ভেষজ ঔষধি পুদিনা চা মানসিক চাপ উপশম করে

ফিচার ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ১০ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:২৩
অ- অ+

স্বাস্থ্য রক্ষা ও পরিচর্যায় ভেষজ উদ্ভিদ ব্যবহারের ইতিহাস মানব সভ্যতার ইতিহাসের মতোই সুপ্রাচীন। সৃষ্টির শুরু থেকেই পৃথিবীতে মানুষের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে ভেষজ ওষুধ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে আসছে। প্রাচীনকাল থেকে পুদিনা অত্যন্ত কার্যকরী ভেষজ উদ্ভিদ হিসেবে পরিচিত।

প্রাচীনকাল থেকেই ভেষজ ঔষধি হিসেবে পুদিনা বা মিন্ট ব্যবহার হয়ে আসছে। সাধরণত, এই ধরনের গাছগুলো ঠান্ডা একটি অনুভূতির সৃষ্টি করে। খুব সহজেই মাটিতে বা টবে পুদিনার চাষ করা যায়।

পুদিনা পাতা স্বাদ ও গন্ধের জন্য পুদিনার পাতা রান্নায় বিভিন্ন ভাবে ব্যবহার করা হয়। ডেসার্ট বা লাঞ্চ, যে কোনও রান্নাতেই পুদিনা ব্যবহারের চল রয়েছে। পুদিনা বা মিন্ট, যেটি মেন্থ নামেও পরিচিত, এটি লামিয়াসিয়ার পরিবারগুলোর উদ্ভিদের বংশধর। বিশেষ এক প্রকারের হার্ব বা ছোট গাছ হল 'মিন্ট'। পুদিনা এক প্রকারের গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ। কান্ড ও পাতা বেশ নরম। কান্ড বেগুনি রঙের। এই গাছের পাতা ডিম্বাকার, রোমশ, কিনারা খাঁজকাটা ও মিন্টের তীব্র গন্ধযুক্ত হয়।

আয়ুর্বেদ শাস্ত্রমতে এই পাতা বহু রোগ সারানোর কাজে লাগে। তরকারিতে সুগন্ধি হিসাবে একে ব্যবহার করা হয়। ইদানীং সুগন্ধ চিকিৎসাতেও ব্যবহার করা হয় এই ভেষজের নির্যাস থেকে তৈরি তেল।

পুদিনায় থাকে প্রচুর আয়রন, পটাসিয়াম ও ম্যাঙ্গানিজ়। যা হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে এবং ব্রেনের কার্যকারিতা শক্তি বৃদ্ধি করে।

শুধু তাই নয়, পুদিনার চাও এখন বেশ জনপ্রিয়। কারণ পুদিনা দিয়ে তৈরি স্বাস্থ্যকর তা অনেক রোগ থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করে। পুদিনা চা অন্ত্রের স্বাস্থ্য়ের উন্নতি করতে ও ওজন কমাতে সাহায্য করে। পুদিনা আসলে প্রাকৃতিক মিষ্টি। এতে রয়েছে ক্যাফেইন ও দুগ্ধজাত পণ্য থেকে মুক্ত করতে সাহায্য করে। খাবার খাওয়ার পর এই চা পান করলে হজমশক্তি ভালো হয়। এছাড়া মাথাব্যথা ও পেটব্যথা থেকে মুক্তিও পাওয়া যায়। পুদিনায় রয়েছে পর্য়াপ্ত পরিমাণে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল গুণ, যা ভেষজ টুথপেস্ট হিসেবেও ব্যবহার করা হয়। মুখের মধ্য়ে ব্যকটেরিয়া বৃদ্ধি রোধ করতে সক্ষম। খালি পেটে পুদিনা পাতা চিবিয়ে খেলেও ওরাল হাইজিন থাকে সুস্থ।

গবেষকদের মতে, পুদিনার গন্ধের গুণেই অনেক রোগ সেরে যায়। পুদিনা পাতার গন্ধ নাক থেকে মস্তিষ্ক পর্যন্ত পৌঁছলেই রক্ত চলাচল বাড়ে। আর সেই গুণেই মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ে। এ ছাড়াও খাওয়াদাওয়ায় অনিয়ম, কম পানি পান করা, ত্বকের সমস্যা, সব কিছু থেকে মুক্তি দিতে পারে একমাত্র পুদিনা পাতা ও পুদিনা পাতার ভেষজ চা। ম্যাজিকের মতো কাজ করে পুদিনা পাতার চা। নিয়মিত খেতে পারেন পুদিনা পাতার ভেষজ চা।

পুদিনা বা পুদিনা পাতার চা হল একটি ভেষজ চা, যা পুদিনা পাতা দিয়ে তৈরি হয়। একারণে পুদিনার প্রায় সব গুণাগুণ পুদিনা চায়েও রয়েছে। মানুষ পুদিনা এবং এর থেকে তৈরি চা স্বাদের পাশাপাশি ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করে। ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োটেকনোলজি ইনফরমেশন -এর একটি গবেষণা অনুসারে, পুদিনা পাতায় রয়েছে রোম্যারিনিক অ্যাসিড এবং বিভিন্ন ধরনের ফ্ল্যাভোনয়েড। গবেষণায় আরও জানা গেছে, যে পুদিনার অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল, অ্যান্টিভাইরাল, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টিটিউমার এবং অ্যান্টি-অ্যালার্জেনিক প্রভাব রয়েছে।

কঠিন রোগ প্রতিরোধ করতে বেশ উপকারী এই ভেষজ চা। রোজ ১ কাপ করে পুদিনা পাতার চা খান। এথে থেকা মেন্থল ক্যানসার দূর করে। প্রোস্টেট ক্যানসার থেকে দূরে থাকতে পারেন পুদিনার চায়ের গুণে। এই ভেষজ উপায় মুক্তি পান কঠিন রোগ থেকে। রোজ ১ কাপ চা দূর করবে এই কঠিন রোগ।

পুদিনা চায়ের ভেষজ গুণে শরীরের শক্তি বাড়িয়ে তোলে অনেকটাই। এতে রয়েছে কম ক্যালোরি ও কোলেস্টেরল। এছাড়া শরীর থেকে মেদ ঝরাতেও এর গুণের শেষ নেই। পুদিনার চা পান করলে ঘুম হয় গভীর। এছাড়া বাইরের সংক্রমণ থএকে দেহকে রক্ষা করতে এর কোনও বিকল্প নেই। কিছু গবেষণায় জানা গিয়েছে, কোলাই ও লিস্টিরিয়া ইত্যাদি ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি রোধে পিপারমিন্টের প্রভাবের কথা উল্লেখ রয়েছে।

মানসিক চাপ বা মানসিক চাপে ভুগছেন প্রায় সকলে। অফিসে কাজের চাপ, পারিবারিক অশান্তি, টাকা চিন্তা- থেকে আরও কত কী। এই সবের কারণে দেখা দিচ্ছে মানসিক চাপ। এই চাপ থেক মুক্তি পেতে রোজ নিয়ম করে পুদিনা পাতার চা খান। সহজে মিলবে উপকার। আর সমস্যা বেশি আকার নিলে মেডিটেশন করতে পারেন।

মুখের নানান জীবাণু সংক্রমণ থেকে মুক্তি পেতে পারেন পুদিনা পাতার গুণে। এতে রয়েছে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট। যা মুখের ভিতরের ব্যাকেটরিয়া সংক্রমণ থেকে মুক্তি দেয়। যারা নিঃশ্বাসের দুর্গন্ধ জনিত সমস্যায় ভুগছেন তারা এই সমস্যা থেকে সহজে মুক্তি পাবেন। রোজ খেতে পারেন পুদিনা পাতার চা। শরীর থাকবে সুস্থ, তেমনই যে কোনও জীবাণু থেকে মুক্তি পাবেন।

গা-হাতে-পায়ে ব্যথার সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে রোদ পুদিনা পাতার চা খান। অথবা পুদিনা পাতার ডিটক্স ওয়াটার খেতে পারেন। নানা কারমে পেশির ব্যথায় ভুগে থাকেন অনেকে। এর থেকে মুক্তি পেতে খেতে পারেন পুদিনা পাতা। শরীরের যাবতীয় ব্যথা দূর হবে ১ কাপ চায়ের গুণে।

অ্যাজমা দূর করতে খেতে পারেন পুদিনা চা। পুদিনা চার গুণে শরীরের যে কোনও জীবাণু সংক্রমণ দূর হবে। এর গুণে দূর হবে অ্যাজমা। শরীর সুস্থ রাখতে ও অ্যাজমা থেকে মুক্তি পেতে থেকে পারেন পুদিনার চা। রোজ এই চা পানে শরীর থাকবে সুস্থ।

বমি ভাব কমে পুদিনার গুণে। যাদের বমি হওয়ার প্রবণতে থাকে তারা নিয়ম করে এই চা খেতে পারেন। এতে বমির সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন। তেমনই নিয়ম করে পুদিনা পাতার তৈরি ডিটক্স ওয়াটারও খেতে পারেন। এতেও সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন। প্রতিদিন এই ধরনের পানীয় খেতে দূর হবে যে কোনও শারীরিক জটিলতা।

স্মৃতিশক্তি উন্নত হয় পুদিনার গুণে। এই পুদিনা পাতায় থাকা একাধিক উপাদান স্মৃতি শক্তি উন্নত করে থাকে। এই সকল উপাদান মস্তিষ্কের জন্য উপকারী। রোজ ১ কাপ করে পুদিনার চা খান। পুদিনা, মধু দিয়ে চা বানান। এই ভেষজ চা শারীরিক ও মানসিত জটিলতা দূর করে সুস্বাস্থ্য বজায় রাখবে।

উচ্চ রক্ত থেকে মুক্তি পেতে পারেন পুদিনা চা-এর গুণে। এতে রয়েছে পটাশিয়াম। যা উচ্চ রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। রোজ ১ কাপ করে পুদিনা চা খান। অথবা পুদিনার ডিটক্স ওয়াটার খান। এতে মিলবে উপকার। শরীর সুস্থ রাখতে এটি টোটকা বেশ উপকারী।

অনিদ্রা জনিত সমস্যায় ভুগছেন অনেকেই। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে খেতে পারেন পুদিনার চা। পেশি শিথিল হয় এই চায়ের গুণে। তেমনই মানসিক চাপ কমে। এর গুণে দূর হয় অনিদ্রার সমস্যা। এবার থেকে পুদিনা পাতা পানিতে ফুটিয়ে নিয়ে তা ছেঁকে তাতে মধু মিশিয়ে খান। মিলবে উপকার।

পুদিনা চা খাওয়াও একাগ্রতা বাড়াতে সাহায্য করতে পারে। আসলে, পুদিনা চায়ে উপস্থিত মেন্থল কোলিনস্টেরেজ এনজাইমকে বাধা দেওয়ার বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এই প্রভাবের কারণে, পুদিনা চা মেমরি এবং একাগ্রতা উন্নত করতে পারে। এছাড়াও পুদিনা চা আলঝেইমারের (দুর্বল স্মৃতিশক্তি) সমস্যা কমাতেও সাহায্য করতে পারে।

প্রায় প্রত্যেক মানুষই হজমের সমস্যায় ভুগে থাকেন। এই অবস্থায় পুদিনা চা হজমের সমস্যা থেকে কিছুটা মুক্তি দিতে পারে। এ কারণে পাকস্থলীর ভেষজ ওষুধ হিসেবে পুদিনা ব্যবহার করা হয়েছে।

নাক বন্ধ হওয়ার সমস্যা কমাতেও পুদিনা চা ব্যবহার করা যেতে পারে।

মাথা ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে চাইলে অনেকেই চা পান করার পরামর্শ দেন। এক্ষেত্রে পুদিনা চা খাওয়া যেতে পারে। পুদিনা চা স্ট্রেস কমাতে এবং এর ফলে সৃষ্ট মাথাব্যথা এবং মাইগ্রেনের উপশম করতে সক্ষম। পুদিনা একটি মেন্থল যৌগ ধারণ করে, যা অ্যান্টিরিউমেটিক বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন করে। এই বৈশিষ্ট্য মাথাব্যথা কমাতে সাহায্য করতে পারে।

পুদিনা চা মাসিকের ব্যথা এবং ক্র্যাম্প কমাতে সহায়ক। এই বিষয়ে, এনসিবিআই-এর একটি গবেষণা অনুসারে, মাসিকের ক্র্যাম্পের সমস্যায় ভুগছেন এমন ১২৭ জন ছাত্রী পেপারমিন্ট নির্যাস খাওয়ার পরে ব্যথা হ্রাস অনুভব করেছেন। এছাড়াও পুদিনা পাতার বেদনানাশক বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা ব্যথা উপশমে সাহায্য করতে পারে। এই ভিত্তিতে, এটা বলা যেতে পারে যে পিরিয়ডের সময় পুদিনা চা খাওয়া কার্যকর হতে পারে।

ভালো ঘুমের জন্য পুদিনা চাও খাওয়া যেতে পারে। একটি সমীক্ষা বলছে যে পেপারমিন্ট চা মানসিক চাপের কারণে অনিদ্রার সমস্যা কমাতে সহায়ক হতে পারে। হ্যাঁ, মানসিক চাপ উপশম করা এবং ভালো ঘুম দেওয়ার পাশাপাশি, এটি কীভাবে ঘুমের গুণমান বাড়াতে সাহায্য করে তা নিয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন।

পুদিনা পাতার চা রেসিপি

পুদিনা চায়ের উপকারিতা পেতে, এটি কীভাবে তৈরি করতে হয় তাও জানতে হবে। এখানে দেওয়া পুদিনা চা রেসিপির সাহায্যে আপনি সহজেই এটি প্রস্তুত করতে পারেন।

পুদিনাপাতার চায়ের পুষ্টিগুণ: পুদিনা চা খেলেও পুদিনার পুষ্টিগুণ পাওয়া যায়। প্রোটিন-৩.৭৫ গ্রাম, কার্বোহাইড্রেট- ৪.৮৯ গ্রাম, ফাইবার- ৮ গ্রাম, ক্যালসিয়াম- ২৪৩ মিলিগ্রাম, আয়রন-৫.০৮ মিলিগ্রাম, ভিটামিন সি- ৩১.৮ মিলিগ্রাম।

উপকরণ:

পুদিনা পাতা: ১০-১৫টি

পানি: দুই থেকে আড়াই কাপ

মধু: স্বাদমতো

সসপ্যান

প্রণালী:

প্রথমে একটি সসপ্যানে পানি ফুটিয়ে নিন। এবার এতে পুদিনা পাতা দিন। তারপর পানি কিছুক্ষণ ফুটতে দিন। কয়েক সেকেন্ড পর চুলা বন্ধ করে পানি ঢেকে দিন। তারপর কয়েক মিনিট পর এই চা ফিল্টার করুন। আপনি চাইলে স্বাদ অনুযায়ী মধু যোগ করুন। এখন আপনার পুদিনা চা প্রস্তুত, এখন আপনি এটির স্বাস্থ্যকর চুমুক দিতে পারেন। আপনি চাইলে লবণ যোগ করে টক-মসলাযুক্ত পুদিনা চাও বানাতে পারেন।

(ঢাকাটাইমস/১০ নভেম্বর/আরজেড)

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে সংলাপে বসছেন প্রধান উপদেষ্টা
প্রিজাইডিং অফিসারকে লাঞ্ছিতের মামলায় শাহিন চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশ্ব মৃত্তিকা দিবস পালিত
জাবিতে প্রজাপতি মেলা শুক্রবার
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা