প্রথম বাংলাদেশি মাঙ্গা `কিনসা খিয়ং’ নবম বছরে

জাপানি কমিকস আর্টফর্ম মাঙ্গা কিশোর ও তরুণ প্রজন্মের কাছে বর্তমানে বিনোদনের অন্যতম জনপ্রিয় মাধ্যম। বাংলাদেশেও রয়েছে এর তুমুল জনপ্রিয়তা এবং নিজস্ব মাঙ্গা। দেশে মাঙ্গা কমিকস ইতিমধ্যে আট বছর পেরিয়ে নবম বছরে পা রেখেছে।
কিন্তু অনেকেরই অজানা দেশে মাঙ্গার শুরুটা কখন, কোনটিই বা প্রথম মাঙ্গা, আর প্রথম মাঙ্গা শিল্পী কারা।
এরই মধ্যে মাঙ্গার জনপ্রিয়তা নিরিখ করে মাঙ্গা নিয়ে হয়ে গেছে একপ্রস্ত কপিরাইট যুদ্ধ। তাতে জয়ী হয় বাংলাদেশি মাঙ্গা আর্টিস্ট শান্তনা শান্তুমা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা থেকে গ্র্যাজুয়েট এই দুই বোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার অনেক আগে থেকে মাঙ্গা শিল্পের চর্চা করে আসছেন।
তাদেরই তৈরি বাংলাদেশের প্রথম মাঙ্গা ‘কিনসা খিয়ং’ । পার্বত্য চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীকে ঘিরে রয়েছে এক হৃদয়বিদারক উপকথা। সেই মারমা উপকথাকে একখণ্ড একটি মাঙ্গাতে রূপান্তর করেন মাঙ্গা আর্টিস্ট শান্তনা শান্তুমা।
এটি ২০১৬ সালে প্রকাশিত হয় দেশের জনপ্রিয় কিশোর ম্যাগাজিন ‘কিশোর আলো’র অক্টোবর সংখ্যায়। মাঙ্গাটি ব্যাপক আলোচিত হয় তখন। বাংলাদেশে জাপান দূতাবাস থেকেও মাঙ্গাটি সেসময় বেশ প্রশংসিত হয়।
এরই ধারাবাহিকতায় প্রথম বাংলাদেশি মাঙ্গা আর্টিস্ট শান্তনা শান্তুমা বাংলাদেশের সংস্কৃতি নিয়ে বেশ কিছু মাঙ্গা তৈরি করে কমিকস শিল্পে বাংলাদেশি মাঙ্গা নামের একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেন।
শান্তনা শান্তুমা পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স প্রকাশিত ‘অগ্নিযোদ্ধা’ সিরিজের জন্যও বেশ পরিচিত। এ ছাড়া ২০১৮ সালে তারা ‘মাঙ্গা স্টেজ’ নামের কেবল মাঙ্গার জন্য দেশের প্রথম মাঙ্গা প্রকাশনী প্রতিষ্ঠা করেন।
পাশাপাশি তারা দেশ ও দেশের বাইরে আরো কিছু মাঙ্গা ও কমিকস প্রকাশনীতে সক্রিয়ভাবে কাজ করছেন। ‘লকারের চিঠি’, ‘টানাপোড়েন’, ‘বাশাআপ’, ‘প্রতীক’, ‘শিকার’, ‘বহুরূপী’, ‘অগাস্টবাবুর ডায়েরী’ তাদের উল্লেখযোগ্য বাংলাদেশি মাঙ্গা।
মাঙ্গা নিয়ে লড়াই
সম্প্রতি প্রথম বাংলাদেশি মাঙ্গা দাবি নিয়ে উত্থাপিত হয় একটি কপিরাইট কেস, যার ফলে ‘কিনসা খিয়ং’ আবার নতুন করে আলোচনায় আসে।
২০২৩ সালে ‘ফোরনেটশার সোর্স’ মাঙ্গা ম্যাগাজিন নিজেদের প্রকাশিত মাঙ্গাকে দেশের প্রথম মাঙ্গা বলে প্রচার করছিল। ব্যাপারটি শান্তনা শান্তুমা জানতে পেরে তারা সোর্স মাঙ্গাকে এ নিয়ে প্রতিবাদ জানায়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে উভয় পক্ষের মধ্যে সমঝোতা চুক্তি সই হয়।
চুক্তি খেলাপ করে সোর্স ২০২৪ সালে আবার ওই ‘মিথ্যা প্রচারণা’ শুরু করে। শান্তনা শান্তুমা এবার বাংলাদেশ কপিরাইট অফিসের কাছে অভিযোগ দেন। ‘কিনসা খিয়ং’সহ তাদের বেশ কিছু মাঙ্গা প্রমাণস্বরূপ কপিরাইট অফিসে পেশ করেন।
২০২৫ সালের ২০ জানুয়ারি উভয়পক্ষের উপস্থিতিতে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। দীর্ঘসময় বিচার-বিবেচনা আর প্রমাণ যাচাই করে গত ৩০ এপ্রিল বাংলাদেশ কপিরাইট অফিস শান্তনা শান্তুমার পক্ষে রায় দেন এবং শান্তনা শান্তুমা বাংলাদেশের প্রথম মাঙ্গা আর্টিস্ট হিসেবে আইনগতভাবে স্বীকৃতি পান। পাশাপাশি কিনসা খিয়ং প্রথম বাংলাদেশি মাঙ্গা হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃত হয়।
জাপানের বাইরে মাঙ্গা নিয়ে কপিরাইট লড়াই একটি বিরল ঘটনা। আর সেটি ঘটে গেল বাংলাদেশে। এ ঘটনাটি বাংলাদেশি শিল্পীদের জন্য তাদের মেধাস্বত্ব সংরক্ষণের পথে হতে পারে একটি উজ্জ্বল উদাহরণ।
কপিরাইট রায়ে জয় এবং ‘কিনসা খিয়ং’-এর নবম বছর উপলক্ষে বাংলাদেশি মাঙ্গার প্রণেতা শান্তনা শান্তুমা বেশ কিছু আয়োজনের পরিকল্পনা করছেন। এই আয়োজন ‘কিনসা খিয়ং’-এর পুরোনো পাঠকদের যেমন আনন্দিত করবে, তেমনি নতুন মাঙ্গা-ভক্তদের জন্য হবে দারুণ চমক। এমনটাই বলছিলেন শান্তনা শান্তুমা।
(ঢাকাটাইমস/১২আগস্ট/মোআ)

মন্তব্য করুন