একরাম হত্যায় ৩৯ জনের ফাঁসি

আরিফ আজম, ফেনী থেকে
| আপডেট : ১৩ মার্চ ২০১৮, ২২:১০ | প্রকাশিত : ১৩ মার্চ ২০১৮, ১৫:৪২
২০১৪ সালের ২০ মে ফুলগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান একরামুল হককে গুলি করে পুড়িয়ে মারা হয়

বহুল আলোচিত ফেনীর ফুলগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি একরামুল হক একরাম হত্যা মামলায় ৩৯ জনের ফাঁসির আদেশ দিয়েছে ফেনীর একটি আদালত। রায়ে মামলার প্রধান আসামি বিএনপির নেতা মিনার চৌধুরীসহ ১৬ জনকে খালাস দেয়া হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে ফেনী জেলা ও দায়রা জজ আমিনুল হক এই রায় ঘোষণা করেন। খালাস দেয়া বিএনপি নেতা মিনার চৌধুরীসহ ৩৬ আসামির উপস্থিতিতে এই রায় ঘোষণা করা হয়। আসামিদের মধ্যে ১৬ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন এই মামলায়। মোট ৬২ কার্যদিবসে মামলার বিচার শেষ হয়েছে।

যাদের ফাঁসির আদেশ এসেছে তারা সবাই আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী। তাদের মধ্যে ১৭ জন ধরাছোঁয়ার বাইরে। এদের মধ্যে আট জন জামিন পাওয়ার পর আর আদালতে হাজির হননি।

২০১৪ সালের ২০ মে ফেনী সদরের একাডেমি এলাকার অধুনালুপ্ত বিলাসী সিনেমা হলের সামনে হত্যা করা হয় একরামুল হক একরামকে।

এ ঘটনায় একরামের ভাই রেজাউল হক জসিম বাদী হয়ে ফেনী মডেল থানায় ৫৬ জনকে আসামি করে মামলাটি করেন। গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ দীর্ঘ তদন্ত শেষে ৫৬ জনের বিরুদ্ধে ২০১৪ সালের ৩০ আগস্ট আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন।

আসামিদের মধ্যে ৪৫ জন গ্রেপ্তার হন। তাদের মধ্যে ১০ জন জামিন পাওয়ার পর পালিয়ে যান। বর্তমানে ৩৫ জন কারাগারে। আর বাকিদেরকে পুলিশ কখনও ধরতে পারেনি।

২০১৬ সালের ১৫ মার্চ অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে বিচার শুরু হয় আসামিদের। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি এই মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমান রাখেন বিচারক।

রায় ঘিরে আদালত এলাকায় কঠোর নিরাপত্তামূলত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। দুপুর থেকে আদালত প্রাঙ্গণে কাউকে ঢুকতে দেয়া হয়নি। তবে আদালতের সামনের সড়কে অন্যদিনের চেয়ে জনসমাগম ছিল বেশি। হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার স্বজন ও শুভাকাক্সক্ষী ছাড়াও উৎসুক জনসাধারণের উপস্থিতিও চোখে পড়ার মতো।

রায়কে ঘিরে সকাল ১০টা থেকে আদালত প্রাঙ্গণে ভিড় জমাতে থাকেন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় কর্মরত সাংবাদিকরা।

বিকাল ৩টা ১৫ মিনিটে একরাম হত্যা মামলার রায় পড়া শুরু করেন বিচারক। এর আগে বেলা তিনটার দিকে ৩৬ আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়।

রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের প্রতিক্রিয়া

বিচারকের আদেশে রাষ্ট্রপক্ষ সন্তোষ প্রকাশ করে বলেছে, এই রায়ের ফলে দুর্বৃত্তরা অপরাধ করার আগে একবার হলেও ভাববে। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী হাফেজ আহম্মদ বলেন, ‘ফেনীর ইতিহাসে প্রথম একসাথে ৩৯ জনের মৃত্যুদ-াদেশ দেয়া হয়েছে। এ রায় ঐতিহাসিক, নজিরবিহীন। ভবিষ্যতে এ ধরনের অপরাধ করতে কেউ সাহস করবে না বলে আদালত মনে করেছে। আমরা তথা রাষ্ট্রপক্ষ এ রায়ে সন্তুষ্ট।’

তবে আসামিপক্ষের আইনজীবী আহসান কবির বেঙ্গলের দাবি, তারা ন্যয়বিচার পাননি। তিনি বলেন, ‘এ রায়ে আমরা সংক্ষুব্ধ। রায় পুনর্বিবেচনার জন্য উচ্চ আদালতে আপিল করা হবে।’

জেলা ও দায়রা জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত প্রশাসনিক কর্মকর্তা মনির উদ্দিন বলেন, ‘এ ধরনের রায় ফেনীর ইতিহাসে প্রথম। একরাম হত্যা মামলায় দেড়শ পৃষ্ঠার রায় লেখা হয়েছে। ইতিপূর্বে জয়নাল হাজারীর অস্ত্র মামলায় ১০৮ পৃষ্টার রায় দেয়া হয়েছে।

যাদের মৃত্যুদণ্ড

জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির আদেল, ফুলগাজী উপজেলা যুগ্ম-সম্পাদক জাহিদ চৌধুরী, ফেনী পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর আবদুল্লাহিল মাহমুদ শিবলু, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক লায়লা জেসমিন বড় মনির ছেলে আবিদ, এমরান হোসেন রাসেল প্রকাশ, জিয়াউর রহমান বাপ্পি, আজমীর হোসেন রায়হান, শাহজালাল উদ্দিন শিপন, নুর উদ্দিন মিয়া, আবদুল কাইয়ুম, সাজেদুল ইসলাম পাটোয়ারি সিফাত, জাহিদুল হাসেম সৈকত, আবু বক্কর ছিদ্দিক, আরমান হোসেন কাউছার, চৌধুরী মোহাম্মদ নাফিজ উদ্দিন অনিক, জাহিদুল ইসলাম, ফেরদৌস মাহমুদ খান হিরা, মোহাম্মদ সজিব, ইসমাইল হোসেন ছুট্টু, পাংকু আরিফ ওরফে হুমায়ুন, জসিম উদ্দিন নয়ন, মামুন, মোহাম্মদ সোহান চৌধুরী, মানিক, কপিল উদ্দিন মাহমুদ, টিটু, নিজাম উদ্দিন আবু, রাহাত মোহাম্মদ এরফান, টিপু, আরিফ ওরফে নাতি আরিফ, রাশেদুল ইসলাম রাজু, রুবেল, বাবলু, সফিকুর রহমান মায়া, ফারুক, একরাম হোসেন আকরাম, মহিউদ্দিন আনিস।

যারা খালাস পেয়েছেন

বিএনপি নেতা মিনারে চৌধুরী, ফেনী পৌর যুবলীগের সাবেক যুগ্ম-আহবায়ক জিয়াউল আলম মিস্টার ছাড়াও কাজী শানান মাহমুদ, আলমগীর ওরফে আলাউদ্দিন, সাইদুল করিম পাপন, জাহিদ হোসেন ভূঞা, বেলায়েত হোসেন পাটোয়ারি, মো. মাসুদ, আবদুর রহমান রউপ, ইকবাল, শাখাওয়াত হোসেন, সফিকুল জামিল পিয়াস, কাদের, কালা মিয়া, ইউনুছ ভূঞা শামীম ও রিপন এই মামলায় বেকসুর খালাস পেয়েছেন।

যারা পলাতক

আসামিদের মধ্যে ইসমাইল হোসেন ছুট্টু, কপিল উদ্দিন মাহমুদ আবির, টিটু, রাহাত মো: এরফান আজাদ, বাবলু, শফিকুর রহমান ময়না, একরাম হোসেন আকরাম, মোসেলহ উদ্দিন আসিফ কখনও ধরা পড়েননি।

আর জামিন নিয়ে পালিয়ে গেছেন এমরান হোসেন রাসেল, জাহিদুল হাসেম সৈকত, চৌধুরী মো. নাফিস উদ্দিন অনিক, আবিদুল ইসলাম আবিদ, জিয়াউর রহমান বাপ্পি, নুরুল আবসার ওরফে জাহিদ চৌধুরী, আরমান হোসেন কাউসার ও জসিম উদ্দিন নয়ন।

জামিনে থাকা অপর আসামি মো. সোহেল ওরফে রুটি সোহেল র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছেন।

ঢাকাটাইমস/১৩মার্চ/প্রতিনিধি/ডব্লিউবি

সংবাদটি শেয়ার করুন

আদালত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

আদালত এর সর্বশেষ

আহসানউল্লাহ মাস্টার হত্যামামলা: আপিল শুনানি দ্রুত করতে আসামির আবেদন

পরিবেশ রক্ষায় ঢাকাসহ সারাদেশে গাছ কাটা বন্ধে হাইকোর্টে রিট

এ জে মোহাম্মদ আলীর সম্মানে আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগে বিচারকাজ বন্ধ ঘোষণা

সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী আর নেই

লভ্যাংশের টাকা আত্মসাৎ মামলা: ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি আজ

সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বিচার বিভাগ আরও শক্তিশালী হবে: প্রধান বিচারপতি

জি কে শামীমের জামিন ঘিরে আবারও প্রতারণা, এক সপ্তাহ নিষিদ্ধ আইনজীবী 

যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিবের বিরুদ্ধে মামলা

ধর্ষণ মামলায় মুশতাক-ফাওজিয়ার স্থায়ী জামিন

ওষুধের মূল্যবৃদ্ধি বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ হাইকোর্টের

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :