ঢাকার খাল পুনরুদ্ধার করে ব্লু নেটওয়ার্ক গড়তে যেসব পরিকল্পনা নিয়েছে ওয়ার্কিং গ্রুপ

পরিবেশবাদী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর রাজধানী ঢাকার খালগুলো দিয়ে ‘ব্লু নেটওয়ার্ক’ করার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছিলেন। যে খালগুলো এখনো উদ্ধার করা সম্ভব, সেগুলো দিয়ে এ নেটওয়ার্ক করা হবে বলে জানিয়েছিলেন তিনি। সেই উদ্যোগের অংশ হিসেবে গঠন করা হয়েছে ১১ সদস্যের ওয়ার্কিং গ্রুপ। সেই গ্রুপটি এবার স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়নের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। শিগগিরই সরজমিন খাল পরিদর্শন করবেন গ্রুপের সদস্যরা।
রিভার অ্যান্ড ডেল্টা রিভার সেন্টারের (আরডিআরসি) প্রাপ্ত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, রাজধানীর ৩০০ কিলোমিটার খালের মধ্যে ১২০ কিলোমিটার বেদখল হয়ে গেছে। এসব জায়গায় বহুতল ভবনও তৈরি হয়েছে। দখলের কারণে কিছু খাল সরু ড্রেনের মতো হয়ে গেছে। বিশেষজ্ঞদের অভিযোগ, সব আবাসন প্রতিষ্ঠান ও প্রভাবশালীরা খালগুলো দখল করে রেখেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রথমে খালের জায়গাগুলো চিহ্নিত করতে হবে যাতে উচ্ছেদ অভিযান চালানো যায়।
এ বিষয়ে ওয়ার্কিং গ্রুপের প্রধান ঢাকার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) পারভেজ চৌধুরী বলেন, “রাজধানীর খালগুলোকে বেআইনি দখল থেকে পুনরুদ্ধার করার পর আমরা ‘ব্লু নেটওয়ার্ক’ গড়ে তোলার পরিকল্পনা করেছি।”
তিনি আরও বলেন, “এটা নিয়ে রাজউক কাজ করেছে, ইতোমধ্যে একটি কনসেপ্ট পেপার, গবেষণা ও সমীক্ষা তৈরি হয়েছে। সব অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করে আমরা স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা তৈরি করতে যাচ্ছি।”
পারভেজ চৌধুরী বলেন, “স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তারা শিগগিরই ব্লু নেটওয়ার্ক বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন এবং মধ্যমেয়াদে পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কিছু বাজেটের প্রয়োজন হবে।”
পারভেজ বলেন, “যদি খালগুলো ভবন ও স্থাপনাসহ দখল হয়ে যায়, তাহলে আমরা দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেব, কারণ এজন্য অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ এবং এ জন্য বাজেট প্রয়োজন হবে।”
রাজধানীর খালের প্রাপ্ত পরিসংখ্যান সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমরা এখন পর্যন্ত সরকারিভাবে ৫০টি খাল থাকার তথ্য পেয়েছি। তবে সংখ্যা বেশি হতে পারে।”
আগামী ২৩ ও ২৪ নভেম্বর ওয়ার্কিং গ্রুপ বৈঠকে বসতে যাচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, “গ্রুপের সদস্যরা শিগগিরই সরজমিন খাল পরিদর্শন করবেন।”
তিনি বলেন, “দুই দলে ভাগ হয়ে খাল পরিদর্শনের পর তারা একটি খসড়া কাজের পরিকল্পনা তৈরি করবেন এবং তারপর খসড়া নিয়ে অংশীজনদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন।”
আগামী ৩০ নভেম্বর নির্ধারিত সময়ের মধ্যেূ চূড়ান্ত কাজের পরিকল্পনা তৈরি করা বলে জানান ওয়ার্র্কিং গ্রুপের প্রধান। এটি করতে যদি আরও সময় প্রয়োজন হয় তাহলে তা নেবেন বলেও জানান তিনি।
গত ৫ নভেম্বর ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনের বিজ্ঞপ্তি দেয় সরকার। চূড়ান্ত কর্মপরিকল্পনা তৈরির ক্ষেত্রে ওয়ার্কিং গ্রুপ সংশ্লিষ্ট উপদেষ্টার মৌখিক নির্দেশনা মাথায় রাখবে বলে জানান তিনি।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঢাকার খালগুলোর স্বাভাবিক প্রবাহ ফিরিয়ে আনতে এবং অবৈধ দখল ও দূষণমুক্ত করার পর খালগুলোকে কেন্দ্র করে ‘ব্লু নেটওয়ার্ক’ গড়ে তুলতে ১১ সদস্যের একটি ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করা হয়েছে। এ গ্রুপটিতে ঢাকার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে (রাজস্ব) আহ্বায়ক করা হয়েছে।
পাশাপাশি কমিটিতে সদস্য হিসেবে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রতিনিধি, অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধি, পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রতিনিধি, নদী রক্ষা কমিশনের প্রতিনিধি, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রতিনিধি, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের একজন করে প্রতিনিধি ছাড়াও রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) প্রতিনিধি, এনজিও বা স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানে প্রতিনিধি এবং শিক্ষা প্রতিনিধি (স্থানীয় প্রশাসন কর্তৃক মনোনীত) হিসেবে একজনকে সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে।
গ্রুপটিকে তিন দিন কর্মশালা করার পর প্রাথমিক কর্মপরিকল্পনা এবং ৩০ নভেম্বরের মধ্যে সকল অংশীজনদের সঙ্গে সংলাপ করে চূড়ান্ত কর্মপরিকল্পনা তৈরি করতে বলা হয়।
ঢাকাটাইমস/১৫নভেম্বর/এফএ

মন্তব্য করুন