তথ্যপ্রমাণ বলে জিয়াই বঙ্গবন্ধুর মূল খুনি
মহান মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে যারা জড়িত ছিল তাদের নাটের গুরুদেরও আইনের আওতায় আনা হয়েছে। কিন্তু পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে নারকীয় ও জঘন্য বঙ্গবন্ধু হত্যায় শুধু কয়েকজন জুনিয়র সেনা কর্মকর্তা ঘটিয়েছে- এটা কি বিশ্বাসযোগ্য? ঘটনা ঘটানোর পর তারা বীরদর্পে ঘোষণা দিয়েছে, কোনো বিচারের মুখোমুখি হয়নি বরং পুরস্কারস্বরূপ বিদেশি দূতাবাসে পোস্টিং পেয়েছে। কে ছিল সেই মহাক্ষমতাধর ব্যক্তি, যিনি নাটের গুরু হয়ে নিখুঁত পরিকল্পকের ভূমিকায় ছিলেন?
আসেন বঙ্গবন্ধু হত্যার পূর্বাপর কিছু ঘটনা বিশ্লেষণ করে আসি। খন্দকার মোশতাকদের সংশ্লিষ্টতার ঘটনা আমরা সবাই জানি। কিন্তু তৎকালীন সেনাবাহিনীর উপপ্রধান জিয়াউর রহমান যে এই হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড এটা অনেকেই মানতে চায় না। আমি শুধু পুরোনো কিছু তথ্য একসাথে যুক্ত করে উপস্থাপন করছি।
জিয়াউর রহমান খুনি নাকি ভদ্রলোক- এরপর এই সিদ্ধান্ত নেবার দায়িত্ব আপনাদের ....
বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত দুই খুনি ফারুক এবং রশীদ ১৫ আগস্টের ঘটনার পর বিদেশি একটি মিডিয়ায় সাংবাদিক এন্থনি মাসকারেনহাস এর সাথে স্বাক্ষাৎকারে বলেছেন, একজন ৭৫ সালের মার্চ মাসে আরেকজন হত্যার দুইদিন আগে অর্থাৎ ১৩ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার বিষয়ে জিয়াউর রহমানের সাথে আলোচনা করেছেন। জিয়া ওদেরকে বলেছিলেন, তিনি সিনিয়র সেনা অফিসার হিসাবে এই কাজে অংশ নিতে পারবেন না, কিন্তু জিয়া তাদের বাধাও দেয়নি। বলেছেন, Go Ahead (এগিয়ে যাও)। ইউটিউবে এই স্বাক্ষাৎকার বিস্তারিতভাবে রয়েছে।
রাষ্ট্রপতিকে হত্যা করা হবে এই পরিকল্পনা শোনার পর দেশের উপ সেনাপ্রধান কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে উৎসাহিত করলেন- এটা কি প্রমাণ করে?
এর আগে সেনা অভ্যুত্থান করে ক্ষমতা দখলের প্রস্তাবও তাজউদ্দীন আহমেদকে জিয়াউর রহমান দিয়েছিলেন। ভারতের প্রখ্যাত সাংবাদিক সুখরঞ্জন দাসগুপ্তের ১৯৭৮ সালে প্রকাশিত ‘মিড নাইট মেসাকার ইন ঢাকা’ বইয়ে তা স্পষ্ট লেখা আছে। যা তাজউদ্দীন বলেছিলেন সুখরঞ্জন দাসকে। জিয়া যে শুধু খুনি না, ক্ষমতালোভীও ছিলেন এটাই এর প্রমাণ।
এইসবই বঙ্গবন্ধু হত্যার আগে জিয়াউর রহমান যা যা করেছিলেন এর মধ্যে প্রকাশিত কিছু ঘটনা। এখন চলুন দেখি বঙ্গবন্ধু হত্যার পরে তিনি কী কী করেছিলেন।
হত্যার পর ১৫ আগস্ট জিয়াকে যখন জানানো হলো তখন তিনি বাসায় সেভ করছিলেন। সংবাদ শুনার সাথে সাথে বললেন, ‘So What! Follow the Constitution’ (তাতে কি হয়েছে! সংবিধান অনুসরণ করো)। দুঃখ বা কষ্ট পাওয়ার কিংবা অবাক হবার কোনো প্রতিক্রিয়া তার মধ্যে ছিল না, এতো জঘন্য হত্যার পরও তিনি পুরোই স্বাভাবিক ছিলেন। অর্থাৎ তিনি বিষয়টি আগে থেকেই জানতেন।
খুনিদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া দূরে থাক উল্টো খুনিদের পুরস্কৃত করতে কী কী করেছেন আসুন ওই সব দেখে আসি।
বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত ১১ জন খুনিকে জেলখানায় নেয়ার পরিবর্তে দেশের বাইরের দূতাবাস গুলোতে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করেছেন জিয়া।
বঙ্গবন্ধু হত্যার কখনও বিচার করা যাবে না এই আইনও সংসদে পাস করিয়েছেন জিয়া।
দেশের বাইরে থাকায় ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যাকে আশ্রয় দেয়ার কারণে জার্মানে নিযুক্ত তৎকালীন রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন রাশিদ চৌধুরীকে ওএসডি করে রাখা হয়। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ রেহেনাকে যাতে মেয়াদউত্তীর্ণ পাসপোর্ট নবায়ন করে দেয়া না হয় সেই জন্য লন্ডন দূতাবাসকে অফিসিয়ালি নির্দেশ দেন। অপরদিকে শেখ হাসিনাকে পাসপোর্ট নবায়ন করে দেয়ার কারণে ভারতে নিযুক্ত তৎকালীন রাষ্ট্রদূতকে চাকরিচ্যুত করেন জিয়া ।
জাতির পিতার হত্যার তদন্তে যুক্তরাজ্যে গঠিত অনুসন্ধান কমিশনের সদস্যদের ১৯৮১ সালে বাংলাদেশে আসতে দেয়নি জিয়াউর রহমান।
এরশাদের সময় রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিএনপি যায়নি, কিন্তু আত্মস্বীকৃত অন্যতম খুনি ফারুককে ধানের শীষ প্রতীক ধার দিয়েছিল বিএনপি এরশাদের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য। দলীয় প্রতীক সাধারণত জোট ভুক্ত না হলে অন্যকে দেয়া হয় না।
১৯৯১ সালে ক্ষমতায় এসে সব খুনিকে পদোন্নতি দিয়েছিল খালেদা জিয়ার সরকার।
জন্মদিন না হওয়া সত্ত্বেও ১৯৯৩ সাল থেকে খালেদা জিয়া বঙ্গবন্ধুকে হত্যার দিন ১৫ আগস্ট জন্মদিনের উৎসব পালন শুরু করেন পাকিস্তানী গোয়েন্দাদের পরামর্শে। এমনকি ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে আরেক খুনি রশিদকে পাস করিয়ে সংসদ সদস্য বানিয়েছিলেন খালেদা জিয়া।
১৯৯৬ সালে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসার পর ইনডেমেনিটি বাতিল করে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার কাজ শুরু করে। বিচারের রায়ের দিন হরতাল ডেকেছিল বিএনপি।
উদাহরণ দিতে গেলে এইরকম ভুরি ভুরি উদাহরণ দেয়া যাবে। আমার মনে হয় জিয়াউর রহমান যে বঙ্গবন্ধুর খুনি এর জন্য আর কোনো উদাহরণ না দিলেও চলবে।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে শুধু ক্ষমতা দখলই জিয়াউর রহমানের মূল উদ্দেশ্য ছিল না। শুধু ক্ষমতা দখল উদ্দেশ্য হলে একটি পুরো পরিবারকে আত্মীয়স্বজনসহ হত্যা করত না জিয়া। হত্যার সময় বঙ্গবন্ধু পরিবারের সাথে সংশ্লিষ্ট প্রতিটি বাড়িতে গিয়ে স্বজনদের খুঁজে খুঁজে বের করে হত্যা করা হয়েছে।
অর্থাৎ পাকিস্তানী শাসক গোষ্ঠীর এজেন্ডাই জিয়া বাস্তবায়ন করেছেন। এরই ধারাবাহিকতায়ই বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে ১৯ বার হত্যা চেষ্টা চালানো হয়েছে। উদ্দেশ্য ৭১ সালে পরাজয়ের প্রতিশোধ নেয়া, দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব নষ্ট করে বাংলাদেশকে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করা। তাদের সেই হিংস্র অপচেষ্টা এখনো অব্যাহত রয়েছে।
লেখক: প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব