সুনামগঞ্জ হাওরে ফসল বাঁচাতে প্রাণপণ চেষ্টায় কৃষকরা

আমিনুল ইসলাম, তাহিরপুর থেকে
 | প্রকাশিত : ০২ এপ্রিল ২০১৭, ১৯:৫৫

সুনামগঞ্জ পাহাড়ি ঢলের পানিতে হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ ভেঙে তলিয়ে গেছে আটটি হাওরের পাঁচ –হাজার হেক্টর বোরো জমির কাঁচা ধান। অরক্ষিত শনি ও মাটিয়ান হাওরে স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করছে হাওরপাড়ের কৃষক। ডুবে যাওয়া হাওরগুলো হচ্ছে মহালিয়া, বলদা, গনিয়াকুড়ি, সন্যাসী, মিথ্যারডুবা, লোবা, গুলাঘাট ও গুরমা বর্ধিতাংশের ছনার হাওর।

শনিবার রাত ও রবিবার প্রবল পানির জোয়ারে হাওরগুলোর ফসল রক্ষা বাঁধ ভেঙে যায়। রবিবার সকাল থেকে তাহিরপুরে হাট-বাজার বন্ধ রেখে হাওরপারের কৃষক দোকানদার সবাই সকাল থেকেই শনি ও মাটিয়ান হাওরে বোরো ফসল রক্ষায় বেড়ি বাঁধগুলোতে দিনব্যাপী স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করে যাচ্ছেন। বিভিন্ন গ্রামের মসজিদ থেকে মাইকিং করে ঘোষণা আসছে হাওরের অবস্থান ভালো নয়, দোকান পাঠ বন্ধ রেখে দ্রুত বাঁধের কাজে চলে যান। আর এ থেকেই একে একে শনি হাওর ও মাটিয়ান হাওরপাড়ের বিভিন্ন গ্রাম থেকে লোকজন কোদাল, টুকরিসহ চলে যান হাওরের বিভিন্ন বাঁধে। শনি হাওর ও মাটিয়ান হাওরের বিভিন্ন বাঁধ সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, শনির হাওরের নান্টুখালি, ঝালখালি, লালুর গোয়ালা, বগিয়ানা আপর বাঁধ, সাহেবনগর বাঁধ, আহাম্মককালি বাঁধ, শ্রীপুর বেড়ি বাঁধ, টাকটুকিয়া, বড়দল মেশিন বাড়ি আপর বাঁধ, আলমখালি, উমেদপুর বাঁধ, ছিরারগায়ের বাঁধ, বোয়ালমারা ক্লোজার বাঁধ, নান্দিয়া বাঁধসহ বিভিন্ন বাঁধে তিন সহস্রাধিক লোকজন কাজ করছেন।

যে বাঁধগুলোতে ঠিকাদার ও পিআইসিদের যথাসময়ে কাজ করার কথা আজ সে বাঁধগুলোতে স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করে বোরো ফসল রক্ষার প্রাণপণ চেষ্টা করছেন হাওরপাড়ের কৃষক, শ্রমিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লোকজন।

গত ৫/৬ দিনের টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় এ হাওরগুলোর ফসল রক্ষা বাঁধ ভেঙে হাওরগুলোর কাঁচা ধান পানিতে তলিয়ে যায়। বিগত বছর অকাল বন্যায় ফসল হারিয়ে চলতি বছর আবারো আগাম বন্যায় ফসল হারিয়ে কৃষক আজ সর্বশান্ত।

রবিবার অরক্ষিত দুই হাওর শনি ও মাটিয়ান এবং ডুবে যাওয়া আটটি হাওর সরজমিন ঘুরে দেখেন তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার, তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কমারুজ্জামান কামরুল, উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সস্পাদক অমল কান্তি কর, উপজেলা যুবলীগ আহ্বায়ক হাফিজ উদ্দিন, উপজেলা কৃষকলীগ আহ্বায়ক অনুপম রায়সহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতারা।

উপজেলার মধ্য তাহিরপুর গ্রামের কৃষক রঞ্জু মুখার্জি ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘সুনামগঞ্জের পাউবোর একটি সিন্ডিকেট হাওরের কাজ ভাগাভাগি করে নিয়ে গেছে, তারা বাঁধে কোনো কাজ করেনি। আমরা এখন স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধে কাজ করছি।’

বলদা হাওরপারের কৃষক সাবেক ইউপি সদস্য দ্বীন ইসলাম ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘শনিবার দিনব্যাপী লোকজন নিয়ে বলদা হাওরের ধরুন্দ বাঁধটিতে কাজ করেছি। কিন্তু বাঁধটি শেষ পর্যন্ত রক্ষা করা গেল না। রবিবার ভোরে বাঁধটি ভেঙে যায়।’

উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান খসরুল আলম ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘নজরখালি, গনিয়া কুড়ি, সন্যাসীসহ কয়েকটি হাওরে হাওর রক্ষা বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকছে।’

তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘মানুষ বিভিন্ন বাঁধে স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করছে, ঠিকাদারদের মোবাইলে ফোন দিয়েও পাওয়া যাচ্ছে না।’

তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘হাওরপাড়ের কৃষকরা স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধে কাজ করছে, আমরা তাদের সামান্য বাঁশ, বস্তা দিয়ে সাহায্য করছি, ঠিকাদার ও পিআইসি যথাসময়ে বাঁধে কাজ করলে হাওরের আজ এ অবস্থা হতো না।’

(ঢাকাটাইমস/০২এপ্রিল/প্রতিনিধি/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :