রথযাত্রায় থাকবে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা

হিন্দু ধর্মালম্বীদের উৎসব শ্রী শ্রী জগন্নাথ দেবের রথযাত্রায় সর্বোচ্চ ও নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা দেবে বাংলাদেশ পুলিশ। আগামী ২৫ জুন থেকে হতে ৩ জুলাই পর্যন্ত নয় দিনব্যাপী রথযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে।

সোমবার দুপুরে পুলিশ সদর দপ্তরের সম্মেলন কক্ষে রথযাত্রা উপলক্ষে আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনাসংক্রান্ত সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে নেয়া হয় এই সিদ্ধান্ত। সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক।

সভাপতির বক্তব্যে আইজিপি বলেন, বাংলাদেশ ধর্মীয় সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এ দেশে বিভিন্ন ধর্মের মানুষের মধ্যে বিরাজমান ধর্মীয় সম্প্রীতি হাজার বছরের ঐতিহ্য।

আইজিপি বাংলাদেশ পুলিশসহ অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার মধ্যে সমন্বয়ের মাধ্যমে রথযাত্রা উৎসবকে শান্তিপূর্ণ ও নির্বিঘ্ন করার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান।

আইজিপি বলেন, প্রতিটি মন্দিরের নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগের মাধ্যমে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা বলয় গড়ে তুলতে হবে। প্রত্যেক নাগরিককে নিরাপত্তা সচেতন হতে হবে। নিজেদের মধ্যে নিরাপত্তা বোধ জাগিয়ে তুলতে হবে।

সভায় সঠিক সময়ে রথযাত্রা শুরু করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। রথযাত্রায় আয়োজকদের সাথে সমন্বয় সাধন, যাত্রাপথে বিভিন্ন মোড়, জংশন, ফুটওভার ব্রিজে পর্যাপ্ত ফোর্স মোতায়েন, রথযাত্রা মিছিলের সামনে পেছনে এবং উভয় পাশে, যাত্রা পথে রুফটপে পর্যাপ্ত ফোর্স মোতায়েন, সিসিটিভি স্থাপন, হকার এবং সন্দেহভাজন লোকদেরকে প্রবেশ না করতে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

এছাড়া, রথযাত্রায় ব্যাগ, পুটলা প্রবেশ করতে না দেয়া, বিক্ষিপ্তভাবে অলি-গলি থেকে আগত লোকদের যোগদান করতে না দেয়া, ইউনিফর্ম পুলিশ ও সাদা পোশাকে ফোর্স মোতায়েন করা, কমিউনিটি পুলিশ নিয়োগ, রথযাত্রার প্রবেশস্থল ও আশেপাশে তল্লাশি চৌকি স্থাপন, মোটরসাইকেল, সন্দেহভাজন গাড়ি তল্লাশি করা, মহিলাদের মহিলা স্বেচ্ছাসেবক, মহিলা পুলিশ দ্বারা তল্লাশি করা হবে। এছাড়া, বিদেশি নাগরিক কর্তৃক রথযাত্রায় অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে বিশেষ নিরাপত্তাব্যবস্থা করা হবে। সভায় রথযাত্রা পথে মাইক ব্যবহার না করা এবং রথ থেকে ফল, খাদ্য ছুঁড়ে না ফেলতে অনুরোধ জানানো হয়।

সভায় উপস্থিত হিন্দু নেতারা রথযাত্রা উপলক্ষে পুলিশের গৃহীত নিরাপত্তাব্যবস্থায় সন্তোষ প্রকাশ করেন। তারা বলেন, হিন্দুদের সব ধর্মীয় উৎসব পালনকালে পুলিশ যে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করে তা সত্যিই প্রশংসনীয়। তারা এজন্য আইজিপি এবং পুলিশ প্রশাসনের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।

২৫ শে জুন দুপুর দুইটার সময়ে প্রধান রথযাত্রা রাজধানীর স্বামীবাগ ইসকন মন্দির থেকে শুরু হয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে ঢাকেশ্বরী মন্দিরে শেষ হবে। উল্টো রথযাত্রা আগামী ৩ জুলাই বেলা আড়াইটায় ঢাকেশ্বরী মন্দির থেকে শুরু হয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে স্বামীবাগ ইসকন মন্দিরে এসে শেষ হবে। এছাড়া, ধামরাই, গাজীপুর, সিলেট, নওগাঁ, চট্টগ্রাম, দিনাজপুর, খুলনা, রাজশাহী, বরিশাল, মৌলভীবাজার, মানিকগঞ্জ ও ময়মনসিংহসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে রথযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ, ডিএমপি কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া, ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি মোহা. শফিকুল ইসলাম, ডিআইজি (অপারেশনস্) ব্যরিস্টার মাহবুবুর রহমান, ডিআইজি (প্রশাসন) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন, ডিআইজি, সিটি এসবি মল্লিক ফখরুল ইসলাম, কাউন্টার টেরিরোজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ইউনিটের অতিরিক্ত কমিশনার মো. মনিরুল ইসলাম, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মানিকগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপারসহ অন্যান্য পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তা এবং ইসকন বাংলাদেশের সভাপতি সত্যরঞ্জন বাড়ৈ, সাধারণ সম্পাদক চারুচন্দ্র দাস ব্রহ্মচারী, কোষাধ্যক্ষ জ্যোতিশ্বর গৌরদাস ব্রহ্মচারী, বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি জয়ন্ত সেন, মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সাধারণ সম্পাদক শ্যামল কুমার রায়, সাধারণ সম্পাদক স্বামীবাগ আশ্রম ইসকন মাধব মুরারী দাস, সভাপতি কালী মন্দির রবিন দাশ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

(ঢাকাটাইমস/১৯জুন/এএ/জেবি)