্ধ করে এবং অবশিষ্ট কণাগুলোকে ছেঁকে নিয়ে প্রস্তুত করা হয়। এটি তেল, পানি এবং প্রোটিনের একটি স্থিতিশীল দুগ্ধজাত নির্যাস।
চীনে উদ্ভূত সয়াদুধ বিশ শতকের শেষার্ধে ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকায় একটি সাধারণ পানীয় হয়ে ওঠে, যেহেতু এটিকে বিশেষত প্রাণীজ দুধের খুব কাছাকাছি স্বাদ এবং সাম্যাবস্থা দেওয়ার জন্য উৎপাদন করা হয়েছিল। যারা নিরামিষাশী বা ল্যাকটোজ অসহিষ্ণু, তারা গরুর দুধের বিকল্প হিসাবে সয়াদুধ খেতে পারেন।
এবার আসুন আর সময় নষ্ট না করে এই পানীয়ের একাধিক চমকে দেওয়া গুণাগুণ সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
বশে থাকবে কোলেস্টেরল
কোলেস্টেরল একটি ঘাতক অসুখ। এই রোগে আক্রান্ত হলে হার্টের অসুখের ফাঁদে পড়ার আশঙ্কা বাড়ে বৈকি! তাই যেনতেন প্রকারেণ লিপিডকে বশে রাখতে হবে। এই কাজে আপনাকে সাহায্য করতে পারে সয়াদুধ।
কারণ এই দুধে এমন কিছু অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা দেহে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমানোর কাজে সিদ্ধহস্ত। তাই হৃৎপিণ্ডের স্বাস্থ্যের হাল ফেরাতে চাইলে যত দ্রুত সম্ভব এই পানীয়ের সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতিয়ে নিন।
পিছু নেবে না ক্যানসার
ক্যানসার একটি জটিল অসুখ। এই রোগের ফাঁদে পড়লে রোগীর পাশাপাশি তার পরিবারের উপরও বিপদের খাঁড়া নেমে আসে। তাই চিকিৎসকরা সবাইকেই ক্যানসার প্রতিরোধের পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
এই কাজটি করতে চাইলে আপনি নিয়মিত সয়াদুধের গ্লাসে চুমুক দিতেই পারেন। কারণ এই দুধে রয়েছে আইসোফ্ল্যাভনস নামক একটি উপাদান, যা দেহে ক্যানসার কোষের বৃদ্ধি আটকে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। তাই নীরোগ জীবন কাটাতে এই পানীয়ের গ্লাসে চুমুক দিতে ভুলবেন না!
বাড়বে হাড়ের জোর
আজকাল হাড়ের ক্ষয়জনিত সমস্যায় আক্রান্তের সংখ্যা বহুগুণে বেড়েছে। বিশেষ করে, মহিলাদের মধ্যে এই রোগের প্রকোপ বেশি। তবে ভালো খবর হল, এই সমস্যার সহজ সমাধান করে দিতে পারে সয়াদুধ।
কারণ এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালশিয়াম, যা কিনা হাড়ের জোর বাড়ানোর কাজে সিদ্ধহস্ত। তাই সারা জীবন হেঁটে-চলে বেড়ানোর ইচ্ছা থাকলে যত দ্রুত সম্ভব এই পানীয়কে ডায়েটে জায়গা করে দিন।
কমবে ওজন
সয়াদুধে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, খনিজ এবং বায়োঅ্যাক্টিভ উপাদান, যা দীর্ঘক্ষণ পেট ভরে রাখতে পারে। এমনকি এই দুধে ফ্যাট ও কার্বও তেমন নেই। তাই আপনার ওয়েট লস জার্নিতে অনয়াসে এই দুধ জুড়ে দিন। কিছুদিনের মধ্যেই তফাৎটা আঁচ করতে পারবেন।
তবে এই পানীয়ে চিনি মিশিয়ে খেলে কিন্তু ওজন কমবে না। বরং এতে ওজন আরও বাড়বে বৈকি! তাই এই বিষয়টা মাথায় রাখুন।
ডায়াবেটিসের মহৌষধ
সয়াদুধে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন, যা ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। শুধু তাই নয়, নিয়মিত সয়াদুধের গ্লাসে চুমুক দিলে বাড়তে পারে ইনসুলিন সেনসিটিভিটিও। তাই ডায়াবেটিস রোগীরা ডায়েটে এই পানীয়কে জুড়ে দিতেই পারেন।
(ঢাকা টাইমস/০৫নভেম্বর/এজে)
মন্তব্য করুন