পাহাড়ি শিশু শিক্ষার্থীদের বাংলা শেখাতে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১০ আগস্ট ২০১৭, ১৮:৫১ | প্রকাশিত : ১০ আগস্ট ২০১৭, ১৮:০৩

খাগড়াছড়ির দুর্গম পাহাড়ের ৪৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২ হাজার ৯০৫ জন শিক্ষার্থীকে মানসম্মত বাংলা পড়ার ওপর দক্ষ, শুদ্ধভাবে উচ্চারণ, প্রাথমিক শিক্ষা থেকে ঝরে পড়া থেকে রোধ করতে অনগ্রসর পাহাড়ি জনগোষ্ঠী শিক্ষার্থীদের গড়ে তুলতে জাবারাং কল্যাণ সমিতি, সেফ দ্যা চিলড্রেন ও ইউএসএইড’র অর্থায়নে রিড প্রকল্পের আওতায় ‘এক’ নতুন শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করেছে।

জানা গেছে, ১ম থেকে ৩য় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বাংলায় পঠন দক্ষতা বৃদ্ধি করার লক্ষ্য নিয়ে ২০১৫ সাল থেকে খাগড়াছড়ি জেলার ৪৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রিড প্রকল্পের কার্যক্রম চলছে। ইউএসএইড-এর অর্থায়নে এবং সেভ দ্য চিলড্রেন ইন্টারন্যাশনালের কারিগরি সহযোগিতায় জাবারাং কল্যাণ সমিতি পরিচালিত এ প্রকল্প সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ে ১ম থেকে ৩য় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বাংলায় পঠন দক্ষতা বৃদ্ধি করছে যা মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সহায়তা করবে। প্রকৃতপক্ষে অধিকাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বিশেষ করে দুর্গম অঞ্চলে ২য় শ্রেণি পাস করার পরও বাংলা বর্ণমালা চিনে না, ‘কার’ চিহ্নের ব্যবহার বুঝতে পারে না, অধিকাংশ বর্ণের ধ্বনি ঠিকভাবে বুঝে না। এর প্রভাব হিসেবে ৩য় শ্রেণি এমন কি ৪র্থ ও ৫ম শ্রেণিতে গিয়েও বাংলা সাবলীলভাবে শিক্ষার্থীরা পড়তে পারে না। বাংলা ঠিক মতো পড়তে না পারার ফলে শিক্ষার্থীরা বাংলায় লিখিত বিষয় যেমন প্রাথমিক গণিত, প্রাথমিক বিজ্ঞান, ধর্ম এবং বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়ের বিষয়বস্তু ঠিকমতো আয়ত্ব করতে কষ্ট হয়। ফলে অধিকাংশ শিক্ষার্থী প্রান্তিক যোগ্যতা অর্জন করতে ব্যর্থ হয়।

এ অবস্থার মধ্যেও যদি কোন শিক্ষার্থী প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করতে পারে তাদের মধ্যে অধিকাংশ কিন্তু শ্রেণি উপযোগী যোগ্যতা অর্জন না করায় উচ্চবিদ্যালয়ে গিয়ে যথাযথ শিক্ষা আয়ত্ব করতে পারে না।

যার ফলে নতুন প্রজন্মকে মানবসম্পদে রূপান্তর করার প্রক্রিয়া এবং শিক্ষার উদ্দেশ্য ব্যহত হয়। তাই এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য এ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে বাংলা পাঠদান সংক্রান্ত বিষয়ে (ধ্বনি সচেতনতা, বর্ণজ্ঞান, শব্দ ভান্ডার, সাবলীলতা এবং বোধগম্যতা বিষয়কে বিবেচনায় নিয়ে) শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ, প্রয়োজনীয় শিক্ষা উপকরণ প্রদান, প্রতি ৩ মাস অন্তর অন্তর শিক্ষার্থীদের পঠন দক্ষতা যাচাই করে দুর্বল শিক্ষার্থীদের পঠন দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য বিশেষ সহায়তা প্রদান, কমিউনিটি রিডিং ক্যাম্পের মাধ্যমে স্কুল আওয়ারের পর শিক্ষার্থীদের বিশেষ ব্যবস্থায় পড়ার কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফাতেমা মেহের ইয়াছমিন জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অনুমোদন নিয়ে জাবারাং বাংলা পড়ার উপর যে কাজ শুরু করেছে তা খুবই ভালো। তিনি এর মধ্য দিয়ে প্রাথমিক শিক্ষায় ঝরে পড়াসহ শিক্ষা ক্ষেত্রে পরিবর্তন বয়ে আনবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

জাবারাং-এর নির্বাহী পরিচালক মথুরা বিকাশ ত্রিপুরা জানান, বাংলা পড়া ও উচ্চারণের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা শৈশবকাল থেকে এ শিক্ষা পাওয়া মাধ্যমিক স্তরে গিয়ে বাংলাসহ অন্যান্য বিষয়ে ঠেকবে না।

প্রকল্প সমন্বয়কারী কর্মকর্তা দয়ানন্দ ত্রিপুরা বলেন, পাহাড়ি এলাকার জনাগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের বাংলা ভাষায় ১ম, ২য় ও ৩য় শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের বাংলা পঠন, উচ্চারণ, লিখনকে শৈশবকাল থেকে দক্ষ করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে আমরা এ কার্যক্রম শুরু করি।

দুর্গম পাহাড়ে খাগড়াছড়ি শহর থেকে ১৯ কি.মি দূরে ভাই-বোন ছড়া ইউপির বড়পাড়া গ্রামের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, এখানে শিশুরা বাংলা পড়ার জন্য শিক্ষার্থীদের পাঠ্যবই বাংলা পড়া, ছাড়াও পঠন ও লেখাকে আনন্দময় করে তোলার লক্ষ্যে বিভিন্ন হাসি-রসের মজার মজার গল্প ও পড়ানো হচ্ছে।

(ঢাকাটাইমস/১০আগস্ট/প্রতিনিধি/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :