এখনই ফিরছেন না তারেক রহমান, কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ সময়ের অপেক্ষা

বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ২৩ জুলাই ২০২৫, ২০:০৪
অ- অ+

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে ব্যাপক আলোচনা। জুলাই মাসে তিনি দেশে ফিরছেন, এমন খবরে বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে তৈরি হয়েছিল ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা। ঢাকার গুলশানে তার সম্ভাব্য বাসভবনটিও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে প্রস্তুত করা হচ্ছিল। কিন্তু ঢাকা টাইমস বিএনপির একাধিক সূত্রে নিশ্চিত হয়েছে, জুলাই বা আগস্ট মাসেও তিনি দেশে ফিরছেন না। কেন এই বিলম্ব? কবে ফিরবেন তিনি? দলের ভেতরে, বাইরে এই জিজ্ঞাসা সর্বত্র।

২০০৭ সালের সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার দেশের ক্ষমতা নিয়ে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। তেমনই এক মামলায় ওই বছরের ৭ মার্চ তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। কারাবন্দি হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২০০৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর তিনি জামিনে মুক্তি পান। এরপর উন্নততর চিকিৎসার জন্য ১১ সেপ্টেম্বর লন্ডনে যান তারেক রহমান। চিকিৎসা শেষে তিনি সেন্ট্রাল লন্ডনের এডমন্টনে সপরিবারে বসবাস করছেন।

গত বছর ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকেই শুরু হয় তারেক রহমানের দেশে ফেরার আলোচনা। তবে সেটি ছাপিয়ে বড় দায়িত্ব ছিল বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসা। চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যান বেগম খালেদা জিয়া। সেখানে তিনি ছেলে তারেক রহমানের বাসায় ছিলেন। চিকিৎসা শেষে মে মাসের প্রথম সপ্তাহে তিনি দেশে ফিরে আসেন। এরপর আবার শুরু হয় জল্পনা, কবে দেশে ফিরবেন তারেক রহমান?

কিছুদিন ধরেই রাজনৈতিক অঙ্গনে জোরালো গুঞ্জন ছিল, তারেক রহমান জুলাই মাসেই দেশে ফিরে আসছেন। দু-একটি গণমাধমে এ সংক্রান্ত খবরও প্রচার হয় । বিশেষ করে, স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে বিএনপির ৩৬ দিনের কর্মসূচির চূড়ান্ত পর্বে তিনি উপস্থিত থাকতে পারেন বলে আলোচনা ছিল। এই খবরকে কেন্দ্র করে দলের তৃণমূল থেকে শীর্ষ পর্যায় পর্যন্ত ব্যাপক প্রস্তুতিও শুরু হয়েছিল। তারেক রহমান দেশে ফিরলে যেখানে উঠবেন, গুলশানের সেই বাড়িটিও প্রস্তুত করা হচ্ছিল।

ব্যাপক আলোচনা সত্ত্বেও একাধিক সূত্র এখন বলছে, তারেক রহমান জুলাই বা আগস্টের শেষ নাগাদ দেশে ফিরছেন না। এর পেছনে একাধিক কারণের কথা বলা হচ্ছে। প্রথমত, দেশে ফিরতে কোনো আইনি বাধা না থাকলেও তার নিরাপত্তা একটি বড় বিষয়। সরকারসহ বিভিন্ন মহল মনে করে, সামনের নির্বাচনে বিএনপি জয়লাভ করলে তারেক রহমানই হবেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। তাই এমন একজন শীর্ষস্থানীয় রাজনৈতিক নেতার সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা বেশ জটিল।

দ্বিতীয়ত, রাজনৈতিক কৌশলগত কারণ। বিএনপি চাইছে, তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন যেন রাজনৈতিকভাবে সবচেয়ে কার্যকর সময়ে হয়। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার ঠিক আগে বা পরে তার ফিরে আসাটা দলের জন্য কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। এছাড়াও, চলমান বর্ষা মৌসুমে বৈরী আবহাওয়ার কারণে তাকে বড় ধরনের গণসংবর্ধনার প্রস্তুতিতে বিঘ্ন ঘটতে পারে বলেও একটি সূত্র ঢাকা টাইমস ডিজিটালকে জানিয়েছে।

আগস্টে না ফিরলেও এরপর খুব শিগগির তারেক রহমান দেশে ফিরবেন বলে আশা করা হচ্ছে। সম্প্রতি এক ভার্চুয়াল সম্মেলনে তিনি নিজেই দেশে ফেরার ইঙ্গিত দিয়েছেন। তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠদের তথ্য, সেপ্টেম্বরে দেশে ফিরতে পারেন তিনি।

তবে বিএনপি বা তারেক রহমানের পক্ষ থেকে এখনো কোনো সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করা হয়নি। সবকিছুই নির্ভর করছে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং কৌশলগত সিদ্ধান্তের ওপর।

ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দেশে ফেরা নিয়ে সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী ঢাকা টাইমসকে বলেন, আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শিগগিরই দেশে ফিরবেন এটা বলতে পারি । আমরা ও দেশবাসী তারেক রহমানের দেশে ফেরার অপেক্ষায় দিন গুনছি । তবে এখনই চূড়ান্ত দিনক্ষণ বলা যাবে না।

তারেক রহমান শুধু একজন রাজনৈতিক নেতার সন্তান নন। নিজ যোগ্যতায় বিএনপির রাজনীতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্থান করে নিয়েছেন। ২০০২ সালে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব হওয়ার পর তিনি সারা দেশে ব্যাপক গণসংযোগ শুরু করেন। এ সময় দলের তরুণ প্রজন্মের কাছে একজন দক্ষ সংগঠক হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন তিনি।

২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানের সময় বিরোধী শক্তিগুলোকে একত্র করার ক্ষেত্রে নেপথ্যে তার ভূমিকা ছিল প্রশংসনীয়। বিএনপির নেতা-কর্মী ও তার সমর্থকরা তাকে 'সাহস আর আত্মবিশ্বাসের প্রতীক' হিসেবে দেখেন। তারা বিশ্বাস করেন, তার নেতৃত্বেই বিএনপি আরও শক্তিশালী হবে।

তারেক রহমানের দেশে ফেরা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হবে। তার প্রত্যাবর্তনকে ঘিরে বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে যে প্রত্যাশা ও উদ্দীপনা তৈরি হয়েছে, তা দলটির ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে। তবে সবকিছুর ঊর্ধ্বে, তার নিরাপত্তা এবং দেশের স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ নিশ্চিত করা জরুরি। তারেক রহমান কবে ফিরবেন, সেই দিনটির জন্যই এখন অপেক্ষা করছে সারাদেশ।

(ঢাকাটাইমস/২৩জুলাই/এমএইচএল/মোআ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
নারী কর্মীদের ছোট হাতা ও দৈর্ঘ্যের পোশাক-লেগিংস বাদ দিতে বলল বাংলাদেশ ব্যাংক
বিমান দুর্ঘটনার ধাক্কা সামলে মাইলস্টোনে সীমিত পরিসরে ক্লাস শুরু ২৭ জুলাই
সাবেক ডিআইজি আব্দুল বাতেন ও তার স্ত্রীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
মাইলস্টোন ট্রাজেডি: ঢাকায় পৌঁছাল ভারতের চিকিৎসক দল
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা