সাহস বটে ওলিওর! পালিয়ে থেকেও দখলে নিলেন শতকোটির সম্পত্তি

গণঅভ্যুত্থানে দলের ক্ষমতা হারানোর পরও দাপট কমেনি আওয়ামী লীগের এক সময়ের প্রভাবশালী নেতা লায়ন ফিরোজুর রহমান ওলিওর। অন্য নেতারা যখন নিজেদের খবরের আড়ালে রাখতে মরিয়া, সেখানে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার সাবেক এই উপজেলা চেয়ারম্যান দেখালেন বেদখলের পরাকাষ্ঠা। তাও আবার পলাতক থেকে।
ফিরোজুর রহমান ওলিও রাজধানীর ধানমন্ডির পান্থপথ সড়কে সরকারি জমি দখল করে গড়ে তুলেছিলেন চারতলা ভবন। সেখানেই ছিল তার সেই আলোচিত আবাসিক হোটেল ওলিও ইন্টারন্যাশনাল, যেখানে জঙ্গির অবস্থান নিয়ে দিনভর নানা নাটকের পর বিস্ফোরণে উড়ে গিয়েছিল একটি কক্ষের দেয়াল।
গত বছরের জুনে ওলিওর হেফাজত থেকে এই চারতলা ভবন ও জমি দখলে নেয় ঢাকা জেলা প্রশাসন। মহানগর জরিপে ১ নম্বর খাস খতিয়ানে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে ঢাকা জেলা প্রশাসকের নামে রেকর্ডকৃত সরকারি সম্পত্তি এটি। নিজ দলের ক্ষমতায় থাকার সময় তার উচ্ছেদ হওয়ার পেছনে দলের বড় প্রভাবশালীদের হাত ছিল বলে তখন কানাঘুষা শোনা গেছে।
ক্ষমতার পালাবদলের পর সরকারের এই দখলস্বত্ব আরও পোক্ত হওয়ার কথা। কিন্তু অবিশ্বাস্যভাবে ফিরোজুর রহমান ওলিও ভবনটি আবার দখল নেন। পলাতক ওলিও এবার কৌশল হিসেবে সরাসরি নিজে সেখানে ব্যবসা করছেন না। মাসিক চুক্তিতে ভাড়া দিয়েছেন এক ব্যক্তির কাছে।
সূত্র বলছে, ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দলেটির প্রায় সব নেতা পলাতক। ওলিও নিজেও ভারতে পলাতক। সেখান থেকে অক্টোবরে শুরু করেন ওই ভবন দখলে নানা কুটকৌশল। স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালীর সহায়তায় নভেম্বরে পুরো ভবনটি দখলে নিতে সক্ষম হন তিনি।
ভবনের দোতলা থেকে চারতলা পর্যন্ত আবার চালু করা হয় হোটেল ওলিও ইন্টারন্যাশনাল (আবাসিক)। মনির হোসেন নামে এক ব্যক্তি সেটি পরিচালনা করছেন। নিচতলায় সাতটি দোকানের মধ্যে ছয়টিতে আগের ব্যবসায়ীরাই ব্যবসা করছেন। পুরো ভবনের ভাড়া পাচ্ছেন পলাতক ওলিও।
সাবেক এই উপজেলা চেয়ারম্যান ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়ে না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন। সাবেক পূর্তমন্ত্রী উবায়দুল মোক্তাদিরের কাছে হেরে যান তিনি। নৌকা প্রতীকের লোকজন তার বিরুদ্ধে মদের ব্যবসার অপবাদ সামনে এনে নির্বাচনি প্রচারণা চালান।
সরেজমিনে গিয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত বছরের ১৩ জুন ওলিওর দখলে থাকা শুক্রাবাদ মৌজার ৮ দশমিক ৭৪ শতাংশ জায়গা ও ভবন উদ্ধার করে প্রশাসন। সেসময় ভবনসহ জমির দাম দেখানো হয় ৮০ কোটি টাকা। উদ্ধার করা ভবনে ঢাকা জেলা প্রশাসকের পক্ষে টানানো ‘দখলমুক্ত’ সম্পত্তি লেখা ব্যানারটি এখন আর নেই। ওলিওর নিয়ন্ত্রণে ভবনের বাণিজ্যিক কার্যক্রম চলছে স্বাভাবিকভাবে।
জেলা প্রশাসনের অভিযানে ভবনটি দখলমুক্ত হওয়ার পর একজন ব্যবসায়ী দোকান ছেড়ে যাওয়ায় সেটা এখন বন্ধ। হায়া রেন্ট-এ-কার নামে ওই বন্ধ দোকানের মালিক মোহাম্মদ হারুন বলেন, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় অন্যত্র ব্যবসা শুরু করেছেন তারা। ভবনটি দখলে রাখতে সেখানে ভাড়াটিয়া তুলেছেন ওলিও।
ওলিও ইন্টারন্যাশনালের একজন কর্মকর্তা ঢাকা টাইমসকে জানান, মোহাম্মদপুরের মনির হোসেন মাসিক ভাড়া চুক্তিতে এখন হোটেল চালাচ্ছেন। ওলিওর অফিস প্রতি মাসে ভাড়ার টাকা নিয়ে যায়।
সূত্র জানায়, দখল করা এই ভবনের সামনে আরও একটি হোটেল আছে ওলিওর। এটি যারা দেখভাল করেন তারাই প্রতি মাসে বেদখল ভবনের ভাড়া তোলেন। সরকার পতনের পর দেশ ছেড়ে ভারতে অবস্থান করা ওলিওর কাছে হুন্ডির মাধ্যমে পাঠানো হয় টাকা।
এদিকে ভবনটি আবার দখল হওয়ার কথা জানে না মোহাম্মদপুর রাজস্ব সার্কেল। এই দপ্তরের সার্ভেয়ার আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘ভবনটি আবার দখল হয়েছে জানি না। আজই একটি চিঠি এসিল্যান্ডের মাধ্যমে ঢাকা জেলা প্রশাসককে অবহিত করব।’
ফিরোজুর রহমান ওলিও বেসরকারি স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক লিমিটেডের পরিচালক এবং এফ আর গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও এফ এম ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান।
(ঢাকাটাইমস/২৪জানুয়ারি/এসএস/এজে)

মন্তব্য করুন