প্রাকৃতিক উপায়ে প্রোবায়োটিক খাবার পাবেন যেভাবে

স্বাস্থ্য ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ০৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:৫৪
অ- অ+

ভাল থাকার জন্য সবার আগে পেটের স্বাস্থ্য ভাল রাখা জরুরি। তার কারণ, শরীরের যাবতীয় ক্রিয়া নিয়ন্ত্রিত হয় পেট থেকেই। শরীরকে চালানোর জন্য যে হৃৎপিণ্ড, মস্তিষ্ক এবং স্নায়ুতন্ত্র কাজ করে চলেছে, শরীর পুষ্টি না পেলে তার কোনওটিই নিজের কাজ যথাযথ ভাবে করতে পারবে না। আর শরীরকে পুষ্টি জোগানোর গুরুদায়িত্ব পেটের নানা প্রত্যঙ্গের। পাকস্থলী থেকে শুরু করে লিভার, অগ্ন্যাশয়, অন্ত্র— সেই দায়িত্ব পালন করে। তাই এদের স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখা দরকারি। পেটের স্বাস্থ্য ভাল রাখার জন্য প্রোবায়োটিক খাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা। কারণ প্রোবায়োটিক হল অন্ত্রে থাকা উপকারী ব্যাকেটেরিয়া।

প্রোবায়োটিক স্বাস্থ্য বান্ধব ব্যাকটেরিয়া হিসাবে পরিচিত ফারমেন্টেড খাবার এবং দুধে উপস্থিত জীবিত অণুজীব বোঝায়। এটি পর্যাপ্ত পরিমাণে খেলে, স্বাস্থ্যের বিভিন্ন অনুকূল বৈশিষ্ট্য দেখা যায়, ত্বকের উপকার থেকে শুরু করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। চিকিৎসকরা বিভিন্ন সমস্যায় প্রোবায়োটিক ওষুধ খেতে দেন যা বিভিন্ন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। তবে ওষুধ ছাড়াও কিছু খাবারে রয়েছে প্রাকৃতিক প্রোবায়োটিক। জেনে নিন প্রাকৃতিক উপায়ে প্রোবায়োটিক খাবার পাবেন যেভাবে-

দই

দই একটি জনপ্রিয় ফারমেন্টেড দুগ্ধজাত পণ্য এবং বাহক খাদ্য হিসাবে প্রোবায়োটিকগুলোর অন্যতম সেরা উৎস। প্রোবায়োটিক যুক্ত দই ক্ষতিকর জীবাণুর অতিরিক্ত বংশ বৃদ্ধি প্রতিরোধ করে। শরীরের ফ্যাট কমানোর মাধ্যমে ওজন কমাতে সাহায্য করে। আমাদের শরীরের প্রায় সমস্ত প্রয়োজনীয় অ্যামাইনো অ্যাসিড সরবরাহ করা ছাড়াও, এটি হজম করার সময় যথেষ্ট পরিমাণে সাহায্যকারী ব্যাকটেরিয়া প্রদান করে। এটি ল্যাকটোজ সহনশীলতা, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ডিসঅর্ডার প্রতিরোধ করার ক্ষেত্রে কার্যকর বলে মনে করা হয়।

চিজ

অন্যান্য গাঁজনযুক্ত দুগ্ধজাত পণ্যের তুলনায় চিজ বা পনির মানুষের অন্ত্রে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র জীবাণু সরবরাহে কার্যকর বাহক হিসেবে কাজ করতে পারে। পনিরের ঘন গঠন, বিশেষ করে তাজা পনিরের, সেটি উপকারী অণুজীবদের প্রেরণে সহায়তা করার জন্য একটি প্রোবায়োটিক খাদ্যে পরিণত করতে পারে। এই স্বাস্থ্যকর পনির ম্যাকারনি রেসিপিটি অবশ্যই আপনার বাচ্চাদের মুখে হাসি ফুটিয়ে তুলবে।

আচার

সংরক্ষণের ক্ষেত্রে বাঁধাকপি, শসা, মূলা, জলপাই, গাজরের মতো বিভিন্ন সবজিগুলি প্রাচীনকাল থেকেই ল্যাক্টিক ফার্মেন্টেশনের শিকার হয়ে আসছে। সবজির প্রোবায়োটিক গাঁজন স্বাস্থ্যকর ও নিরাপদ বলে মনে করা হয় এবং এটি খাদ্যে ভালো ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ করানোর একটি মাধ্যম হিসেবে কাজ করতে পারে। সবজি সংরক্ষণের এই রূপটি তাদের প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ খাবারেও পরিণত করে যা নিরামিষভোজীরা বা যারা ল্যাকটোজ অসহিষ্ণু তারা বেছে নিতে পারে।

কেফির

মজিয়ে নেওয়া দুধ। যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে এবং হজমের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে সাহায্য করে। রাশিয়ায় এই পানীয় খাওয়ার ইতিহাস অন্তত ২০০০ বছরের পুরনো। তবে ইতিহাস বলছে ব্রোঞ্জ যুগের সময়েও কেফির খাওয়ার প্রচলন ছিল। পশ্চিম এশিয়া এবং ইউরোপের কিছু দেশে কয়েকশো বছর ধরে কেফির খাওয়ার রীতি আছে।

কিমচি

কিমচি সালাদের কথা শুনে ফেলেছেন অনেকেই। কোরিয়ান এই নিরামিষ খাবার হয়তো চেখেও দেখেছেন কেউ কেউ। চেনা নানা সব্জিকে ল্যাকটোব্যাসিলাস ব্যাক্টেরিয়ায় জারিয়ে নিলে তা থেকে তৈরি হয় কিমচি। যা এক ধরনের স্যালাড। কিমচি হজমে সহায়ক তো বটেই, পাশপাশি পেটের জন্য উপকারী নতুন ধরনের মাইক্রোবিয়োম তৈরি করতেও সাহায্য করে। রোগ প্রতিরোধের ক্ষেত্রেও উপকারী কিমচি।

সাওয়রক্রউট

বাঁধাকপিকে খুব সরু করে কেটে তাকে ল্যাকটিক অ্যাসিড ব্যাক্টেরিয়া এবং চিনি দিয়ে মজিয়ে তৈরি করা হয় সাওয়রক্রউট। স্বাদ কিছুটা টক। রোমে এই ধরনের বাঁধাকপি খাওয়ার চল ছিল বলে জানা যায় ইতিহাসে। তবে জার্মানি-সহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে, এমনকি, রাশিয়ার নানা দেশেও এই খাবার খাওয়ার চল রয়েছে।

মিসো

সয়াবিনকে বেটে তাকে জারিয়ে নেওয়ার পরে তৈরি হয় মিসো। এটি জাপানি খাবার। সয়াবিনকে জারিয়ে নেওয়ার জন্য তারা ব্যবহার করে অ্যাসপারগিলাস ওরিজ়ে এবং বিভিন্ন ধরনের ব্যাক্টেরিয়া।

কম্বুচা

এক ধরনের চা। তবে সেই চা বানানো হয় চা পাতা এবং চিনিকে একসঙ্গে একটি পাত্রে রেখে মজিয়ে। সেই প্রক্রিয়ায় উপকারী ব্যাক্টিরেয়া এবং ইস্ট ব্যবহার করা হয়।

টেম্পে

দেখতে অনেকটা কেকের মতো। তৈরি করা হয় রান্নাকরা সয়াবিনকে মজিয়ে। ইন্দোনেশিয়ার এই খাবার বানানোর জন্য ব্যবহার করা হয় এক বিশষ ধরনের ছত্রাক। জারণ প্রক্রিয়ায় সয়াবিনের প্রোটিনের পরিমাণ যেমন বাড়ে, তেমনই বাড়ে ফাইবারের পরিমাণ এবং নানা রকমের ভিটামিনও। পৃথিবীর সর্বত্রই প্যাকেটজাত টেম্পে পাওয়া যায়। টেম্পে হজম করাও সহজ বলে জানাচ্ছেন পুষ্টিবিদেরা।

সল কাঢ়ি

নারিকেলের পানিকে স্থানীয় কোকুম ফলের খোসা দিয়ে মজিয়ে বানানো হয়। হালকা বেগনিটে গোলাপি রঙের ওই পানীয় দেখতে যেমন ভাল, গুণেও উপকারী।

(ঢাকাটাইমস/৭ এপ্রিল/আরজেড)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিলের পর বিমানের কার্গো সক্ষমতা বৃদ্ধি বাংলাদেশের
পূর্ব রাজাবাজারে রাস্তা প্রশস্তকরণের লক্ষ্যে এলাকাবাসীর সঙ্গে রাজউক চেয়ারম্যানের মতবিনিময়
চীনের বিশেষ হাসপাতাল ঠাকুরগাঁওয়ে স্থাপনের দাবিতে ঢাকায় মানববন্ধন
তিন দিনের ব্যবধানে ফের বাড়ল সোনার দাম  
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা