তদন্তের নামে কোটি কোটি টাকা ঘুষবাণিজ্য
ডিএসইর সিআরও খায়রুল বাশারের গ্রেপ্তার ও শাস্তি চান বিনিয়োগকারীরা
দেশের প্রধান শেয়ার বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা (সিআরও) খায়রুল বাশার আবু তাহের মোহাম্মদের গ্রেপ্তার ও শাস্তি চান বিনিয়োগকারীরা। ক্ষুব্ধ শেয়ার বিনিয়োগকারীরা এই কর্মকর্তার অপসারণ, গ্রেপ্তার ও ক্ষতিপূরণ চেয়ে ডিএসইতে বিক্ষোভ করেছেন।
তারা বলছেন, খায়রুল বাশারের অনৈতিক কর্মকাণ্ডের কারণে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা হারিয়েছেন ১৬১ কোটি টাকা।
সোমবার বিকালে রাজধানীর নিকুঞ্জে ডিএসই ভবনে যান ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীরা। তারা দাবি করেন, বিতর্কিত সিআরও বাশারের কারণে তাদের বিশাল ক্ষতি হয়েছে। তিনি অনৈতিক সুবিধা নিয়ে ব্রোকারেজ হাউস মশিউর সিকিউরিটজের তদন্ত বন্ধ করে দেন। এতে বিপুল টাকা হারিয়ে ফেলেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।
জানা গেছে, চলতি বছর মশিউর সিকিউরিটিজের সমন্বিত গ্রাহক হিসাবে ১৯ আগস্ট পর্যন্ত প্রায় ৬৯ কোটি টাকা ঘাটতি পাওয়া যায়। তারই পরিপ্রেক্ষিতে ব্রোকারেজ হাউসটির ওপর তদন্তের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এছাড়া ব্রোকারেজ হাউসটির মালিকসহ তিনজনকে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল। আর তদন্ত কমিটিকে দেড় মাসের মধ্যে প্রতিবেদন কমিশনে জমা দিতে বলা হয়। তবে সেটা আর আলোর মুখ দেখেনি। যার পেছন থেকে কলকাঠি নাড়েন সিআরও খায়রুল বাশার আবু তাহের মোহাম্মদ।
সাধারণ বিনিয়োগকারীদের অভিযোগ, খায়রুল বাশার শেয়ার বাজার কেলেঙ্কারির মূলহোতা সালমান এফ রহমানের অন্যতম সহযোগী। খায়রুল বাশারের অনৈতিক কাজে সহযোগিতা করেছেন ডিএসইর আবু তাহের, বজলুর রহমান, জাকির হোসেন, ইকরাম হোসেন, আফজালুর রহমানসহ কয়েকজন দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা। তারা প্রতিটি ব্রোকারহাউজে গিয়ে মাসিক চুক্তিতে টাকা নিয়ে আসেন। বিনিয়োগকারীদের বিপুল আর্থিক ক্ষতির দায় খায়রুল বাশারদের নিতে হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন আন্দোলনরতরা। পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে উঠতে এবং অন্তর্বর্তী সরকারের হাতকে শক্ত করতে এসব দুর্নীতিবাজদের ডিএসই থেকে অপসরণের দাবি জানানো হয়।
আন্দোলনকারীরা বলেন, ‘দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের ডিএসইতে থাকার কোনো যোগ্যতা নেই। তারা যতদিন ডিএসইতে থাকবেন, ততদিন বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্থ হবে।’
আন্দোলনে অংশ নেন- মো. খোরশেদ আলম, লুৎফুল গণি টিটু, সিহাব উদ্দিন, রাশেদুর রহমান, মো. ফজলুল হক, মো. মুশফিকুর রহমান, আহমেদ আলীসহ বেশ কয়েকজন ক্ষতিগ্রস্ত সাধারণ বিনিয়োগকারী।
এদিন সিআরও খায়রুল বাশার ডিএসইতে না থাকায় ক্ষুব্ধ বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে কথা বলেন ডিএসই’র প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) ও ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক স্বাত্তিক আহমেদ শাহ। পরবর্তী পর্ষদ সভায় অভিযোগগুলো তুলে ধরা হবে বলে বিনিয়োগকারীদের আশ্বস্ত করেন ডিএসই’র এই কর্মকর্তা।
এর আগে মশিউর সিকিউরিটিজে ব্যর্থতার দায়ে ২৩ সেপ্টেম্বর খায়রুল বাশারকে শোকজ করে খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন কমিশন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, খায়রুল বাশারের ব্যর্থতায় বিনিয়োগকারীদের ১৬১ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে মশিউর সিকিউরিটিজ। এর মধ্যে গ্রাহকের সমন্বিত হিসাবে ঘাটতি (সিসিএ) ৬৮ কোটি ৫৮ লাখ টাকা এবং শেয়ার বিক্রি করে নিয়েছে ৯২ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। দেশের শেয়ারবাজারের ইতিহাসে একক কোনো ব্রোকারেজ হাউজের এটিই সবচেয়ে বড় জালিয়াতি।
আহমেদ শাহ ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘মশিউর সিকিউরিটিজে ক্ষতিগ্রস্ত কিছু বিনিয়োগকারী সিআরও বাশারসহ কয়েকজনের বিষয়ে অভিযোগ করেছেন। তারা কিছু প্রমাণও দিয়ে গেছেন। তবে এসব বিষয় আমার জানা নেই। বিষয়গুলো পর্ষদে আলোচনা করে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এরইমধ্যে ডিএসই’র চেয়ারম্যানকে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। তিনি বিষয়টি পরবর্তী সভায় উপস্থাপনের জন্য বলেছেন।’
এরইমধ্যে মশিউর সিকিউরিটিজের বিষয়ে বেশ কিছু ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে কমিশন। এর মধ্যে আছে মশিউর সিকিউরিটিজের বিরুদ্ধে ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন, ‘ফ্রি লিমিট’সহ দেওয়া সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করা, পরিচালকদের ব্যাংক ও বিও হিসাব স্থগিত, জড়িত এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের দেশ থেকে পালানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ। এছাড়া তদন্তের পর তাদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে ব্রোকারেজ হাউসটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক, পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার (সিইও) দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পুলিশের বিশেষ শাখা বা এসবিকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা দেওয়া তিনজন হলেন- ব্যবস্থাপনা পরিচালক মশিউর রহমান, তার ছেলে শেখ মোগল জান রহমান ও জিয়াউল হাসান চিশতী। তাদের সবারই ঠিকানা রাজধানীর গুলশান-১–এর ৩৩ নম্বর সড়কের ১১ নম্বর বাড়ি।
ঢাকাটাইমস/১১নভেম্বর/এলএম/এসএস/ইএস
মন্তব্য করুন