নোয়াখালীর হাতিয়ায় নদী ভাঙন রোধে জিও ব্যাগ কাজের ধীরগতি

নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার নলেরচরের নির্মিত অবকাঠামো রক্ষার্থে প্রতিরক্ষামূলক কাজ বাস্তবায়নে নদী ভাঙন রোধের কাজ চলমান রয়েছে। প্রথম ধাপে নদীর তীরে জিওবি ব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধে কাজ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। আর এ জিও ব্যাগের কাজে ধীরগতির অভিযোগ উঠেছে। একইসাথে জিও ব্যাগে ব্যবহার করা বালি নিম্নমানের বলেও অভিযোগ করছে স্থানীয় লোকজন, এ নিয়ে তাদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চারণ হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে সার্বক্ষণিক কাজের গুণগত মান তদারকির পাশাপাশি দ্রুত কাজ শেষ করার জন্য সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে তাগাদা দেওয়া হচ্ছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মেঘনা ও বঙ্গোপসাগরে নদী বিষ্টিত নোয়াখালীর বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা হাতিয়া। সারাবছর জুড়ে উপজেলাটির চারপাশে ভাঙনের কবলে পড়ে বিলীন হয় বাড়ি-ঘর, ফসলি জমিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। উপজেলাটির হরনি ও ছানন্দি ইউনিয়নের নলেরচর এলাকার তীব্র ভাঙন রোধে গত ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসের শেষের দিতে ৩৭৮ কোটি টাকা ব্যয়ে জিও ব্যাগ দিয়ে ভাঙন প্রতিরোধের কাজ শুরুর প্রক্রিয়ার পর বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধানে ১৩টি প্যাকেজে মোট ৪ দশমিক ৯ কিলোমিটার নদীর তীর ভাঙন রোধের কাজ শুরু করা হয়।
এপ্রিলে কাজ শুরু হওয়ার পর কয়েকমাস স্বাভাবিক গতিতে কাজ চলমান থাকলেও হঠাৎ করে গত ২-৩ মাস থেকে কাজে ধীরগতি শুরু হয়। এরই মধ্যে এ কাজের গুণগত মান ও কাজের ধীরগতি নিয়ে অভিযোগ করে স্থানীয় লোকজন, সবচেয়ে বেশি সমস্যা বলছে ১১, ১২ ও ১৩ নম্বর প্যাকেজের কাজে। যার মধ্যে ১১ নম্বর প্যাকেজের কাজ শুরু থেকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বেঙ্গল বিল্ডার্স এন্ড কনস্ট্রাকশনের অধীনে করছিলেন সাব ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আল খায়ের ট্রেডিং এন্ড কন্ট্রান্টিং।
স্থানীয়দের অভিযোগ এ ৪টি প্যাকেজে জিও ব্যাগের ভেতরে মাটি বালি ব্যবহার করার ফলে নদীর তীরে ব্যাগ ফেলার পর সেগুলো থেকে সহজে মাটিগুলো বের হয়ে যাচ্ছে। কাজ ধীরগতির ফলে গত কয়েকদিনে নদীর ভাঙনের শিকার হয়েছে আরও প্রায় ২ কিলোমিটার এলাকা। নিম্নমানের বালি ব্যবহার করার ফলে জিও ব্যাগগুলোর ভেতর থেকে বালি সরে যাচ্ছে। যার কারণে নদীর ভাঙন আরও বাড়ছে এবং ব্যাগের কাজ শেষ করার আগে ব্যাপক ভাঙনের কবলে পড়ার আশঙ্কা উপকূলবাসীর।
স্থানীয় আব্দুর রহমান নামের এক বাসিন্দা বলেন, নদী উপকূলের মানুষের সারাজীবনের দুঃখ নদী ভাঙন। একেকটি পরিবার একাধিকবার ভাঙনের কবলে পড়ে বসতবিটি হারিয়েছেন। এসব মানুষের প্রাণের দাবি ছিল নলেরচর এলাকার নদী ভাঙন রোধে স্থায়ী ব্যবস্থা করা। সকলের প্রচেষ্টায় প্রাথমিকভাবে জিও ব্যাগ দিয়ে নদী ভাঙন রোধের ব্যবস্থা হলেও সেটির কাজ নিয়ে নাটক শুরু করেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষরা। ঠিকাদাররা একেকবার একেকজন কাজ করে। দুই দিন কাজ চললে পাঁচ দিন বন্ধ থাকে। ৪-৫ জন শ্রমিক কাজ করার কারণে কাজের কোনো গতি নেই।
রহিম উল্যাহ নামের একজন বলেন, কাজ আস্তে আস্তে চললেও নদী ভাঙন তো আর থেমে নেই। নদী তার গতিতে ভেঙেই চলছে। জিও ব্যাগের কাজ চলমান থাকাকালীন সময় প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকা ভেঙে নদীতে মিশে গেছে। সামনে বর্ষা মৌসুম আসছে এরমধ্যে যদি ব্যাগ ফেলার কাজ শেষ করতে না পারে তাহলে বর্ষায় নদী তীরের কয়েক হাজার বাড়ি ঘর নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। বিলীন হয়ে মসজিদ, দোকান-পাটসহ বিভিন্ন স্থাপনা। তাই আমাদের দাবি যেন দ্রুত সময়ের মধ্যে এ কাজ শেষ করা হয়।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ১১ নম্বর প্যাকেজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আল খায়ের ট্রেডিং এন্ড কন্ট্রান্টিং এর পরিচালক খালেদুজ্জামান বলেন, কাজ শুরুর পর থেকে তিনি সাড়ে ৭ মাস কাজ করেছেন। এরপর কোন প্রকার নোটিশ ছাড়া বেঙ্গল বিল্ডার্স এন্ড কনস্ট্রাকশন কর্তৃপক্ষ তাকে কাজ করতে নিষেধ করে দেন। এরপর থেকে কাজের বিষয়ে তার কাছে কোনো তথ্য নেই।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, যেটুকু কাজ করেছেন তার প্রাপ্য ১ কোটি ৫ লাখ ৪৬ হাজার ১৯৮ টাকা এখনও তাকে পরিশোধ করেনি বেঙ্গল বিল্ডার্স। বিভিন্ন সময় তাদের অফিসে গিয়ে একাধিকবার বৈঠক করেও কোনো সমাধান পাওয়া যায়নি। তারা আমার কাজ বন্ধ করে দিয়েছে আবার নিজেরাও ঠিক মতো কাজ করছে না।
জানতে চাইলে বেঙ্গল বিল্ডার্স এন্ড কনস্ট্রাকশন এর ম্যানেজার বশির আহমেদ বলেন, কাজের মানের বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তার তদারকি করেন। মালামালে কোনে সমস্যা পেলে তারা সেগুলো বাতিল করে দেন। কাজ খারাপ হলে তারা আমাদের বিল আটকে দিবেন। এছাড়া কোনো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সাথে নিজেদের ঝামেলা নেই বলেও দাবি করেন এ কর্মকর্তা, যেটুকু সমস্যা আছে তা সমাধান হয়ে যাবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড নোয়াখালীর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. রাসেল উদ্দিন বলেন, ২০২৪ সালের ডিসেম্বর থেকে স্বাভাবিক গতিতে কাজ শুরু করা হয়। মাঝে ১০ ও ১১ সহ কয়েকটি প্যাকেজের কাজে কিছুটা ধীরগতি ছিল। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে অবগত করা হয়েছে। বর্তমানে কাজের গতি ঠিক আছে দাবি করে প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৬ সালের জুন এ সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে পারবেন বলে প্রত্যাশা করেন এ কর্মকর্তা।
(ঢাকা টাইমস/২৫মার্চ/এসএ)

মন্তব্য করুন