মহেশখালীতে হাঁটুর ওপর কাপড় তুলে পথ পাড়ি

বলরাম দাশ অনুপম, মহেশখালী থেকে ফিরে
 | প্রকাশিত : ২৫ মার্চ ২০১৭, ১১:৩০

পঞ্চাশের কাছাকাছি এক বয়স্কা নারী হাঁটুর ওপর কাপড় তুলে পানি ও কাদা মাড়িয়ে পার হচ্ছেন। আরেক মহিলা একহাতে শিশুসন্তানকে কোলে নিয়ে অন্য হাতে শাড়ির প্রান্ত হাঁটুতে আটকে রাখার চেষ্টা করছেন, আর কাদা থেকে পা তুলে হাটার কসরত করছেন। এটি কোনো প্রতিযোগিতার দৃশ্য নয়। কক্সবাজার-মহেশখালী নৌ-রুটে নদী পারাপারের সময় আপনাকেও হাঁটু সমান কাদায় হাবুডুবু খেতে হবে। তবেই গন্তব্যে পৌঁছতে পারবেন।

এমন নয় যে এই পথটি অপ্রচলিত। কিংবা হঠাৎ নেমে আসা দুর্ভোগ নয় এটি। অনেক দিন ধরে মানুষ লাজ-লজ্জা খুইয়ে এই পথ পাড়ি দিতে বাধ্য হচ্ছে। জীবনের তাগিদে প্রতিদিনই মহেশখালী জেটি ঘাট দিয়ে কেউ হয়তো দ্বীপ উপজেলায় যাচ্ছেন, আবার কেউ জেলা শহরে যাচ্ছেন। আবার আপনজনদের নিয়ে প্রকৃতিক সৌর্ন্দয উপভোগ করতে আসা পর্যটকের সংখ্যাও কম নয়। এই দুর্ভোগ সম্পর্কে আগে থেকে না-জানা পর্যটকরা বাধ্য হয়ে কাদাপানিতে একাকার হন।

কক্সবাজার-মহেশখালী নৌরুটে বর্তমানে চরম দুর্ভোগের নাম মহেশখালী জেটিঘাট। এই রুটে যাতায়াতে দুর্ভোগ শুধু নয়, হয়রানিরও শিকার হতে হচ্ছে সাধারণ যাত্রীদের।

সম্প্রতি মহেশখালী জেটিঘাটের এই করুণ দৃশ্যের বেশ কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। জেটিঘাটের এই করুণ অবস্থা আর যাত্রীদের দুর্ভোগের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা ও অবহেলাকেই দায়ী করছেন ভুক্তভোগীরা।

এ বিষয়ে মহেশখালী পৌরসভার সাবেক ভারপ্রাপ্ত মেয়র পূর্ণচন্দ্র দে বলেন, ‘সাংসদ ও পৌর মেয়র এই জেটি দিয়ে যাওয়া-আসা করেন। তারা কি এই দুর্দশার চিত্র দেখেন না? পৌর মেয়র ভোটের সময় এই জেটিতে জাহাজ চালনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তিনি সেই প্রতিশ্রুতিও ভুলে গেছেন।’

মহেশখালী জেটি ও লোকজনের দুর্দশা নিয়ে স্থানীয় এক সাংবাদিক ফেসবুকে বড় নেতাদের বিবেকের কাছে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে লিখেছেন, ‘এই ছবি দিয়ে বুঝতে পারবেন আপনারা জনকল্যাণে কত কাজ করেছেন।’

মহেশখালী পৌরসভার আরেক সাবেক মেয়র সরওয়ার আজম লিখেছেন, ‘সালাম দিয়ে শুভবুদ্ধির আশায় আর কত ভোগাবে স্বার্থান্বেষী মহল।’

প্রবাসী মো. ছবর মজা করে লেখেন, ‘কাদা-মাটিমাখা কাপড়চোপড় ও জুতা যত্ন করে রেখে দাও। একদিন কাজে আসবে।’

এমডি নুরুল আলম হেলালী ফেইসবুকে লেখেন, ‘দৃশ্যগুলো কোনো নামকরা পরিচালকের নামকরা ছবির দৃশ্য নয়, নয় কোনো প্রতিথযশা শিল্পীর শিল্পকর্ম৷ ওরা কোনো তীর্থযাত্রী কিংবা ভ্রমণপিপাসু মানুষও নয়৷ ওরা আপনার আমার কারো না কারো মা, বাবা, ভাই, বোন৷ নিত্যদিনের প্রয়োজনে ওরা মহেশখালী থেকে কক্সবাজার যাতায়াত করে৷ প্রতিদিন ওদের শাড়ি, লুঙ্গি, প্যান্ট, পায়জামা কিংবা বুক পরিমাণ কাদা মাড়িয়ে নৌকায় উঠতে হয়।’

এইচ এম ইব্রাহিম লিখেছেন, ‘মহেশখালী ঘাট মানুষের সীমাহীন দুঃখ-দুর্দশায় পরিণত হয়েছে৷ নিত্য প্রয়োজনে মহেশখালীর মানুষকে কক্সবাজার যাওয়া-আসা করতে হয়৷ আমার প্রশ্ন- ১. মহেশখালী ফেরিঘাটের অভিভাবক কে? ২. মহেশখালীবাসীর কষ্ট লাগবে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কোনো ভূমিকা আছে কি? ৩. জনগণ যে ট্যাক্স দেয়, সেগুলো কোথায় যায়? ৪. ফেরিঘাট মেরামত/খাল পুনঃ খননে রাজনীতিবিদদের ভূমিকা আছে কি?

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মহেশখালী পৌরসভার মেয়র মকছুদ মিয়া বলেন, এই জেটি ঘাটের উন্নয়নে পরিকল্পনা রয়েছে। তবে এই মুহূর্তে তা করা সম্ভব হচ্ছে না।

মহেশখালী জেটির করুণ দুর্দশার বিষয় স্বীকার করে ওই আসনের সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক বলেন, মহেশখালী জেটি সংলগ্ন এলাকায় জেগে ওঠা চর ড্রেজিংয়ের সিদ্ধান্ত হয়েছে। শিগগিরই এর কাজ শুরু করা হবে।

(ঢাকাটাইমস/২৫মার্চ/জেবি/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :