মানিকগঞ্জ হানাদার মুক্ত দিবস আজ
মানিকগঞ্জ হানাদার মুক্ত দিবস আজ। ১৯৭১ সালের এই দিনে বাংলার দামাল সন্তানরা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর কবল থেকে মানিকগঞ্জকে মুক্ত করে এবং উত্তোলন করে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা। মানিকগঞ্জ মুক্তির স্বাদ পায়।
জানা গেছে, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে ঢাকায় পাকিস্তানি বাহিনীর ক্র্যাক-ডাউনের খবর পেয়ে, তৎকালীন এমএলএ খন্দকার মাজাহারুল হক চাঁন মিয়াকে চেয়ারম্যান করে সাত সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়।
ভারত থেকে অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ নিয়ে, মুক্তিযোদ্ধারা জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ শুরু করেন। এর আগে ২৬ মার্চ, ক্যাপ্টেন হালিম চৌধুরীর নেতৃত্বে মানিকগঞ্জে তালা ভেঙে অস্ত্র লুট করা হয় এবং তা ছাত্র-জনতার মধ্যে বিতরণ করা হয়।
১৯৭১ সালের ১ এপ্রিল, পাক-সেনারা হেলিকপ্টারের ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক দখল করে এবং সেদিনই মানিকগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকা পাকবাহিনীর দখলে চলে যায়। জুলাই মাসের দিকে রাজাকার, আল-বদর ও শান্তি কমিটি গঠন করা হয়, যারা মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে পাকবাহিনীকে সহায়তা করতে থাকে। মানিকগঞ্জের সিঅ্যান্ডবি ডাক বাংলো ছিল পাক হানাদার বাহিনীর জেলা সদরদপ্তর, এখান থেকে তাদের দোসররা নির্বিচারে নিধনযজ্ঞ চালাত।
২২ নভেম্বর, পাকবাহিনী তেরশ্রী, সেনপাড়া, বড়রিয়া এবং বড়বিলা গ্রামের উপর হামলা চালিয়ে ৪৩ জন নিরীহ মানুষকে হত্যা করে। ১০ ডিসেম্বর, শিবালয় উপজেলার মিরপুর গ্রামে পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের দোসররা মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে আক্রমণ করলে প্রায় দুই ঘণ্টা সম্মুখযুদ্ধ হয় এবং এতে মুক্তিযোদ্ধা মুনসুর আলম গুলিতে আহত হন। পাক বাহিনী গ্রামগুলোতে আগুন ধরিয়ে দিয়ে প্রায় অর্ধশত বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়।
মানিকগঞ্জের গোলাইডাঙ্গা যুদ্ধে ৮১ জন পাক সেনা নিহত হয় এবং এটি ঐতিহাসিক গোলাইডাঙ্গা যুদ্ধ নামে পরিচিত। এ যুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ইঞ্জিনিয়ার তোবারক হোসেন লুডু। ১১ ডিসেম্বর, পাক সেনারা ঘিওর উপজেলার কয়েকটি গ্রামে আক্রমণ করলে ৬-৭ ঘণ্টার যুদ্ধে হানাদার বাহিনী পিছু হটে।
১৩ ডিসেম্বর, মানিকগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধারা ৪২টি ছোট-বড় যুদ্ধের মাধ্যমে জেলা মুক্ত করেন। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধের মুখে পাক বাহিনী ১৩ ডিসেম্বর মানিকগঞ্জ ছেড়ে চলে যায় এবং তৎকালীন এমএলএ খন্দকার মাজাহারুল হক চাঁন মিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন।
এই যুদ্ধে ৫৪ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন এবং ৯ জন পঙ্গু হন। খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে রয়েছেন স্কোয়াড্রন লিডার (অব.) বদরুল আলম (বীর প্রতীক), ইব্রাহীম খান (বীর প্রতীক), শহীদ মাহফুজুর রহমান (বীর প্রতীক) এবং মোহাম্মদ আতাহার আলী খান (বীর প্রতীক)।
আজকের দিনটি উপলক্ষে মানিকগঞ্জে বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি, রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। তবে, এই দিনটিকে মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে বিগত সময়ে মানিকগঞ্জে বিজয়ের মেলা হলেও গত দুই বছর বিজয় মেলা বাণিজ্য মেলায় রূপান্তরিত হয়েছে। এবছরও এখন পর্যন্ত মেলার কার্যক্রম দেখা যায়নি।
(ঢাকা টাইমস/১৩ডিসেম্বর/এসএ)
মন্তব্য করুন