আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল
সেই টবি ক্যাডম্যান চিফ প্রসিকিউটরের বিশেষ পরামর্শক, যা করবেন তিনি

আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার চলাকালে অভিযুক্তদের পক্ষে লড়তে বাংলাদেশে আসতে চেয়েছিলেন লন্ডনভিত্তিক ল' ফার্ম গার্নিকা ৩৭ গ্রুপের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও গার্নিকা ৩৭ চেম্বার্সের যুগ্ম প্রধান টবি ক্যাডম্যান। কিন্তু তখন বাংলাদেশ সরকার তাকে অনুমতি দেয়নি। এবার সেই বিশেষজ্ঞ আইনজীবীকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জুলাই গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে সহায়তা করতে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলামের বিশেষ পরামর্শক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন টবি, যদিও এ বিষয়ে ট্রাইব্যুনাল বা চিফ প্রসিকিউটরের পক্ষ থেকে এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ও মানবাধিকার বিষয়ক আইনজীবী এবং প্রত্যর্পণ বিশেষজ্ঞ টবি ক্যাডম্যান বাংলাদেশ সময় বুধবার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স (সাবেক টুইটার)-এ এক পোস্টে লিখেছেন, “আমি এ ঘোষণা দিতে পেরে আনন্দিত ও খুবই সম্মানিত বোধ করছি যে আমাকে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের একজন স্পেশাল প্রসিকিউটর অ্যাডভাইজার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।”
এর পরপরই টবি ক্যাডম্যানের ল’ ফার্ম গার্নিকা ৩৭ চেম্বার্সের এক্স হ্যান্ডল থেকে বিষয়টি নিয়ে তিন ভাগ করে (১/৩, ২/৩, ৩/৩) একটি পোস্ট দেওয়া হয়।
পোস্টের প্রথম অংশে বলা হয়, এই চেম্বারের যুগ্ম প্রধান টবি ক্যাডম্যানকে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের স্পেশাল প্রসিকিউটোরিয়াল অ্যাডভাইজার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
দ্বিতীয় অংশে ক্যাডম্যানের কাজ সম্পর্কে বলা হয়, তার ভূমিকা হবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সংক্রান্ত সব বিষয়ে চিফ প্রসিকিউটরকে পরামর্শ দেওয়া।
এই ট্রাইব্যুনাল বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ প্রতিষ্ঠান এবং এটি আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন ১৯৭৩-এর অধীনে প্রতিষ্ঠিত হয়।
পোস্টের তৃতীয় ও শেষ অংশে বলা হয়, এটি মূলত প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ ও অন্যান্য অপরাধ সংঘটনকারী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে তদন্ত ও তাদের আন্তর্জাতিক আইনে বিচার করার জন্য।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যখন একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার চলছিল, সে সময় ব্রিটিশ আইনজীবী টবি ক্যাডম্যান অভিযুক্তদের পক্ষের আইনজীবী হিসেবে বাংলাদেশে আসতে চেয়েছিলেন। তবে সে সময় তাকে আসতে দেওয়া হয়নি। এখন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান চলাকালে সংঘটিত হত্যাকাণ্ড বিচারপ্রক্রিয়া চলছে।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতন এবং শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়ার পর টবি ক্যাডম্যান বাংলাদেশে আসেন। গত ২ সেপ্টেম্বর প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তিনি। প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় ওই সাক্ষাৎ হয়।
এখন তিনি নিজে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের বিশেষ পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার কথা জানালেন। অবশ্য এ বিষয়ে এখনো চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয় বা সরকারের সংশ্লিষ্ট কারও বক্তব্য জানা যায়নি।
তবে গত ১৮ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী, উপদেষ্টা, এক বিচারপতি ও সচিবসহ ১৪ জন আসামির বিষয়ে শুনানিকালে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম প্রসিকিউশনকে সহায়তায় সরকার দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞ নিয়োগ দিচ্ছে বলে উল্লেখ করেন।
এছাড়া গত ১৯ নভেম্বর আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল 'অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিন: আইন মন্ত্রণালয়ের কৈফিয়ত’ শীর্ষক বিফ্রিং করেন। আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে এ ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে তিনিও বিশেষজ্ঞ নিয়োগের বিষয়টি জানান।
জানা গেছে, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে টবি ক্যাডম্যানের ২ সেপ্টেম্বরের বৈঠকে তারা ছাত্র-নেতৃত্বাধীন বিপ্লবের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক সমর্থনে একটি দেশীয় ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা করেন।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং ক্যাডম্যানকে উদ্ধৃত করে বলেছিল, বাংলাদেশকে দ্রুত সত্য, ন্যায়বিচার এবং জবাবদিহির জন্য যথাযথভাবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং বাংলাদেশের জনগণ দ্বারা সমর্থিত একটি কার্যকর অভ্যন্তরীণ আইনি কাঠামো প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
প্রধান উপদেষ্টার কাছে বেশ কয়েকটি প্রস্তাব পেশ করার সময় ক্যাডম্যান তখন বলেন, তারা মানবতাবিরোধী অপরাধ, অর্থনৈতিক অপরাধ এবং রাজনৈতিক দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের প্রত্যর্পণের জন্য একটি কাঠামো তৈরির প্রচেষ্টায় বাংলাদেশকে সমর্থন করতে প্রস্তুত, যারা অসদুপায়ে অর্জিত সম্পদ নিয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা তার প্রস্তাব শুনেন এবং তাকে লিখিতভাবে তা দাখিল করতে বলেন।
তিনি বলেন, “ছাত্র-নেতৃত্বাধীন বিপ্লবের সময় যারা গণহত্যার নির্দেশ দিয়েছিল ও পরিচালনা করেছিল, তাদের আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য বিচারের ব্যাপারে তার সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার হচ্ছে, শেখ হাসিনার ১৫ বছরের স্বৈরাচারী শাসনামলে বিদেশে পাচার হওয়া শতকোটি ডলার দেশে ফিরিয়ে আনা।”
(ঢাকাটাইমস/২১নভেম্বর/এফএ)

মন্তব্য করুন