হার্ট ও লিভারের বন্ধু গাজরের জুস, ক্যানসার আর ডায়াবেটিসেরও যম
গাজর অত্যন্ত উপকারী একটি সবজি। বিশ্বের তাবড় সব পুষ্টিবিজ্ঞানীর এমনটাই মত। এই সবজিতে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন, খনিজ, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ডায়েটরি ফাইবার। ফলে শরীর সুস্থ রাখার কাজে এর জুড়ি মেলা ভার।
পুষ্টিবিদরা দাবি করছেন, ক্যানসারের মতো জটিল রোগ প্রতিরোধ করে গাজরের জুস। ডায়াবেটিসও রাখে নিয়ন্ত্রণে। তবুও বাংলাদেশে এই সবজির ব্যবহার অনেকটাই কম। তবে গাজরের পুষ্টিগুণ ও স্বাস্থ্যগুণের কথা জানলে এটিকে অবশ্যই পাতে রাখবেন।
গাজরের জুসে রয়েছে পুষ্টির ভাণ্ডার। নিয়মিত এই পানীয় খেলে কার্ব, ফাইবার, ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ভিটামিন কে এবং পটাশিয়ামের মতো একাধিক উপকারী উপাদান মিলবে। এছাড়া এই পানীয়তে রয়েছে লিউটিন ও জিয়াজ্যান্থিনের মতো কার্যকরী দুটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট।
এই দুই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কিন্তু দেহ থেকে ক্ষতিকর পদার্থকে ‘ফ্লাশ আউট’ করে দেওয়ার কাজে সিদ্ধহস্ত। তাই প্রতিদিন সকালে এক গ্লাস গাজরের জুস খেতে ভুলবেন না!
হার্ট ভালো ভালো
এতে ভরপুর পরিমাণে পটাশিয়াম রয়েছে। এই উপাদান প্রেশার কমায়। যার ফলে হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা কমে। শুধু তাই নয়, এতে মজুত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইডস লেভেলকে নিম্নমুখী করার কাজেও সিদ্ধহস্ত। সেই কারণেও সুস্থ থাকে হার্ট। এড়িয়ে চলা যায় একাধিক জটিল রোগের ফাঁদ। তাই প্রতিদিন সকালে উঠে অবশ্যই গাজরের জুস খাওয়া শুরু করুন।
লিভার থাকবে সুস্থ
খেলে লিভারের হাল বিগড়ে যেতে সময় লাগবে না। এমনকি পিছু নিতে পারে ফ্যাটি লিভার ডিজিজ। তাই ভুলেও শীতের দিনে বেশি বেশি বাইরের খাবার খাবেন না। তার বদলে প্রতিদিন খান গাজরের জুস। এই পানীয়ে উপস্থিত প্ল্যান্ট কম্পাউন্ডের গুণে যকৃতের হাল ফিরবে। লিভারে উপস্থিত সব ক্ষতিকর পদার্থ বেরিয়ে যাবে। তাই ঝটপট এই পানীয়ের সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতিয়ে নিন।
চোখের হাল ফিরবে
দূষণ বেড়েছে। আর এমন পরিবেশেই শরীরের পাশাপাশি চোখের হালও বিগড়ে যায়। ড্রাই আইজ়, ইনফেকশন-সহ একাধিক জটিল রোগ নিতে পারে পিছু। তাই যে ভাবেই হোক চোখকে সুস্থ-সবল রাখতে হবে। সেই কাজে আপনাকে সাহায্য করতে পারে গাজরের জুস।
গাজরের জুসে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন এ। এই ভিটামিন সরাসরি দৃষ্টিশক্তি বাড়ানোর কাজে সাহায্য করে। এমনকি চোখের ম্যাকুলার ডিজেনারেশন আটকানোর কাজেও এই পানীয়ের জুড়ি মেলা ভার। সেই কারণেই গাজরের জুস খেলে বয়সজনিত চোখের সমস্যা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
এছাড়া এই পানীয়ে উপস্থিত লিউটিন ও জিয়াজ্যান্থিন ক্ষতিকর আলোর প্রভাব থেকে চোখকে রক্ষা করতে পারে। তাই যারা সারাক্ষণ কম্পিউটারের সামনে বসে কাজ করেন, তারা নিয়মিত গাজরের জুস খেতেই পারেন। এতেই উপকার পাবেন হাতেনাতে।
ইমিউনিটি থাকবে চাঙ্গা
বর্ষার শুরুতেই ঘরে ঘরে জ্বর, সর্দি, কাশির প্রকোপ বাড়ছে। বিশেষত, যাদের ইমিউনিটি কম, তারাই এই ধরনের জটিলতায় বেশি ভোগেন। তবে জানলে অবাক হয়ে যাবেন, প্রতিদিন মাত্র এক গ্লাস গাজরের জুস করে খেতে পারলেই কিন্তু রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কয়েকগুণ বাড়বে। আসলে এই পানীয়ে উপস্থিত ভিটামিন এ এবং ভিটামিন সি-এর যুগলবন্দিতেই ইমিউনিটি হয় শক্তপোক্ত। সেই কারণেই একাধিক ভাইরাল ডিজিজকে সহজেই কাবু করা সম্ভব হয়।
ক্যানসারের সামনেও গড়ে তুলবে প্রতিরোধ
শেষ কয়েক দশকে কর্কট রোগের কবলে পড়া রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। একবার এই অসুখে আক্রান্ত হলে কিন্তু সমস্যার শেষ থাকে না। তাই যেনতেন প্রকারেণ ক্যানসারের মতো অসুখকে প্রতিরোধ করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন বিশেষজ্ঞরা। এক্ষেত্রে ভালো খবর হলো, নিয়মিত গাজরের জুস খেলে দেহে ক্যানসার কোষের বৃদ্ধি কিছুটা হলেও আটকে দেয়া সম্ভব।
একটি টেস্টটিউব গবেষণায় দেখা গেছে যে, লিউকেমিয়া এবং কোলোন ক্যানসারের কোষের বৃদ্ধি আটকে দিতে পারে এই গাজরের জুস। তাই সুস্থ থাকতে এই জুস খাওয়া আবশ্যক।
ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে একাই একশ
ব্লাড সুগারের মতো ঘাতক অসুখকে নিয়ন্ত্রণে না রাখতে পারলে একাধিক জটিল সমস্যা পিছু নিতে পারে। এই তালিকায় ক্রনিক কিডনি ডিজিজ, স্ট্রোক এবং হার্টের অসুখও রয়েছে।
তাই যেভাবেই হোক ব্লাড সুগারকে কন্ট্রোলে রাখতে হবে। এই কাজে আপনাকে সাহায্য করতে পারে গাজরের জুস। তাই সুগার রোগীদের ডায়েটে এই জুস থাকা অত্যন্ত জরুরি বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা।
(ঢাকাটাইমস/২ডিসেম্বর/এজে)
মন্তব্য করুন