আলাপন
আয়নাঘরে ঈদ এবং ভীতিকর দিনগুলো

[গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দুই দফা গুমের শিকার হন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) হাসিনুর রহমান। প্রথমবার ২০১১ সালে, দ্বিতীয়বার ২০১৮ সালে। শেষবার তিনি দেড় বছরের বেশি সময় আয়নাঘরে বন্দি ছিলেন। সেনাবাহিনী, র্যাব ও বিজিবিতে দায়িত্ব পালন করা হাসিনুর রহমান সাহসিকতার জন্য বীরপ্রতীক, বিপিএম ও বাংলাদেশ রাইফেল— তিনটি রাষ্ট্রীয় খেতাব পান।
ঢাকাটাইমসের সঙ্গে একান্ত আলাপকালে আয়নাঘরে বন্দিজীবনের ভীতিকর দিনগুলো, সেখানে কীভাবে বুঝলেন ঈদের দিনের কথা, সেসব বলেছেন হাসিনুর রহমান। তার আলাপের সময় সঙ্গে ছিলেন সিনিয়র রিপোর্টার সিরাজুম সালেকীন ]
১
২০১৮ সালে কোরবানির পশু কেনার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। মেজো মেয়েকে নিয়ে ঢাকার একটি হাটে যাই। তবে গরু কেনা হয়নি। হাট থেকে ফিরে ৮ আগস্ট গুমের শিকার হই। দুই দফা আমি প্রায় ১৬ মাস আয়নাঘরে ছিলাম। এ সময়ে একাধিক ঈদ এসেছে মুসলমানদের জীবনে। কিন্তু সেই ঈদ আমি দেখিনি। আয়নাঘরে তো দিন-রাত বোঝা যেত না। তবে আয়নাঘরে দেওয়া খাবার দেখে বুঝতাম দিনটি ঈদ কিংবা বিশেষ দিন।
আমি জানি সেনাবাহিনীতে বিশেষ দিনগুলোতে বড় খানা হয়। সেদিন ভালো খাবারের আয়োজন হয়। আমি গুম হওয়ার পরপরই কোরবানির ঈদ ছিল। যেদিন খাবারের মান ভালো ছিল, বুঝেছি আজ হয়তো ঈদের দিন। খাবার তো খাওয়া হয়নি, কান্নার মধ্য দিয়ে ঈদ উদযাপিত হয়েছে। এর বাইরে কিছুই না।
সারা দিন মনে হতো বাচ্চারা কী খাচ্ছে, তারা কেমন ঈদ করছে! বেঁচে আছে কি না তাও জানি না। ওরাও ঠিক আমার কথাই নিশ্চয় ভাবছিল! আমি বেঁচে আছি নাকি নেই। এই যে কষ্ট, একে কীভাবে ব্যাখ্যা করব!
এভাবে আয়নাঘরে বন্দি অবস্থায় আরও দুটি ঈদ চলে যায়। সবগুলোই একই রকম কেটেছে। খাবারের ধরন ও মান দেখে বুঝেছি আজ ঈদ হয়তোবা। ২৬ মার্চ কিংবা ১৬ ডিসেম্বরের খানা কোনটা, বুঝতাম। কোনো একটা ভালো খাবার পেলেই বাচ্চাদের কথা মনে পড়ত।
এমনিতেই সারাক্ষণ মৃত্যুর ভয়। আয়নাঘরের লোহার দরজাগুলো যখন খুলতো, ভয়ে বন্দি মানুষগুলো কাঁপত। এরপর না জানি কী হয়! কার ভাগ্যে কী নেমে আসে! কাকে বের নিয়ে যায়! কাউকে বের করে নেওয়া মানে বীভৎস নির্যাতন কিংবা তার জীবনের যবনিকাপাত।
২.
