চবির জুলাই শহীদ হৃদয়ের মার্কশিটে যা লেখা

চবি প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ২১ মে ২০২৫, ২৩:০০
অ- অ+

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে আজ। অন্য আরও শিক্ষার্থীর মতোই তালিকায় রয়েছে একটি পরিচিত নামহৃদয় চন্দ্র তরুয়া। নামটি আছে, রোল নম্বরও ঠিক। কিন্তু সেই মানুষটি আজ আর নেই।

হৃদয় চন্দ্র তরুয়া ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। এবার তার চতুর্থ বর্ষের ক্লাস করার কথা। কিন্তু সেই আসনটি এখন শূন্য।

আজ ইতিহাস বিভাগের তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়। তার মার্কশিটে লেখা আছে, He sacrificed his life in the Anti-Discrimination Students Movement-2024. ইতিহাস বিভাগের ওই আসন এখন শূন্য। কারণ, হৃদয় এখন শুধুই ইতিহাস, একটি ছাত্র আন্দোলনে মহান শহীদের নাম।

হৃদয়ের বাড়ি পটুয়াখালী জেলার মির্জাগঞ্জ উপজেলার ঘটকের আন্দুয়া গ্রামে। বাবা রতন চন্দ্র তরুয়া একজন কাঠমিস্ত্রি এবং মা অর্চনা রানী তরুয়া অন্যের বাড়িতে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করতেন। পরিবারটি চরম অর্থকষ্টে থাকলেও হৃদয়ের মেধা ও অধ্যবসায়ে আশার আলো দেখছিলেন তারা।

হৃদয় ছিলেন বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করে হৃদয় এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় ভালো ফল করে ভর্তি হন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। নিজের স্বপ্ন ছিল, একদিন বিসিএস দিয়ে বড় কর্মকর্তা হবেন, অভাব ঘুচাবেন পরিবারের। তরুয়ার পরিবারের স্বপ্ন ছিল, তিনি একদিন বড় চাকরি করে তাদের দুঃখ দূর করবেন।

টিউশনি করে নিজের খরচ চালাতেন এবং মাঝে মাঝে বাড়িতে টাকা পাঠাতেন। হৃদয় ছিলেন শান্তশিষ্ট, বইপ্রেমী এবং ন্যায়ের প্রশ্নে আপসহীন।

২০২৪ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলন নতুন করে দানা বাঁধে। দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা যুক্তিযুক্ত কোটা পদ্ধতিমেধা ভিত্তিক নিয়োগ দাবি করে রাস্তায় নামে। চট্টগ্রামেও এর ব্যতিক্রম ছিল না। হৃদয় এই আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। তার ফেসবুক পোস্টগুলোতে দেখা যায়, তিনি রাষ্ট্র ও সমাজের অবিচারের বিরুদ্ধে কথা বলতেন।

২০২৪ সালের ১৮ জুলাই। চট্টগ্রাম শহরের বহদ্দারহাট মোড়ে আন্দোলন চলাকালে পুলিশ ও সরকারি দলের লোকজন আন্দোলনকারীদের ওপর চড়াও হয়। সংঘর্ষ চলাকালীন হৃদয় গুলিবিদ্ধ হন। গুলিটি তার বাম পাশে ঢুকে ফুসফুস ছিঁড়ে বের হয়ে যায়। ওকে প্রথমে পার্ক ভিউ হসপিটালে নেওয়া হয়। পরের দিন সন্ধ্যায় ওকে আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্স করে ঢাকায় বক্ষব্যাধি হাসপাতালে পাঠানো হয়। ওখান থেকে ঢাকার সিএমএইচে।

চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৩ জুলাই রাত ৫টা ২১ মিনিটে হৃদয় মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে সারাদেশে ছাত্রসমাজ এবং নাগরিক মহলে গভীর শোক ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।

হৃদয়ের স্মৃতির সংরক্ষণ

হৃদয়ের স্মৃতিকে অমর করে রাখতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে তার গ্রাফিতি আঁকা হয়েছে। তার নামে নতুন কলা অনুষদের নামকরণ করা হয়েছে। বন্ধুরা তাকে বিপ্লব ও তারুণ্যের প্রতীক হিসেবে স্মরণ করছেন।

হৃদয় চন্দ্র তরুয়ার আত্মত্যাগ দেশের ছাত্র আন্দোলনের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হয়ে থাকবে। তার স্মৃতি আমাদের প্রেরণা জোগাবে ন্যায়ের জন্য সংগ্রামে।

(ঢাকাটাইমস/২১মে/মোআ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
আমিরাতের কাছে টি ২০ সিরিজ হারলো বাংলাদেশ
আজ শাহবাগ ও ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড়ে সকাল-সন্ধ্যা অবস্থান করবে ছাত্রদল
জিওটেক্সটাইলের গবেষণা ও উৎপাদন বাড়াতে হবে
তারুণ্যের সমাবেশ ঘিরে সিরাজগঞ্জে যুবদলের প্রস্তুতি সভা
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা