দারিদ্র্য দমাতে পারেনি আল আমিনকে

সৈয়দ মাহ্ফুজ রহমান, পিরোজপুর থেকে
| আপডেট : ০৫ মে ২০১৭, ১১:৩০ | প্রকাশিত : ০৫ মে ২০১৭, ১০:৩৬

অভাবের সংসারে প্রায়ই ঘরে থাকতো না খাবার। অর্ধহারে-অনাহারেই অধিকাংশ সময় কাটাতে হতো। অনেক সময় না খেয়েই যেতে হয় স্কুলে। কিন্তু এতো কষ্টের পরও হারতে রাজি নন স্কুলছাত্র আলআমিন। প্রবল ইচ্ছাশক্তির জোরে দারিদ্রতাকে জয় করে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-ফাইভ পেয়ে পরিবারের সবার মুখে হাসি ফুটিয়েছে পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলার বেতকা গ্রামের ইমাম হোসেনের ছেলে আল আমিন।

তার পরিবার জানায়, তারা উপজেলার দক্ষিণ বন্দর হাসপাতাল রোডের একটি ঝুপড়ি ঘরে ভাড়া থাকেন। দরিদ্র পিতার পক্ষে মাঝে মধ্যে চাল আনার পয়সা জোগার সম্ভব হতো না। দিনমজুর পিতার পক্ষে সন্তানদের দুই বেলা খাবারের ব্যবস্থা করতে হিমশিম খেতো।

ইমাম হোসেনের তিন সন্তানই লেখাপড়া করে। তার একার পক্ষে সংসার চালাতে কষ্ট হওয়ায় স্বামীকে সহায়তা করতে তার স্ত্রী শাহেনুর বেগম মাঝে মাঝে অন্যের বাড়িতে কাজ করেন।

আল-আমিনের বড় বোন সুমি পিরোজপুর সরকারি সোহরাওয়ার্দী কলেজে অনার্স তৃতীয় বর্ষের (বোটানি) ছাত্রী। সেজো ভাই শামিম হোসেন কাউখালী মহাবিদ্যালয়ের (বাণিজ্য বিভাগ) দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। এমন দারিদ্র পরিবারের সন্তান হওয়ায় আল আমিনকে অনেক কষ্টে লেখাপড়া করতে হয়।

কিন্তু শত বাঁধা পেরিয়ে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় কাউখালী সরকারি কে জি ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ ফাইভ পায় আল আমিন। ছেলের ভাল ফলে বাবা-মা আনন্দিত হলেও তার ভবিষ্যৎ লেখাপড়া নিয়ে তাদের কপালে দেখা দিয়েছে চিন্তার ভাঁজও।

বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জানান, আল আমিন অনেক মেধাবী ছাত্র। লেখাপড়ার তার এমনই আগ্রহ যে, একদিনের জন্যও সে স্কুল ফাঁকি দেয়নি। এজন্য তার ফলাফল ভালো হয়েছে। উপজেলার লোকজন তাকে এখন গোল্ডেনবয় হিসেবে চেনে।

আল আমিন সাংবাদিকদের বলেন, বাবা-মা স্কুলের সব খরচ যোগাড় করতে পারে নাই। স্থানীয় শিক্ষানুরাগী খসরু চাচা (আ. লতিফ খসরু) ও পল্টন চাচা প্রাইমারি থেকে এ পর্যন্ত আমাকে নানাভাবে উৎসাহ, সাহায্য-সহযোগিতা করেছেন। আমি লেখাপড়া করে সংসারের অভাব দূর করতে চাই। ভবিষ্যতে মানবসেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখতে সে ডাক্তার হতে চাই।

আল আমিনের বাবা ইমাম হোসেন বলেন, ‘অভাব অনটনের মধ্যে তিন সন্তানের লেখাপড়া চালাতে খুবই হিমশিম খেতে হয়। ওদের কখনও ভাল খাবার ও নুতন কাপড় দিতে পারি নাই। এর কষ্টের পরও ভালো রেজাল্ট করায় আমার অনেক ভালো লাগছে।’

আল আমিন এর আগেও তার কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছে। ২০১১ সালে কাউখালী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ৫ম শ্রেণি সমাপনী পরীক্ষায় আল আমিন জিপিএ ফাইভ পেয়েছিল। সেই থেকেই আল আমিন স্থানীয় মানুষের কাছে গোল্ডেন বয় হিসেবে পরিচিত।

কে জি ইউনিয়ন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে জিপিএ ফাইভ পেয়ে সপ্তম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয় সে। পরবর্তীতে ৭ম, ৮ম, ৯ম ও ১০ম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করে। এছাড়া খেলাধুলা, উপস্থিত বক্তৃতায় অংশ নিয়ে উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে সাফল্য অর্জন করেছেন।

শিক্ষানুরাগী আব্দুল লতিফ খসরু বলেন, কোন অভাবই দমাতে পারে নাই আল আমিনের লেখাপড়া (শিক্ষা)। একটু সহযোগিতা পেলে ও আরও অনেকদূর যেতে পারবে। এমন মেধাবী আল আমিনদের সহযোগিতার ব্যক্তি, সংস্থা, প্রশাসনের এগিয়ে আসতে হবে।

ঢাকাটাইমস/৫মে/প্রতিনিধি/এমআর

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :