সরকারের উদ্দেশে বিএনপির নেতা আযম খান
কাজের গতি বাড়ান, সময় বেশি নিলে হতাশ হবে জনগণ

অন্তর্বর্তী সরকারকে তার কাজ ও সংস্কারের গতি আরও বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আযম খান। তিনি দ্রুত নির্বাচনের রোড ম্যাপ ঘোষণার দাবি জানিয়ে বলেছেন, সময় বেশি নিলে জনগণ হতাশ হয়ে পড়বে। দেশের জন্য বিপর্যয়ের হবে। সরকারের এমন ব্যর্থতা চান না তারা।
শনিবার দুপুরে টাঙ্গাইলে জেলা অ্যাডভোকেট বার সমিতির অডিটোরিয়ামে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।
বিগত সরকারের সময় বিএনপির আন্দোলন ও আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করে আহমেদ আযম বলেন, ‘গণতন্ত্র ও নির্বাচনের কথা বলায় দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অসংখ্য মামলা দিয়েছে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা। বিএনপির ৬০ লাখ নেতাকর্মীর নামে মামলা দেয়া হয়েছে। তারপরও বিএনপি দমে যায়নি। ৫ আগস্টের যে অভ্যত্থান এর পেছনের নায়ক তারেক রহমান। এই অভ্যুত্থানে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের ৪২২ জন নেতাকর্মী শাহাদত বরণ করেছেন। এ ছাড়া গত ১৫ বছর বিএনপির নেতাকর্মীদের রক্তে রাজপথ রাঙানো থাকত।’
গণঅভ্যুত্থানে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের মধ্যে এখন সমন্বয়হীনতা দেখছেন বলে মন্তব্য করেন বিএনপির এই কেন্দ্রীয় নেতা। বলেন, ‘সরকারের একজন উপদেষ্টা এক রকমের কথা বলেন। আরেকজন উপদেষ্টা আরেক রকমের কথা বলেন। আমরা বলতে চাই এই সরকারের যেমন ব্যর্থ হওয়ার সুযোগ নেই, তেমনি কোনো সমন্বয়হীনতা দেখতে চাই না। প্রতিটি পদে বিএনপিসহ গণতান্ত্রিক শক্তির সাথে আপনারা আলোচনা করুন। আমরা সমর্থন দিয়ে, আমাদের অভিজ্ঞতা দিয়ে সেটা সফল করব। আমরা আপনাদের পাশে আছি।’
সরকারকে তার সময়সীমার ব্যাপারে সচেতন থাকতেও পরামর্শ দেন আহমেদ আযম খান। তার মন্তব্য, সরকার যদি মনে করে তাদের অবারিত সময় তাহলে সেটা ভুল হবে। তিনি বলেন, ‘আপনারা যত দ্রুত সম্ভব, প্রয়োজনীয় সংস্কার করে নির্বাচন দিন। আপনাদের সেই সময় আমরা দেব, জনগণও দেবে। কিন্তু আপনারা যদি নির্বাচিত সরকারের মতো পাঁচ বছর থাকবার চেষ্টা করেন, সেটা ভুল হবে। সেটা দেশের জন্য বিপর্যয়ের হবে।’
এ জন্য সরকারের কাজের গতি বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে বিএনপির নেতা বলে, ‘আপনারা দ্রুত নির্বাচনের রোড ম্যাপ ঘোষণা করুন। রোড ম্যাপে যেন নয় মাস বা এক বছরের উপরে সময় না যায়। জনগণ তাহলে হতাশ হয়ে পড়বে। তখন আপনারা ব্যর্থ হয়ে যাবেন। আপনাদের ব্যর্থতা চাই না। আপনাদের মধ্য দিয়ে একটি গণতান্ত্রিক সরকার আসবে। যে সার্চ কমিটি গঠন করেছেন, সেই কমিটির মাধ্যমে একটি অবাধ, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠন করুন। আমরা যৌক্তিক সময়ের কথা বলছি। যৌক্তিক সময়ের মধ্যে নির্বাচন দেবেন।’
প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, বিদেশে দূতাবাসসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে বলে সরকারকে সতর্ক করেন বিএনপির নেতা। এই অস্থিরতা দূর করার আহ্বান জানিয়ে তিনি প্রধান উপেদষ্টার উদ্দেশে বলেন, ‘দেশ-বিদেশে নানা ষড়যন্ত্র চোখে পড়ছে। এই ষড়যন্ত্র প্রতিহত করার জন্য আমরা পুরো জাতি ঐক্যবদ্ধ আছি। আপনি সারা বিশ্বে আপনার দূতাবাসগুলোকে কাজ করতে বলুন। এই দূতাবাস দিয়ে সারা বিশ্বে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ফেরা, সব ধর্মের স্বাধীনতায় বিশ্বাস এবং সব ধর্মের মানুষ একসাথে বাংলাদেশ গড়ে তুলবে- এই ম্যাসেজ যেন যায়।’
সম্মেলনের উদ্বোধন করেন কেন্দ্রীয় মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ইসতিয়াক আজিজ উলফাত। জেলা মুক্তিযোদ্ধা দলের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুল খালেক মন্ডলের সভাপতিত্বে সম্মেলনে বক্তব্য দেন ঢাকা বিভাগীয় বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক বেনজির আহমেদ টিটো, কেন্দ্রীয় মুক্তিযোদ্ধা দলের সিনিয়র সহ-সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল হালিম, মুক্তিযোদ্ধা দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান, জেলা বিএনপির সভাপতি হাসানুজ্জামিল শাহীন, সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ ইকবাল।
(ঢাকাটাইমস/১৬নভেম্বর/মোআ)

মন্তব্য করুন