উন্নত চিকিৎসার অভাবে মারা গেলেন জুলাই যোদ্ধা হৃদয়

বাউফল (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ০৫ এপ্রিল ২০২৫, ১৬:০৬
অ- অ+

উন্নত চিকিৎসার অভাবে মারা গেলেন জুলাই যোদ্ধা মো. আশিকুর রহমান হৃদয় (১৭)। হৃদয় পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার সদর ইউনিয়নের পশ্চিম যৌতা গ্রামের আনসার হাওলাদারের ছেলে।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ঢাকা যাত্রাবাড়ি এলাকায় পুলিশের গুলিতে গুরুতর আহত হয় মো. আশিকুর রহমান হৃদয়।

শুক্রবার বিকাল ৩টার দিকে বাউফল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থা তার মৃত্যু হয়।

শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে উপজেলার জৌতা অলিপুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা জামায়াতের আমির মো. ইসাহাক মিয়া, ইসলামি শাসনতন্ত্র আন্দোলনের সভাপতি মো. নজরুল ইসলাম সিকদার, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ও জুলাই শহীদ স্মৃতী ফাউন্ডেশনের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য মুজাহিদুল ইসলাম শাহিন প্রমুখ।

এ সময় তারা হৃদয়ের হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শান্তি দাবি করেন। জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য মুজাহিদুল ইসলাম হৃদয়ের পরিবারকে ৩০ লাখ টাকা আর্থিক অনুদান পাওয়ার ব্যাপারে সর্বাত্মক সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন।

স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাবা অটোরিকশা চালক, ভাইয়েরা শ্রমিকের কাজ করেন। তাদের পরিবারে ওই রকম কোনো যোগ্য লোক না থাকায় সরকারিভাবে সাহায্যের জন্য আবেদন করতে পারেননি।

হৃদয় ঢাকাতে শ্রমিকের কাজ করতেন। জুলাই বিপ্লবে ঢাকার রাজপথে আন্দোলনে অংশ নিলে ১৮ জুলাই যাত্রাবাড়ি এলাকায় পুলিশের গুলিতে গুরুতর আহত হয়। তার মাথায় তিনটি গুলিবিদ্ধ হন। তৎকালিন সময় স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের ভয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে চিকিৎসা নেন। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা দেওয়া হয়। চিকিৎসকরা তার মাথা থেকে ২টি গুলি বের করতে পারলেও আশঙ্কাজনক হওয়ায় একটি গুলি বের করতে পারেনি। এতে পুরোপুরি সুস্থ হতে পারেনি হৃদয়। বিভিন্ন সময় অস্থির হয়ে পড়তো। প্রচন্ড জ্বর উঠত।

গত বুধবার হৃদয় অসুস্থ হয়ে পড়লে শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করানো হয়। এদিন বিকাল ৩টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

হৃদয়ের বাবা আনসার হাওলাদার বলেন, ‘ছেলের উন্নত চিকিৎসা করাতে পারিনি। নিজের আয়ের একমাত্র সম্বল রিকশা ও একটি গরু বিক্রির টাকা দিয়ে যতটুকু পেরেছি ততটুকু চেষ্টা করেছি। মাথার তিনটা গুলির দুইটা বের করেছেন ঢাকা মেডিকেলের চিকিৎসকরা। আরেকটা গুলি বের করা সম্ভব হয়নি। বিদেশ চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হলে আমার ছেলে বেঁচে যেত।’

নিহত হৃদয়ের বড় ভাই মো. সোহাগ ইসলাম আনিস বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ ছিল হৃদয়। ওর মাথার ভেতরে একটা গুলি ছিল। ওটা বের করতে পারেনি চিকিৎসকরা। এতে ওর প্রচুর ব্যথা করতো। জ্বর উঠতো। কেউ আমার ভাইর উন্নত চিকিৎসার জন্য এগিয়ে আসেনি। উন্নত চিকিৎসার অভাবেই আমার ভাই মারা গেছে।’

এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আ. রউফ বলেন, দুপুর ১২টার দিকে হাসপাতালে নিয়ে আসলে আশঙ্কাজনক হওয়ায় বরিশাল শের-ই বাংলা মেডেকিল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলি। পরিবার যথা সময়ে বরিশাল নিয়ে যেতে পারেনি। এখানেই বিকাল ৩টার দিকে তার মৃত্যু হয়।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আমিনুল ইসলাম বলেন, আহতদের তালিকায় তার নাম রয়েছে। তবে আর্থিক সহায়তার জন্য কোনো আবেদন করেননি। যেহেতু এখন সে মারা গেছে সরকারিভাবে ওই পরিবার যাতে সর্বোচ্চ সহায়তা পান সে ব্যাপারে সর্বাত্মক চেষ্টা করা হবে।

(ঢাকা টাইমস/০৫এপ্রিল/এসএ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
গাবতলি টার্মিনালে আন্তঃজেলা বাস যাতায়াতে আলাদা রাস্তা নির্মাণ করবে ডিএনসিসি
পোপকে শ্রদ্ধা জানাতে ভ্যাটিকানের সেন্ট পিটার্স বাসিলিকায় প্রধান উপদেষ্টা
শ্রীপুরে ইজারাদার সঙ্গে হকারদের ধাওয়া পাল্টা-দেশীয় অস্ত্রের মহড়া, আহত ২০
সৃষ্টিশীলতার মহড়া দিল মুক্তিসরণি সাহিত্য সংঘ
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা