যাত্রী সেজে চালককে হত্যার পর ‘রিকশা ছিনতাই যাদের নেশা’

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ১৩:৩৮| আপডেট : ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ১৩:৪১
অ- অ+

গত দুই মাসে গেণ্ডারিয়া থানা এলাকায় দুই চালককে হত্যা করে রিকশা ছিনতাইয়ের ঘটনার রহস্য উদঘাটনসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তারা হলেন- জালাল সরদার ওরফে মাইকেল, ফজলে রাব্বি ওরফে কালা ও মো. ইমরান।

পুলিশ বলছে, জালাল সরদার ওরফে মাইকেল যাত্রী সেজে গভীর রাতে রিকশা ভাড়া করেন। পরবর্তীতে তার সুবিধামতো নির্জন এলাকায় গিয়ে চালককে হত্যা করে রিকশা নিয়ে পালিয়ে যান। পরে সেসব রিকশা কম টাকায় বিক্রি করেন জালাল।

বৃহস্পতিবার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান ওয়ারী বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ছালেহ উদ্দিন।

তিনি বলেন, গত ২১ সেপ্টেম্বর রাত ১২টার দিকে রিকশাচালক জিন্নাহ গেণ্ডারিয়ার জুরাইনের একটি গ্যারেজ থেকে রিকশা নিয়ে ভাড়ার উদ্দেশে বের হন। পোস্তগোলা থেকে অজ্ঞাতনামা দুজন যাত্রী পান। তাদের নিয়ে রাত তিনটার দিকে গেণ্ডারিয়া থানার আঞ্জুমান কবরস্থানের সামনে পৌঁছালে দুই যাত্রী পেছন থেকে তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে গুরুতর জখম করেন। এরপর রিকশাচালকের চিৎকারে আশেপাশের লোকজন এগিয়ে এলে দুই যাত্রী পালিয়ে যান।

উপস্থিত লোকজন ভুক্তভোগী রিকশাচালককে গুরুতর আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। এ ঘটনায় গত ২৩ সেপ্টেম্বর রিকশাচালক জিন্নাহর ছেলে মো. ইউসুফ হোসেন বাদী হয়ে গেণ্ডারিয়া খানায় একটি হত্যা মামলা করেন।

ছালেহ উদ্দিন বলেন, মামলার তদন্ত চলাকালীন গত ১৫ অক্টোবর রাত ২টা ৫২ মিনিটের দিকে গেণ্ডারিয়ার দ্বীননাথ সেন রোডে কচিকাচা বিদ্যানিকেতন গলিতে রিকশাচালক আনোয়ারকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে গলায় আঘাত করে হত্যা করে আরও একটি রিকশা ছিনতাই করে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় গত ২১ অক্টোবর নিহতের চাচাতো ভাই মো. মানিক একটি হত্যা মামলা করেন।

দুটি মামলার ঘটনা বিশ্লেষণের কথা উল্লেখ করে ডিসি বলেন, দুটি ঘটনারই অপরাধের কৌশল একই। পুলিশ নিশ্চিত হয়, একটি নির্দিষ্ট অপরাধী চক্র এই ধরণের অপরাধের সঙ্গে জড়িত। তদন্তকালে ঘটনাস্থলসহ আশেপাশের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে পর্যালোচনাসহ সকল ধরনের তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় দুজন ব্যক্তিকে শনাক্ত করা হয়।

তিনি আরও বলেন, একই অপরাধী চক্র দুটি হত্যার ঘটনার সঙ্গে জড়িত। তদন্তে পুলিশ নিশ্চিত হয়, দুজনের মধ্যে একজনের নাম জালাল সরদার ওরফে মাইকেল। পরবর্তীতে গত ২৪ অক্টোবর ভোর সাড়ে ৫টার দিকে পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া থানা এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জালাল দুটি হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন। তিনি জানান, আঞ্জুমান কবরস্থানের পাশে রিকশাচালক জিন্নাহ হত্যার ঘটনায় তার সঙ্গে ফজলে রাব্বি কালাও ছিল। কিন্তু দ্বীননাথ সেন রোডে কচিকাচা বিদ্যানিকেতন গলিতে রিকশাচালক আনোয়ারকে হত্যাসহ রিকশা ছিনতাইয়ের ঘটনা তিনি একাই করেছেন।

ডিসি ছালেহ উদ্দিন বলেন, জালাল ছিনতাইকৃত রিকশাটি গেণ্ডারিয়ার মো. ইমরান নামে একজনের কাছে ১৩ হাজার টাকায় বিক্রি করে। ২৫ অক্টোবর রাত ১টা ৫৫ মিনিটের দিকে গেণ্ডারিয়া থানা পুলিশ ডিআইটি প্লট এলাকায় অভিযান চালিয়ে নিহত আনোয়ারের ছিনতাই হওয়া রিকশাটি মো. ইমরানের কাছ থেকে উদ্ধার করে এবং ছিনতাই হওয়া রিকশা কেনার অপরাধে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

ডিসি জানান, গ্রেপ্তার জালাল সরদার ওরফে মাইকেল আঞ্জুমান কবরস্থানের সামনে রিকশা ছিনতাই ও রিকশাচালক আনোয়ার হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে ২৫ অক্টোবর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

পরবর্তীতে গোয়েন্দা তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় ৩ নভেম্বর দিনগত রাত ৩টার দিকে গেণ্ডারিয়ার কবরস্থান এলাকায় অভিযান চালিয়ে ফজলে রাব্বি ওরফে কালাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওইদিন তাকে আদালতে পাঠালে তিনি রিকশাচালক জিন্নাহ হত্যার ঘটনায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন এবং এ ঘটনায় মাইকেলের জড়িত থাকার কথাও জানান।

ডিসি জানান, এরপর মাইকেলও জিন্নাহ হত্যার ঘটনার কথা স্বীকার করে ৬ নভেম্বর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। দুটি মামলারই সুষ্ঠু তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। তিনি বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত চাকু মাত্র ১০০ টাকা দিয়ে কিনেছিল। ঘটনার পর পর সেগুলো ফেলে দিয়েছে। অভিযান চালিয়েও সেগুলো উদ্ধার করা যায়নি।

গ্রেপ্তারকৃতরা এর আগেও এমন কোনো ঘটনা ঘটিয়েছিল কি-না জানতে চাইলে ওয়ারী বিভাগের ডিসি বলেন, তারা স্বীকার করেনি। তবে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।

আরেক প্রশ্নের জবাবে ডিএমপির ওয়ারী বিভাগের ডিসি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে ওয়ারী থানা, যাত্রাবাড়ী থানা ও শ্যামপুর থানায় আগুনের ঘটনায় অনেক তথ্য পুড়ে গেছে। কিছু কিছু তথ্য আদালত থেকে নিয়ে এসে কার্যক্রম শুরু করেছি।

যাত্রাবাড়ি ও চিটাগং রোড একটি অপরাধপ্রবণ এলাকা। প্রায়ই চুরি, ছিনইতাই ও হত্যার মতো ঘটনা ঘটছে। এসব নিয়ন্ত্রণে ও অপরাধীদের ধরতে পুলিশ কী কী কার্যক্রম করছে জানতে চাইলে ডিসি বলেন, অবস্থানগত কারণে যাত্রাবাড়ী এলাকায় মানুষের যাতায়াত অনেক বেশি। প্রায় ৪২ জেলার মানুষ যাত্রাবাড়ী এলাকা ব্যবহার করে। ভাসমান জনগণ রয়েছে যাত্রাবাড়ীতে।

তিনি আরও বলেন, ভাসমানদের মধ্যে কিছু অপরাধী থাকতেই পারে। পাশাপাশি অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ও অপরাধ ঘটলে অপরাধীদের ধরতে পুলিশ সম্পূর্ণ নতুন প্রেক্ষাপটে কাজ করছে।

(ঢাকাটাইমস/৭নভেম্বর/এজে)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
এএনএইচ গ্রুপের এমডির বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন ও পিতৃত্ব অস্বীকারের অভিযোগ
মেয়র হিসেবে শপথ নিতে রিট করেননি ইশরাক হোসেন
প্রিমিয়ার ব্যাংক নিমতলা শাখা নতুন ঠিকানায় স্থানান্তরিত
সাময়িক বরখাস্ত হলেন এএসপি রাজন কুমার সাহা
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা