‘দুর্নীতিগ্রস্ত’ বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া শ্রমিক নিয়োগ করিডর সংস্কারের আহ্বান

বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া শ্রমিক নিয়োগ করিডরকে ‘দুর্নীতিগ্রস্ত’ আখ্যা দিয়ে এর সংস্কারের আহ্বান জানিয়েছেন ব্রিটিশ শ্রম অধিকারকর্মী অ্যান্ডি হল এবং অভিবাসন গবেষক রহমান। মালয়েশিয়ার পুত্রজায়ায় দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের প্রাক্কালে এক যৌথ বিবৃতিতে তারা এ আহ্বান জানান। মঙ্গলবার মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম এবং বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বৈঠকে মিলিত হন।
বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশি অভিবাসীরা রেমিট্যান্সের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখছেন এবং কঠোর পরিশ্রম ও দক্ষতার মাধ্যমে মালয়েশিয়াসহ অন্যান্য দেশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। কিন্তু বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া অভিবাসন করিডর, যা উভয় দেশের জন্য অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ, দীর্ঘদিন ধরে চরম অনিয়ম, দুর্নীতি এবং শোষণের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে।
জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞদের বরাতে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, ২০২৪ সালে মালয়েশিয়ায় অর্থবহ কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি পাওয়া পাঁচ লাখেরও বেশি বাংলাদেশি শ্রমিকের বড় একটি অংশ প্রতারণা ও শোষণের শিকার হয়েছেন। নিয়োগ মধ্যস্থতাকারী, ভুয়া নিয়োগকর্তা, দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তা এবং দুই দেশের ব্যর্থ অভিবাসন ব্যবস্থাপনা মিলিয়ে একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে, যা সুষ্ঠু প্রতিযোগিতাকে বাধাগ্রস্ত করেছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, মালয়েশিয়ায় অভিবাসন ব্যবস্থাপনায় ব্যবহৃত এফডব্লিউসিএমএস এবং বেস্টিনেট সিস্টেমকে ঘিরে অস্বচ্ছতা ও মানবিক দুর্দশাকে ব্যবসায়িক মুনাফায় পরিণত করার অভিযোগ রয়েছে। সরকার নির্ধারিত ৭৮,৯৯০ টাকার পরিবর্তে বাংলাদেশি শ্রমিকদের কাছ থেকে প্রায় সাড়ে চার লাখ থেকে সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত আদায় করা হয়েছে। এতে দরিদ্র পরিবারগুলো ঋণের দাসত্বে পড়ে গেছে, অনেকে সম্পত্তি বিক্রি বা বন্ধক দিয়েছেন, সন্তানের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা বিসর্জন দিতে বাধ্য হয়েছেন।
অভিযোগে বলা হয়, নিয়োগের নামে গড়ে ওঠা এই অপরাধী সিন্ডিকেট বাংলাদেশি শ্রমিকদের জোরপূর্বক শ্রমে ঠেলে দিচ্ছে। মালয়েশিয়ায় গিয়ে অনেক শ্রমিক বেকার অবস্থায় পড়ে যাচ্ছেন, প্রতিশ্রুত চাকরি না পেয়ে চরম দুঃখ-কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। অনেকে চলাফেরার স্বাধীনতা হারাচ্ছেন, নিম্নমানের আবাসন ও স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছেন, আবার কেউ কেউ ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে ঝুঁকি নিয়ে নিয়োগকর্তা পরিবর্তনের চেষ্টা করছেন।
বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, গত ১০ বছরে বারবার অনিয়ম ও শোষণের কারণে বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় অভিবাসন চার দফা বন্ধ হয়েছে। ২০২৪ সালে করিডর বিশৃঙ্খল হলে প্রায় ২০ হাজার শ্রমিক ঢাকায় আটকা পড়েন, যাদের সম্প্রতি মালয়েশিয়ার নির্মাণ খাতে চাকরির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বক্তারা সতর্ক করে বলেন, মালয়েশিয়ার সাম্প্রতিক অনুরোধে অবৈধ নিয়োগ ব্যবস্থার তদন্ত বন্ধ করা এবং কাউকে দায়ী না করার সিদ্ধান্ত শোষিত শ্রমিকদের ন্যায়বিচারের পথ রুদ্ধ করবে। এটি আইনের শাসনকে ক্ষুণ্ন করবে এবং লক্ষ লক্ষ শ্রমিককে আবারও আধুনিক দাসত্বের ঝুঁকিতে ফেলবে।
তাদের দাবি, বিদ্যমান সমঝোতা স্মারক সংস্কার করে অভিবাসীদের অধিকার সুরক্ষা, দুর্নীতি ও সিন্ডিকেট নির্মূল এবং স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে হবে। জাতিসংঘ, কূটনীতিক এবং বৈশ্বিক সাপ্লাই চেইন সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোরও এ বিষয়ে কার্যকর ভূমিকা রাখা উচিত।
(ঢাকাটাইমস/১৩ আগস্ট/আরজেড)

মন্তব্য করুন