আমি কেন গুমের টার্গেট
প্রথমবার আমি গুম হই সেনাবাহিনী থেকে। আমাকে নিয়ে যাওয়া হয় অজানা জায়গায়। পরিবার, আত্মীয়স্বজন কেউ জানে না কোথায় আমি। সেবার আমাকে ৪৩ দিন গুম করে রাখা হয়। খালি ফ্লোরে আমার জায়গা, হাতে হ্যান্ডকাপ লাগানো, চোখ বাঁধা ছিল এ সময়। পরে আমাকে কোর্ট মার্শাল করে জেলে পাঠায়। জেলে পাঠানোর প্রধান কারণ আমি র্যাবে ছিলাম।
২০০৯ সালে র্যাবে থাকতে দেখেছি ওই নির্বাচন (নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন) ছিল সেটআপ করা। ২০০৮ সালে আমাকে বলা হয়েছিল আওয়ামী লীগের সুবিধা দিতে হবে। সেটাতে আমি রাজি হইনি। প্রতিবেশী ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ আমার সাথে কাজ করার জন্য বহুবার চেষ্টা করে। কিন্তু তারা পারেনি। এরপরই ওরা টার্গেট করেÑ আমাকে ধরলে ওদের সমস্যাটা সহজ হয়ে যাবে।
ক্রসফায়ার না করায় রোষানল
২০০৮ সালে ‘র’ থেকে আমাকে বলা হয় এখন থেকে আমি যেন আওয়ামী লীগের অনুকূলে কাজ করি। আমি রাজি হইনি। এরপরই আমাকে টার্গেট করা হয়। ওই বছরের শেষ দিকে রাউজানের আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী (তখনও এমপি হননি) একটি অপ্রীতিকর আবদার নিয়ে আসেন আমার কাছে। ক্রসফায়ার করতে হবে একজন ইউপি চেয়ারম্যানকে। তার নাম জাফর। আমি তাকে গ্রেপ্তার করি, কিন্তু ফজলে করিমের দাবি তাকে ক্রসফায়ার দিতে হবে। জিজ্ঞাসাবাদে চেয়ারম্যান জাফর বলেছিলেন- ‘স্যার, আমি জানি ফজলে করিম আমাকে ধরিয়েছেন। কারণ, আমার কাছের এক আত্মীয়কে গুলি করে হত্যা করতে বলেছেন তিনি, যা আমি পালন করছি না। তাই ফজলে করিম আমাকে র্যাব দিয়ে ধরিয়েছেন। আমি তার লাঠিয়াল। ফজলে করিম আমাকে কম করে এক ডজন একে-৪৭ এবং একটি এলএমজি দিয়েছেন।’ তখন আমি চেয়ারম্যানকে কারাগারে দিই এবং অস্ত্রগুলো উদ্ধারের চেষ্টা করি। এটা কোনোভাবে জেনে যান ফজলে করিম। এরপরেই দলীয় প্রভাবে আমাকে র্যাব থেকে বদলি করে দেওয়া হয়।
আমি র্যাব থেকে বদলি হয়ে ময়মনসিংহে নিজ বাহিনীতে চলে যাই। এরপর বিডিআরে হত্যাযজ্ঞ হয়। তখন এই ঘটনা নিয়ে বেশ সরব ছিলাম আমি। এটাতে ভারত জড়িত, আওয়ামী লীগ পুরোপুরি প্লানে জড়িত। তার চেয়ে হৃদয়বিদারক হলো সেনাবাহিনীকে তার দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করতে দেওয়া হয়নি। এরপর র্যাবের যেটা করার কথা ছিল, তারাও পারেনি। এটা ছিল খুব দুঃখজনক। আমরা ৫৭ জন সেনা অফিসার হারিয়েছি। এ ঘটনায় তখন অনেক অফিসার ক্ষিপ্ত হন।
এরই মধ্যে খালেদা জিয়াকে ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হলো। একটা রক্তক্ষরণ (বিডিআর হত্যাযজ্ঞ) শুকায় নাই। এর মধ্যে অনেক সেনা অফিসারের চাকরি নেই।
কারাগারে যত নাটক
আমাকে কারাগারে পাঠানোর পরও তারা শান্তি পায়নি। সেখানে কনডেম সেলে রাখা হয়। ওখানে শীর্ষ সন্ত্রাসী আরমান, সোহেল ছিল। আমি যখন র্যাবে ছিলাম তখন তারা ধরা পড়েছিল। ষড়যন্ত্রকারীরা মনে করেছিল, আমাকে সন্ত্রাসী দিয়ে নির্যাতন করবে। কিন্তু কারাগারে উল্টো সন্ত্রাসীদের সঙ্গে আমার ভালো সম্পর্ক হয়ে যায়। সন্ত্রাসী আরমান কারাগারে আমাকে জানায়- ‘জজমিয়া ঘটনা আসলে নাটক না, সত্য ঘটনা। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে জজ মিয়াও বোমা ছুড়েছিল। তানভীর ইসলাম জয়, মামুন, বকুল ছাড়াও মুফতি হান্নান বোমা ফুটিয়েছিল।
মামলার প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির এসপি রুহুল আমিন কারাগারে আমাকে বলেছিল, ‘আরমানকে বন্ধু বানিয়ে জজ মিয়ার ঘটনায় জিজ্ঞাসা করুন অনেক কিছু জানতে পারবেন।’ তখনই জানতে পারি জজ মিয়ার বিষয়টি। সন্ত্রাসীদের সঙ্গে বন্ধুত্ব দেখে তৎকালীন সেনা কর্মকর্তা শেখ মামুন খালেদ (সাবেক ডিজিএফআই প্রধান) ও তারেক সিদ্দিকী (শেখ হাসিনার নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা) কারাগারে আমাকে জঙ্গি সেলে পাঠায়।
আমি র্যাবে থাকতে জেএমবির বিরুদ্ধে অনেক অভিযানে নেতৃত্ব দিয়েছি। শায়খ আব্দুর রহমানের ছেলে নাবিল জঙ্গিবিরোধী অভিযানে আমার হাতে গুলিবিদ্ধ হয়েছিল। এই মেসেজটা কারাগারে কোনোভাবে পৌঁছে দেওয়া হয় যে, ‘লে. কর্নেল হাসিনুর রহমান তোমাকে গুলি করেছিল।’ নাবিল প্রকাশ্যে আমাকে হুমকি দেয়, ‘আপনাকে আমি হত্যা করব।’ তবে নাবিলের নেতা যারা ছিলেন যেমন- ইঞ্জিনিয়ার সালাউদ্দিন, মোহাম্মদ তাদের সঙ্গে আমার ভালো সম্পর্ক ছিল। কখনো তাদের সঙ্গে আমি খারাপ ব্যবহার করিনি। এই নাবিলকে তার নেতারা হুঁশিয়ার করে দেয় আমার গায়ে যেন হাত দেওয়া না হয়। বরং আমার সেবায় একজন লোক নিয়োগ দেওয়া হয়।
তৎকালীন সেনাপ্রধান ইকবাল করিম ভূঁইয়া কারাগারে আমার ডিভিশন সুবিধা দিলেও শেখ মামুন খালেদ ও তারেক সিদ্দিকী তাতে বাধা দেয়। সন্ত্রাসী-জঙ্গি দিয়ে যখন আমাকে হত্যা করা গেল না তখন কাশিমপুর কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয় আমাকে। পরে নির্বাচন হয়ে গেলে ইকবাল করিম ভূঁইয়া আমাকে বের করে নিয়ে আসেন। বাসায় চলে আসি। চুপচাপ থাকতাম।
প্রথমবার কারাগার থেকে বেরিয়ে ফেসবুকে খুব অ্যাক্টিভ হলাম। আমরা যারা অ্যাক্টিভ ছিলাম তাদের প্রায় সবাইকে গুম করা হয়। কূটনীতিক মারুফ জামান, চৌধুরী ইকবাল হোসেন, আমি এবং আনিস নামে আরও একজনকে গুম করা হয়েছিল। আমার মেয়েকে এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার জন্য ক্যান্টনমেন্ট স্কুলে আবেদন করি। কিন্তু তাকে ভর্তি করতে দেওয়া হয়নি। মিরপুর ১৩ নম্বরে চাকমাদের একটি স্কুল থেকে মেয়ে এসএসসি পরীক্ষা দেয়।
আমার ব্যাংকে কিছু টাকা ছিল, লোন ছিল, শেয়ার ব্যবসা ছিল। সেই শেয়ার বিক্রি করলে লাভই হতো, কিন্তু সেই শেয়ারও বিক্রি করতে দেওয়া হয়নি। এগুলো সব সেনা আইনের বাইরে। আমাকে কোর্ট মার্শাল করেছে, কোনো ডিফেন্ডিং অফিসার দেয়নি। কোনো সাক্ষী আমার বিরুদ্ধে বলেনি।
দ্বিতীয়বার আমাকে যেভাবে গুম করে
২০১৮ সালের ৮ আগস্ট রাতে বন্ধুর বাসা থেকে আমার মিরপুর ডিওএইচএস এলাকার বাসার নিচে এসে দেখি অনেক লোক। রাতে এত লোক এখানে থাকার কথা নয়। আমার কাছে পিস্তল ছিল। এ সময় সবাইকে আত্মসমর্পণ করাই। অনেকে পালিয়েও যায়। হঠাৎ পেছন থেকে একজন আমাকে লাথি মারে। আমি কয়েক সেকেন্ডের জন্য অজ্ঞান হয়ে যাই। ওই সময় হাত থেকে পিস্তলটা পড়ে যায়। তারা আমাকে গাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায়, আর ঘটনাস্থলে পিস্তলটা পড়ে থাকে।
আমাকে তুলে নিয়ে বেদম মারধর করা হয়। এরপর একটি অন্ধকার সেলে ঢোকানো হয়। গাড়ি চলার দূরত্ব দেখে অনুমান করি এটা কচুক্ষেত অথবা পোস্ট অফিসের আশপাশ হবে। সেখানে এক বছর ছয় মাস ১৪ দিন ছিলাম।
ভীতিকর আয়নাঘর
যেখানে আমাকে নেওয়া হয়েছিল সেখানে ২০ জনের বেশি লোক ছিল। প্রতি রুমে একজন করে বন্দি। প্রতিটি রুম ২৪ ঘণ্টা আলো-বাতাসহীন। সব সময় বাতি জ্বলে। অত্যধিক মশা। তবে তিন বেলা খাবার দেওয়া হতো। ডাক্তারও ছিল সেখানে।
কোনো কোনো রাতে চিৎকার-চেঁচামেচি, কান্নাকাটির আওয়াজে ভয়-আতঙ্কে ঘুম হতো না। বীভৎস এক পরিস্থিতি। সেলের লোহার দরজাগুলো যখন খুলতো তখন প্রতিটি মানুষ ভয়ে কাঁপতে থাকত। এই বুঝি তাকে নিয়ে গেল...।
আমি গুম থাকা অবস্থায় হাঙ্গার স্ট্রাইক (অনশন) করি। তাদের কাছে জানতে চাই কেন আমাকে আনা হলো। কিন্তু কোনো কারণ বলতে পারে না। আমার দেশ অনলাইন নামে একটি পত্রিকায় নিউজ হয়েছিল ‘কসাই আজিজ সেনাপ্রধান হচ্ছে’। এটা আমি লাইক এবং শেয়ার দিয়েছিলাম বলে অভিযোগ। আসলে এসব ভুয়া।
পালাতে আক্রমণের প্রস্তুতি ও ব্রিগেডিয়ার আযমীর দেখা
আমাদের যেখানে বন্দি রাখা হয়েছিল সেখানে দুজন করে পাহারায় থাকত। কারও আক্রমণ থেকে নিজে বাঁচার জন্য কিংবা কাউকে আক্রমণ করার মতো নানা ধরনের ইকুইপমেন্ট (সরঞ্জাম) ছিল। প্রায় দিন বিদ্যুৎ চলে গেলে এক মিনিটের মতো লাগত জেনারেটর চালু হতে। আমি ফ্লোরের ময়লা তুলে সেলের সিসিটিভি ক্যামেরাতে লাগিয়ে দিতাম। একসময় ক্যামেরা বাতিল হবার মতো অবস্থা হয়েছিল। তখন খাটের একটি পার্ট খুলে পেরেকসহ বের করে রাখি, যাতে পাহারায় থাকা একজনকে মারতে পারি। আবার বাথরুমে কেচি ব্যবহার করার জন্য দেওয়া হতো। ভাবতাম একজনকে মেরে দিই। এই কেচি স্যান্ডেলের মধ্যে ঢুকিয়ে রাখতাম। তাদের (পাহারাদার) মারার চিন্তা আসত কারণ এমনি জানতাম এখানে বন্দি থেকে মরতে হবে। তাই চেষ্টা করতাম বের হতে পারি কি না।
হঠাৎ একদিন বাথরুম থেকে বের হবার সময় আযমী স্যারকে (সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহিল আমান আযমী) দেখে ফেলি। স্যার আমাকে চিনতে না পারলেও আমি উনাকে চিনে ফেলি। তখন শীতকাল। আযমী স্যার থাকতেন পুরাতন কমপ্লেক্সে, আর আমি থাকতাম নতুন কমপ্লেক্সে। এখানকার সব বাথরুমে হাই-কমোড। তবে এখানে থাকা খুব কষ্ট, কারণ হাইট (উচ্চতা) খুব কম এবং গরম। আযমী স্যারকে বাথরুমের জন্য নতুন কমপ্লেক্সে আনা হতো। কারণ সেখানকার বাথরুমে সব লো-কমোড। আমাকে বাথরুম থেকে বের করার সময় আযমী স্যারকে ঢোকানো হচ্ছিলো। তখন থেকেই মাথায় ঘুরতে থাকে স্যার কোথায় থাকেন!
ওই যে ক্যামেরা নষ্ট করেছিলাম, সেই ক্যামেরা ঠিক করানোর জন্য লোক আনে। আমাকেও রুম থেকে সরানো হয়। তবে ওখানকার যে দশটা রুম সব রুমে মানুষ আছে। তখন সাময়িক আমাকে পুরাতন রুমের একটি কক্ষে নেওয়া হয়। বোঝা যাচ্ছিল ওই রুমেও লোক ছিল। বন্দি অবস্থায় বাথরুমে যাওয়ার সময় আমি তিনজনকে চিনেছি। তাদের মধ্যে রয়েছেন- সাবেক রাষ্ট্রদূত মারুফ জামান, মুক্তিযোদ্ধা ইকবাল চৌধুরী আর আযমী স্যার।
ব্রিগেডিয়ার আযমীকে মুক্ত করার চেষ্টা
এভাবেই সময় কেটে যায়। একসময় আমি আয়নাঘর থেকে বেরিয়ে আসি। বের হওয়ার পর বাসাতেই অবস্থান করি। আমার ইউনিট অফিসার মেজর (অব.) দেলোয়ারের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাকে বলি, ‘ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আযমী স্যারকে দেখেছি, তাকে বের করা দরকার; তুমি আমাকে দুজন লোক দাও।’ এর মধ্যে ডিজিএফআই জেনে গেছে আমি আযমী স্যারকে বের করার জন্য কাজ করছি। এরপর আমার বিরুদ্ধে ১০-১২টি আইসিটি আইনে মামলা হয়। এর আগে জঙ্গি মামলা দিয়ে রেখেছিল আমার বিরুদ্ধে।
ছাত্র আন্দোলনে ১৬ জুলাই আবু সাঈদ মারা যাওয়ার পরে আমি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ঘোরাফেরা করতাম। ৫ আগস্ট পর্যন্ত আমরা মাঠে ছিলাম। ওই দিন বিকাল পাঁচটার দিকে ফেসবুকে লাইভ করি। আযমী স্যারকে ছাড়ার শর্ত দিয়ে ডিজিএফআইকে সময় দিই তিন ঘণ্টা। তখন মনে করলাম আমার কোটায় হবে না, ব্রিগেডিয়ার হাসান নাসির স্যারের কাছে যাই। তাকে দিয়ে ছয়টার সময় লাইভ করাই দুই ঘণ্টা সময় দিয়ে। তারপর রাত আটটার দিকে আমরা কচুক্ষেতে বসে পড়ি। আমি জানতাম আইনজীবী ব্যারিস্টার আরমান আছে, তবে ইউপিডিএফের সংগঠক মাইকেল চাকমা আছে কি না জানতাম না।
রাজনীতি নিয়ে ভাবনা
আমি রাজনীতিবিদ না। আমি সামরিক ব্যক্তি, সততার ওপরে থাকি, সত্য কথা বলতে বিশ্বাস করি। আমি বিএনপিতে যোগ দিয়েছি, কারণ বংশপরিচয়ে আমরা বিএনপি। আমার চাচা ছিলেন এমপি। আমি সেনাবাহিনীতে ঢুকেছিলাম শহীদ জিয়ার দেশপ্রেম ও ভালোবাসা দেখে। বীর প্রতীক, বিপিএম ও রাইফেল তিনটি প্রতীকই বেগম খালেদা জিয়া আমাকে পরিয়ে দিয়েছেন। বিএনপিতে যোগ দিলেও আমি কখনো সক্রিয় রাজনীতি কিংবা নির্বাচন করায় বিশ্বাসী না। এসব না করেও দেশকে ভালোবাসা যায়, দেশের জন্য কাজ করা যায়, দেশকে সাপোর্ট করা যায়।
[ঢাকাটাইমস ঈদ আনন্দ সংখ্যা ২০২৫-এ মুদ্রিত]
(ঢাকাটাইমস/৪এপ্রিল/মোআ)

মন্তব্য করুন